ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দশ দিনের বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট বেহাল ॥ ভেঙ্গেচুরে খানখান

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৭ জুলাই ২০১৫

দশ দিনের বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট বেহাল ॥ ভেঙ্গেচুরে খানখান

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা না হওয়ায় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রি দিয়ে তৈরি হচ্ছে দেশের বেশিরভাগ সড়ক। সড়ক মহাসড়ক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছাড়া নির্মাণের সময় রাস্তার মান যাচাই বা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। সড়কের মান যাচাইয়ের পর নেই সার্টিফিকেট দেয়ার রেওয়াজ। অদক্ষ ও অপেশাদার ঠিকাদারদের দেয়া হচ্ছে রাস্তার কাজ। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ী রাস্তার ডিজাইনও নিরূপণ করা হচ্ছে না। ইচ্ছেমতো নির্মাণসহ সড়কের মেরামত হচ্ছে। মূলত এ কারণেই সড়কের স্থায়িত্ব কম। দশ দিনের বৃষ্টিতে পানি জমে ভেঙেচুরে খান-খান হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে দেশের ২১ হাজার কিলোমিটার সড়কের কমবেশি সবটুকুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। ওঠে গেছে বিটুমিন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশুলিয়া-চন্দ্রাসহ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। তবে সড়ক মহাসড়ক বিভাগ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কোন তথ্য তাদের হাতে এখনও পৌঁছেনি। এদিকে রাজধানীর এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকেই এখন ভাঙাচোরা। সব মিলিয়ে রাস্তার কারণে জনদুর্ভোগ দেশজুড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নির্মাণ সামগ্রি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা না করে রাস্তা নির্মাণের কোন সুযোগ নেই। সড়কের কাজ চলা অবস্থায় বারবার মান যাচাই হয়। রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও নিয়োগ দেয়া হয় দক্ষ ও অভিজ্ঞ ঠিকাদার। এ কারণে অন্যান্য দেশে বৃষ্টিপাত হলে রাস্তা নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা থাকে না। অথচ আমাদের দেশে রাস্তার জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হলো বৃষ্টি। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, সড়ক নির্মাণে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সড়ক মহাসড়কের চিত্র ॥ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জনকণ্ঠকে বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে কম বেশি দেশের সকল সড়ক মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানান, সাভারের ফ্যান্টাসি কিংডম, টাঙ্গাইলের মীর্জাপুর থেকে জামুরকি পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা বেহাল। এছাড়াও পূর্বাইল থেকে টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের অবস্থাও ভাল নয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও আশুলিয়া এলাকা। মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১৬ তারিখ টঙ্গী থেকে আশুলিয়া ও ইপিেিজড পর্যন্ত সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য দু’জন প্রকৌশলীকে লিখিত নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ তেমন একটা হয়নি। অবশ্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেছেন, সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়ক হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আগামী বছর এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল মহাসড়ক হবে চার লেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জনকণ্ঠকে বলেন, অতিবর্ষণের কারণে কোনাবাড়ি থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত রাস্তায় অনেক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট রুটে টঙ্গী থেকে ঘোড়াশাল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মহাসড়কের অবস্থা নাজুক। যমুনা নদীর পশ্চিমপাড় অর্থাৎ সিরাজগঞ্জ থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটারের বেশি সড়ক এখন খানাখন্দে ভরা। রাস্তায় জমেছে পানি। ফরিদপুরে পর যশোর সড়কের ৫টি পয়েন্টে ভাঙাচোরা দেখা দিয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা থেকে ত্রিশাল পর্যন্ত প্রায় সাতটি পয়েন্টে ১০ কিলোমিটারের বেশি সড়কে এখন বেহাল দশা বিরাজ করছে। স্বাভাবিক গতিতে সড়কের এ অংশে যানবাহন চলাফেরা করতে পারছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা থেকে মীরেরসরাইসহ অন্তত ৬টি পয়েন্টে প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক ভাঙাচোরা অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, ঈদের আগে কিছু সড়ক আপদকালীন মেরামত করা হয়। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে অস্থায়ী মেরামত নষ্ট হয়ে গেছে। সঙ্কট আরও বেড়েছে। ফলে জনদুর্ভোগ হচ্ছে। জানতে চাইলে সড়ক মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল জনকণ্ঠকে বলেন, বর্ষার কারণে সড়ক মহাসড়কের ভাঙাচোরার কোন তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আসেনি। ঈদের ছুটির কারণে তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছুটি শেষে এখন কর্মকর্তারা ফিরেছেন। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র আমাদের হাতে পৌঁছাবে। তাছাড়া স্থানীয় সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা মেইলে এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠালেও কম্পিউটার খোলা হয়নি। যে কারণে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। রাজধানীর রাস্তার চিত্র ॥ রাজধানীর পোস্তগোলা থেকে ফরিদাবাদ পর্যন্ত সড়কটি এখন বেহাল দশা বিরাজ করছে। ইট খোয়া বলতে কিছু নেই। উঠে গেছে কংক্রিট। অনেক স্থানে পাকা সড়কের কোন স্মৃতি চিহ্নও নেই। পুরো রাস্তাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। জমেছে পানি। অতিবৃষ্টির পর দেখলে মনে হবে একটি ছোট খাল। আর এ কারণে প্রতিদিনই ঘটছে কমবেশি সড়ক দুর্ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় ছয় মাস ধরে রাস্তাটির এ অবস্থা বিরাজ করছে। দক্ষিণগাঁও ইউনিয়নের মাত্র দুই কিলোমিটার সড়কের জন্য দিনের পর দিন লাখ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাজারবাগ কালীবাড়ির পর থেকেই সিটি কর্পোরেশনের সীমানা শেষ। ঠিক সীমানার শেষ প্রান্ত থেকেই দুর্ভোগের যাত্রা শুরু। দুই কিলোমিটারজুড়ে পুরো রাস্তাটি ভেঙ্গেচুরে খালে পরিণত হয়েছে। ভারি যানবাহন চলায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। ইট-সুড়কি কিংবা কংক্রিটের স্মৃতি চিহ্ন মুছে গেছে। দেখলে বোঝার উপায় নেই, এ সড়কটি এক সময়ে পাকা ছিল। রাস্তাজুড়ে জমেছে হাঁটুপানি। এ সড়কে এখন আর রিক্সা চলে না। বৌদ্ধ মন্দির থেকে দক্ষিণগাঁও পর্যন্ত চলা অটোরিক্সা চালকরা জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টির কারণে রাস্তাটির বেহাল দশা বিরাজ করছে। যদিও অনেক আগে থেকেই সড়কটি নষ্ট ছিল। স্থানীয় মানুষ একাধিকবার সড়কটি সংস্কারের জন্য সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জানা গেছে, স্থানীয় সাংসদের পক্ষ থেকে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য এলজিইডিকে লিখিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক বলেন, শুক্রবার থেকেই ডিএনসিসি রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করবে। এ জন্য শুক্র-শনি দু’দিনব্যাপী ক্রাশ প্রোগ্রাম নেয়া হয়েছে।
×