ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ম্যাজিকবয় মুস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৮ জুলাই ২০১৫

ম্যাজিকবয় মুস্তাফিজ

বিশ্বে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ও টেস্ট অভিষেকেই ম্যাচসেরা হওয়ার অনন্য এক কীর্তি গড়লেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান। ওয়ানডে অভিষেকের দিন থেকেই বিশ্বরেকর্ড, ইতিহাস, ম্যাচসেরা শব্দগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে তার নাম। মুস্তাফিজ এখন পর্যন্ত পৃথিবীর একমাত্র ক্রিকেটার যিনি টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরমেটে অভিষেকেই ‘ম্যাচসেরা’ হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত টেস্ট ও ওয়ানডেতে আলাদাভাবে ৯৯ জন ক্রিকেটার ম্যাচসেরা হয়েছেন। এই তালিকায় মুস্তাফিজ শততম ক্রিকেটার হিসেবে দুই ফরমেটেই নিজের নামটা ইতিহাস করে রাখলেন। যদিও ক্রিকেটের দুই ফরমেটে অভিষেকে ম্যাচসেরা হওয়ার কীর্তি আছে আরেকজন ক্রিকেটারের। তিনিও বাংলাদেশী। তবে সেটা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অভিষেকে। সেই রেকর্ড গড়েন ইলিয়াস সানি। মুস্তাফিজের বিষয়টি একেবারে ভিন্ন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই একের পর এক রেকর্ড করে যাচ্ছেন তিনি। দুরন্ত এই টাইগার কাটার স্পেশালিস্ট ইতোমধ্যে খ্যাতি পেয়েছেন ‘ম্যাজিকবয়’ হিসেবে। অভিষেকে খেলতে নেমে যেভাবে রেকর্ড বই ওলট-পালট করে দিলেন তাকে তো ‘ম্যাজিকই’ বলতে হয়। অভিষেকের পর থেকেই একের পর এক চমক দেখিয়ে চলেছেন এই পেস-বিস্ময়। ওয়ানডেতে নিজেকে তুলে ধরেছেন, টেস্ট আঙ্গিনায় পা দিয়েও রেকর্ড গড়লেন এই বাঁ-হাতি। চলতি বছরের ১৮ জুন ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় মুস্তাফিজের। সেদিন ৫০ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই ফরমেটে। অভিষেকে বাংলাদেশী টেস্ট বোলার হিসেবে এক ওভারে তিন উইকেট নিয়েছেন। পরে শেষ উইকেটটা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আড়াই শ’ রানের নিচে অলআউট করতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ ড্র হলেও ম্যাচসেরা মুস্তাফিজই। ড্র হয়ে যাওয়া এই টেস্টে বাংলাদেশের প্রাপ্তি অনেক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ড্র করল বাংলাদেশ। এ ছাড়া দলটির বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো লিড, প্রথমবার বিশ্বসেরা এই দলটিকে প্রথম দিনেই অলআউট করাÑ এসব কীর্তি তো আছেই। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন মুস্তাফিজ। বাংলাদেশ অধিনায়কও স্বীকার করলেন ‘মুস্তাফিজ কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছেন’। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন বোলিং সেনসেশন মুস্তাফিজ। টানা দুই ওয়ানডেতে ১১ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছেন, প্রথম তিন ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়েছেন, ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ ওয়ানডেতেও সেরাদের তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করেছেন। ব্রায়ান ভিটোরির পর ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচেই ইনিংসে ৫ উইকেট নেন। প্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে এটাই সর্বোচ্চ। চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেকেই চার বলের এক স্পেলে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন। সব মিলিয়ে এই তরুণ পেসার এক অনন্যতায় উজ্জ্বল। বাকি টেস্টগুলোতে মুস্তাফিজ এই ধারাবাহিকতা রাখবেন এটা সবার বিশ্বাস। ক্রিকেটে বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনার কথা যারা বলেন তাদের কথা যে কথার কথা নয় তার প্রমাণ রেখেছেন এই নতুন রেকর্ড সৃষ্টিকারী। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিস্ময়ও মুস্তাফিজ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সাকিবের পর এক জগতখ্যাত ক্রিকেটার মুস্তাফিজ। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন নায়কের নামও মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজের জন্য শুভ কামনা।
×