ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক টেস্ট ও ওয়ানডেতে ম্যাচসেরা

মুস্তাফিজের আরেকটি বিরল অর্জন

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৬ জুলাই ২০১৫

মুস্তাফিজের আরেকটি বিরল অর্জন

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ অভাবনীয়, অবিস্মরণীয় এবং অসম্ভব একটি ঘটনার জন্ম দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে যা আগে কখনও ঘটেনি সেটাই করে দেখালেন এই তরুণ পেসার। ওয়ানডে অভিষেকেই ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে খেলে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। ওই সিরিজে যে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তাতে মর্যাদার টেস্ট ক্রিকেটেও অভিষেকটা সময়ের অপেক্ষা ছিল মাত্র। অবশেষে সেটাও হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে। আর সেখানেও হলেন ম্যাচসেরা। ওয়ানডে এবং টেস্ট উভয় ফরমেটের অভিষেকে আজ পর্যন্ত কোন ক্রিকেটার ম্যাচসেরা হতে পারেননি। অতিকল্পিত হলেও সেই অবাস্তব ঘটনাকে সত্য করেছেন ১৯ বছর বয়সী তরুণ পেসার মুস্তাফিজ। তার এমন বিশ্বরেকর্ডের ম্যাচে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও টেস্ট ড্র করল টাইগাররা। যদিও বৃষ্টির দাপটে শেষ দুই দিন কোন খেলাই হয়নি। যেটুকু সময়ের খেলা হয়েছে তাতেই তিনি বিশ্বের এক নম্বর বোলার ডেল স্টেইন, সাত নম্বর ভারনন ফিল্যান্ডার ও নয় নম্বর মরনে মরকেলের মতো তিন ভয়ঙ্কর পেসারকে পেছনে ফেলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস ২৪৮ রানে গুটিয়ে দেয়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছিলেন মাত্র ৩৭ রানে ৪ উইকেট দখল করে। অভিষেক টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচ অবশ্য এর আগে ইতিহাসে ৩৯ জন হয়েছিলেন। মুস্তাফিজ ৪০তম বোলার হিসেবে সেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে এমন ঘটনার ক্ষেত্রে মুস্তাফিজ চতুর্থ ক্রিকেটার। আর এশিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে এটি ১৪তম ঘটনা। কিন্তু বিরল একটি ঘটনার জন্ম দিয়েছেন মুস্তাফিজ। আজ পর্যন্ত কোন ক্রিকেটার তার অভিষেক ওয়ানডে এবং অভিষেক টেস্টে ম্যাচসেরা হওয়ার গৌরব দেখাতে পারেননি। সেই গৌরবের একমাত্র কৃতিত্ব দেখালেন মুস্তাফিজ। তার নাম হয়ে গেছে ‘কাটার’ মুস্তাফিজ। তাকে বলা হয় ‘সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস’। কিন্তু ওয়ানডের মতো টেস্টে ‘কাটার’ তেমন কার্যকর হবে না নিজেই অনুধাবন করেছিলেন। সেজন্য সেটা খুব বেশি চেষ্টা করেননি এ টেস্টে। এ বিষয়ে অধিনায়ক মুশফিক বলেন, ‘মুস্তাফিজকে নিয়ে আশাবাদী। ওর যে প্রধান অস্ত্র কাটার বা রিভার্স সুইং সেগুলো টেস্টে ব্যাটসম্যানরা সহজে সামাল দেয়। ও নিজেও সেটা অনুধাবন করেছে। ও বুঝে গেছে যে টেস্টে উইকেট পেলে ধারাবাহিকভাবে ভাল বোলিং করতে হবে। চাপ তৈরি করতে হবে। আমি আশা করি এভাবে খেলতে থাকলে ও ওয়ানডের মতো টেস্টেও সাফল্য পাবে।’ অভিষেকে ৫ উইকেট শিকার করে তিনি হয়ে যান ম্যাচসেরা। তিন ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট শিকার করে অনন্য এক বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। চট্টগ্রামে দেশের ৭৮তম ক্রিকেটার হিসেবে এবং মাত্র পঞ্চম বাঁহাতি পেসার হিসেবে অভিষেক ঘটে মুস্তাফিজের। চলতি সিরিজের টি২০ ও ওয়ানডেতে তাকে দারুণ সতর্ক হয়ে মোকাবেলা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। টেস্টের প্রথম দিনে তাকে মোকাবেলা করাটা যেন বেশ সহজই হয়ে গিয়েছিল প্রোটিয়াদের জন্য। প্রথম তিন স্পেলে ১২ ওভার বোলিং করে চার মেডেনসহ ৩০ রান দিয়ে কোন উইকেট নিতে পারেননি। কিন্তু চতুর্থ স্পেলে বোলিং করতে এসেই ধরেছিলেন রুদ্রমূর্তি। টানা দুই বলে প্রোটিয়া অধিনায়ক হাশিম আমলা ও জেপি ডুমিনিকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। হ্যাটট্রিক করতে পারলে তিনি টেস্ট ইতিহাসে মরিস এ্যালম, পিটার পেথেরিক ও ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের কাতারে যোগ দিতে পারতেন। কিন্তু সেটা না হলেও চতুর্থ বলে কুইন্টন ডি কককে বোল্ড করে দিয়ে টেস্ট ইতিহাসে চার বলে তিন উইকেট শিকারী ৩৬তম বোলার হিসেবে ৩৯তম ঘটনার জন্ম দেন। অভিষেক টেস্টে চার বলে তিন উইকেট শিকারের সে ঘটনাটিও ছিল ইতিহাসে চতুর্থ। পরে প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের পক্ষে সফলতম ব্যাটসম্যান টেমবা বাভুমাকেও সাজঘরে ফিরিয়ে দেন তিনি। ১৭.৪ ওভার বোলিং করে ৬ মেডেনসহ মাত্র ৩৭ রানে ৪ উইকেট। আড়াই দিন খেলা হয়েছে সাগরিকা টেস্টে। আর কোন ক্রিকেটার এমন উল্লেখযোগ্য ঘটনার জন্ম দিতে পারেননি। এ কারণে মুস্তাফিজই হয়ে গেলেন বৃষ্টিবিঘিœত সাগরিকা টেস্টে ম্যাচসেরা খেলোয়াড়। আর গড়েছেন নতুন বিশ্বরেকর্ড। অভিষেক ওয়ানডেতে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন বিশ্বের ৬১তম ক্রিকেটার হিসেবে আর অভিষেক টেস্টে ম্যাচসেরা হলেন ৪০তম ক্রিকেটার হিসেবে। এক ক্রিকেটারের দুই ফরমেটের অভিষেকে ম্যাচসেরা হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। যদিও বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেক টেস্টে এর আগে ম্যাচসেরা হয়েছেন জাভেদ ওমর (২০০১, জিম্বাবুইয়ে), মোহাম্মদ আশরাফুল (২০০১, শ্রীলঙ্কা) ও ইলিয়াস সানি (২০১১, ওয়েস্ট ইন্ডিজ)। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি অনন্য বিশ্বরেকর্ড গড়লেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, যা এখন পর্যন্ত কোন দেশের কোন ক্রিকেটার করতে পারেননি। সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আশরাফুল, বল হাতে হ্যাটট্রিক ও ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি সোহাগ গাজী এবং মুস্তাফিজের চলতি টেস্টে ও ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের নৈপুণ্য। এ কয়েকটিই অনন্য বিশ্বরেকর্ড। এ কারণেই দারুণ খুশি মুস্তাফিজ। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার টার্গেট থাকে, যদি আমাকে ম্যাচ খেলায় তবে ভাল করার। টেস্টে তো দক্ষিণ আফ্রিকা এক নম্বর দল। আমার প্রথম টার্গেট ছিল, আমাকে যদি ম্যাচ খেলার সুযোগ দেয়, আমি আমার সেরাটা খেলার চেষ্টা করব দেশের জন্য। এখন অনেক ভাল লাগছে। এর আগে কেউ হয়নি। আমিই প্রথম।’
×