ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় খাদ্য সঙ্কট ও পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা

তামাকের আগ্রাসন

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৬ জুলাই ২০১৫

তামাকের আগ্রাসন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ২৫ জুলাই ॥ কুষ্টিয়ায় চলছে তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন। এ আগ্রাসনে দিন দিন কমে আসছে ফসলি জমির পরিমাণ। অধিক মুনাফার আশায় কৃষকরা এখন তামাক চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। গত ১৫ বছরে জেলার ৬টি উপজেলায় তামাক চাষে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে কমপক্ষে আটগুণ। বেশি মুনাফার জন্য কৃষকরা ধান, গম, পাট ও সবজির আবাদ বাদ দিয়ে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, তামাক চাষ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জেলায় একসময় খাদ্য সঙ্কটের সৃষ্টি হবে। বাধাগ্রস্ত হবে শস্য বহুমুখীকরণের কাজ। পাশাপাশি পরিবেশের ওপরও পড়তে পারে বিরূপ প্রভাব। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০০ সালে কুষ্টিয়ায় ৪ হাজার হেক্টর জমি তামাকের আবাদ করা হয়। বর্তমানে বেসরকারী হিসেবে তামাক চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে। এই হিসেবে দেখা যায় তামাক চাষের জমির পরিমাণ গত ১৫ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে অন্তত আটগুণ। তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সরকারী হিসেবে বলা হচ্ছে জেলায় তামাক চাষের পরিমাণ ২০ হাজার ১৫০ হেক্টর। অপরদিকে ধান, গম, পাট ও সবজি আবাদে জমির পরিমাণ কমে গেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে। গমের আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ১শ’ হেক্টরে। পাটের আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে এবং তামাকের আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। তবে তামাক চাষে সরকারী হিসেবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কৃষিবিদ জানান, মাঠ পর্যায় চিত্র ভিন্ন। বেসরকারী হিসেবে এই পরিমাণ অনেক বেশি। তিনি বলেন, কুষ্টিয়ায় বর্তমানে ৩০ থেকে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হচ্ছে এবং কৃষকের ঘরে ঘরে এখন তামাক পৌঁছে গেছে। এভাবে তামাকের আবাদ বৃদ্ধি পেতে থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্য ফসল জমির সঙ্কট সৃষ্টি হবে। জেলার ৬ উপজেলার মধ্যে মিরপুর, ভেড়ামার ও দৌলতপুর এলাকায় সবচে বেশি তামাক উৎপন্ন হয়। এদিকে তামাক চাষ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানা যায়, ধান, গম ও পাট চাষের চেয়ে তামাক চাষে কয়েকগুণ বেশি লাভ পাওয়া যায়। এছাড়া সিগারেট কোম্পানিগুলো তামাক চাষের জন্য কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে। মিরপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের তামাক চাষি আলাউদ্দিন জানান, ধান, গম, মসুর চাষ বাদ দিয়ে তিনি ২ বিঘা জমিতে তামাকের আবাদ করেছেন। বেশি লাভের কারণে গত তিন বছর ধরে তিনি তামাক চাষ করছেন। এই গ্রামের মিজানুর রহমান, মিনহাজ সর্দার ৪ থেকে ৮ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করছেন। তারা বলেন, ১ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করে যে লাভ পাওয়া যায় ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে তা পাওয়া যায় না। এছাড়া তামাক নগদ টাকায় বিক্রিয় হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ধান, গম ও পাট চাষে সরকারের নির্দেশনা থাকে এবং সেভাবেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও অর্জনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তামাক চাষে সরকারের কোন নির্দেশনা থাকে না আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হবার জন্যই চাষীরা তাদের নিজ উদ্যোগে তামাকের আবাদ করে থাকেন। তবে আমরা তামাক চাষে চাষীদের সব সময় নিরুৎসাহিত করে থাকি।
×