ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণের চরাঞ্চলে ফিরে এসেছে সোনামুগের ঐতিহ্য

সাগরপাড়ে মুগডালের চাষ ॥ কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৮ জুলাই ২০১৫

সাগরপাড়ে মুগডালের চাষ ॥ কৃষকের মুখে হাসি

শংকর লাল দাশ ॥ পরিশ্রমে আছে আনন্দ। ক্ষেত ভরা ডাল যেন ভুলিয়ে দিয়েছে ঘাম ফেলা শ্রমের কষ্ট। বরং মুখে তুলে দিয়েছে প্রাণখোলা হাসি। পরিশ্রমে মিলেছে মুগডালের ঐতিহ্য। রাঙ্গাবালীর সাগরপাড়ের বেশ কয়েকটা গ্রামের ক্ষেত ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে প্রায় সবখানে। পটুয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের চরাঞ্চলে মুগডাল চাষের ঐতিহ্য বহু পুরনো। এখানকার সোনামুগের খ্যাতি প্রবাদসম। কিন্তু গত তিন-চার দশকে নানা কারণে মুগডালের আবাদ একেবারেই প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছিল। বিশেষ করে উৎপাদন খরচের তুলনায় বিক্রয় মূল্য কম হওয়ায় চাষী মুগডাল চাষ কমিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু গত এক দশকে উচ্চ ফলনশীল নানা জাতের বীজ বাজারে আসায় কৃষক ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়ে আবার মুগডাল চাষে। উচ্চ ফলনশীল বীজে ফলন বেশি। উৎপাদন খরচ কম। চাহিদাও ব্যাপক। ফলে এখন আবার চরাঞ্চলে ফিরে এসেছে মুগডালের ঐতিহ্য। পটুয়াখালীর সাগরপাড়ের কেবলমাত্র রাঙ্গাবালী উপজেলায় এবার ৮ হাজার হেক্টর জমিতে মুগডালের চাষ হয়েছে। এতে ১২ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। ক্ষেতভর্তি মুগডালের বাম্পার ফলনে এবার কৃষকের মুখে দেখা দিয়েছে খুশির ঝিলিক। রাঙ্গাবালী উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমান জানান, ৮ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে স্থানীয় সোনামুগ জাতের মুগডালের আবাদ হয়েছে ২শ’ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে হাইব্রিড বারি-২, ৫, ৬ ও কান্তি জাতের মুগডালের চাষ হয়েছে। স্থানীয় জাতের সোনামুগ ডালের দাম বেশি হলেও হাইব্রিডের ফলন বেশি হওয়ায় কৃষক সেদিকেই বেশি ঝুঁকে পড়েছে। মুগডাল চাষের আরেকটি সুফলের তথ্য দিয়ে তিনি জানান, মুগডাল চাষের জমিতে পরবর্তীতে আমন চাষে ইউরিয়া সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। মুগডাল চাষের কারণে জমিতে প্রচুর জৈবসারের সৃষ্টি হয়। এর ফলে আমনের ফলন খুব ভাল হয়। এদিকে কয়েকজন কৃষক জানান, অন্যান্য রবিশস্যের তুলনায় মুগডাল চাষ বেশ লাভজনক। প্রতি হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষে খরচ গড়ে ১৫ হাজার টাকা। অথচ তাতে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকার মুগডাল উৎপন্ন হয়। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি মণ উচ্চ ফলনশীল মুগডাল বিক্রি হচ্ছে দু’ হাজার টাকা দরে। আর স্থানীয় জাতের মুগডাল প্রতি মণ সর্বোচ্চ তিন হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। চরাঞ্চল প্রধান রাঙ্গাবালীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র ক্ষেত থেকে মুগডাল তোলার ধুম লেগেছে। পরিবারের নারী, পুরুষ, শিশু- সবাই মিলে ক্ষেত থেকে ডাল তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। মুগডাল চাষে ফিরে আসার কারণ প্রসঙ্গে চরলতার প্রবীণ কৃষক আবু জাফর জানান, এখানে কয়েক বছর আগেও আমন ধান ছাড়া আর কোন ফসল হতো না। কিন্তু এখন বেড়িবাঁধের কারণে জমি উর্বর হয়ে উঠেছে। কমে গেছে জলোচ্ছ্বাসে ফসল হারানোর শঙ্কা। একই চরের শেফালি বেগম জানান, বাড়ির পাশের যে জমিটুকু অনাবাদি থাকত, এবার সেখানে অন্তত ৩০ মণ মুগডাল উৎপন্ন হয়েছে। মুগডালের বাম্পার ফলনে সব জায়গাতেই দেখা গেছে কৃষকের মুখে হাসি।
×