ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুপার সাসপেন্ড

রাজশাহীতে ট্রেনের টিকেট বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৬ জুলাই ২০১৫

রাজশাহীতে ট্রেনের টিকেট বাণিজ্য

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী থেকে কর্মস্থলমুখী ঈদ ফেরত ট্রেন ও বাসের টিকেট নিয়ে এবার ব্যাপক কারসাজির অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জোনের কর্মকর্তা ও বাস কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। কতিপয় কর্মকর্তা নিজস্ব এজেন্ট নিয়োগ করে আগেই টিকেট হাতিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করলেও কাউন্টারে মিলছে না কাক্সিক্ষত ট্রেনের টিকেট। এরই মধ্যে টিকেট কলোবাজারির অভিযোগে রাজশাহী রেলওয়ে স্টশনের সুপারিনটেনডেন্ট সাসপেন্ড হয়েছেন। ঈদের পর থেকে এ অবস্থা বিরাজ করছে। টিকেট নিয়ে প্রতিদিনই রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ও বাসস্টেশনে চলছে তুলকালাম কা-। ঈদের এক সপ্তাহ পর শনিবারেও লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে পাননি ট্রেন বাসের টিকেট। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে যাত্রীদের। শনিবার রাজশাহী রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের লম্বা লাইন। লাইনে থেকেও শেষ পর্যন্ত কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছেই ফিরছেন খালি হাতে। বলা হচ্ছে, টিকেট শেষ। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট পাননি ঢাকার ড্যাফডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহান সাদিক রাহাত। বাড়ি তার রাজশাহী নগরীতে। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। ঈদ শেষে এখন ঢাকায় ফিরতে হবে। ঈদের পর থেকেই রেলস্টেশনে ও বাস কাউন্টারে ধর্না দিচ্ছিলেন। কিন্ত কোন টিকেট পাননি। রাহাত জানান, ট্রেনের টিকেট না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ন্যাশনাল ট্রাভেলসের পরিচিত এক কর্মচারীকে ধরে ৪৫০ টাকার টিকেট কিনেছেন সাত শ’ টাকায়। শুধু রাহাত নন, রাজশাহীতে তার মতো এভাবে হাজারো সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে বিক্রি করা হচ্ছে ট্রেন ও বাসের টিকেট। লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাসগুলোর জন্যও আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। হাসান আদিব নামের যাত্রী জানান, অনেক কষ্টে তিনি ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করেছেন চারদিন আগে। শনিবার সকালে ট্রেনে উঠার পরে দেখেন ‘ঝ’ নম্বরের ওই গোটা বগিই যাত্রীদের ভিড়ে লোকারণ্যে। তিনি তাঁর সিট পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। জানা গেছে, ট্রেনের সিংহভাগ টিকেট আগাম কেটে নিজেদের কব্জায় রেখে এজেন্টের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন রাজশাহী স্টেশনের সুপারিন্টেডেন্ট আব্দুল করিম। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে রেলওয়ে শাখা শ্রমিকলীগের কতিপয় নেতা ও কাউন্টারের টিকেট বিক্রির সঙ্গে সংযুক্তরা জড়িত। এরই মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় টিকেট নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগে রাজশাহী স্টেশনের সুপারিন্টেডেন্ট আব্দুল করিমকে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে বরখাস্তের আদেশ রেলওয়ে পশ্চিম জোনের মহাব্যবস্থাপকের হাতে এলে শনিবার তাকে বরখাস্ত করা হয়। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পশ্চিম রেলের জিএম খায়রুল আলম জানান, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন সুপারেন্টেন্ড আবদুল করিমের বিরুদ্ধে টিকেট বাণিজ্য, সময় মতো অফিসে না আসা, স্টাফদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগে শনিবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার তাড়াকে ‘পুঁজি’ করে ট্রেনের ফিরতি টিকেট নিয়ে শুরু থেকেই বাণিজ্যে নামেন কতিপয় কর্মকর্তা। ফলে আগের দিন থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট না পেয়ে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে বেশিরভাগ যাত্রীকে। তবে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা না করেও অতিরিক্ত দাম দিলে মিলছে টিকেট, এমন অভিযোগও রয়েছে। শনিবার সকালে রাজশাহী রেল স্টেশনের টিকেট কাউন্টারে সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে শাহনেওয়াজ্জামান বলেন, টিকেট নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। নির্ধারিত ছুটি শেষে ঢাকায় না ফিরতে পারলে তাকে নানা ঝামেলা পোহাতে হবে। তাই টিকেটের জন্য কয়েকদিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকেট পাননি। আরেক যাত্রী শামীম হোসেন বলেন, সকালে টিকেট বিক্রি শুরুর ১০ মিনিটের মাথায় বলা হচ্ছে আর টিকেট নেই। তার অভিযোগ, পুলিশসহ বিভিন্ন প্রশাসনের লোক ও রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ে লাইনে না দাঁড়িয়েও অনায়াসে টিকেট কেটে নিয়ে যাচ্ছে। নগরীর শিরইল এলাকার মাসরুর ইনসান মারুফ নামের যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, রেলস্টেশনে র‌্যাব পুলিশ রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে টিকেট কালো বাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি এসি টিকেট অতিরিক্ত চার শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×