ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ঘোষণা

কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৫ ভাগ বাড়ল চলতি অর্থ বছরে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৮ জুলাই ২০১৫

কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৫ ভাগ বাড়ল চলতি অর্থ বছরে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারা ব্যাংকগুলোর অনর্জিত অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলক জমার বিধান রেখে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অনর্জিত অংশের ওপর ব্যাংকগুলো কোন সুদ পাবে না। এবারের নীতিমালায় কৃষি ও পল্লী ঋণের আওতা বৃদ্ধি ছাড়াও পল্লী এলাকায় ব্যাংকিং কর্মকা- সম্প্রসারণে কৌশলগত পদ্ধতি গ্রহণ, কৃষকদের ব্যাংকমুখী করা তথা আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্তিকরণ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান, আমদানি বিকল্প ফসল চাষ, নেপিয়ার ঘাস, ক্যাপসিকাম চাষ, আম ও লিচু চাষে ঋণ প্রদানে নির্দেশনা, উদ্ভাবিত নতুন ফসল ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার বিষয়গুলোতে ঋণ দেয়ার বিষয়টি নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। সোমবার বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের উপস্থিতিতে নতুন এ নীতিমালা ঘোষণা করেন গবর্নর ড. আতিউর রহমান। এ সময় ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা রাজী হাসান, এস কে সুর চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমানসহ উর্ধতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা গেল অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ বা ৮৫০ কোটি টাকা বেশি। এছাড়া ব্যাংকগুলোর জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ও পল্লী উন্নয়ন বোর্ড নিজস্ব অর্থায়নে যথাক্রমে ৩০ কোটি টাকা ও ৬৭৬ কোটি টাকা কৃষি বিতরণ করবে। মোট ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য ৯ হাজার ২৯০ কোটি টাকা, বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৬ হাজার ৭১৭ হাজার কোটি ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর ২৯৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বিগত অর্থবছরে ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৫ হাজার ৯৭৮ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩ শতাংশের বেশি। নতুন নীতিমালায় বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলোকে মোট ঋণের ন্যূনতম ২ শতাংশ কৃষি ও পল্লী বিতরণ করতে হবে। নতুন ৯টি বেসরকারী ব্যাংকের জন্য এ হার ৫ শতাংশ। যারা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে না তাদের অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলক জমা করতে হবে। ব্যাংক এই জমার ওপর কোন সুদ পাবে না। গেল অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় টার্গেট পূরণে ব্যর্থ ব্যাংকের অনর্জিত অংশের ওপর ৩ শতাংশ হারে অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলক জমা রাখার বিধান ছিল। এছাড়া ওই নীতিমালায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত কৃষিঋণের তহবিলে ব্যাংক রেটে ৫ শতাংশ হারে সুদ পেত। অনুষ্ঠানে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, সঠিক খাতে ঋণ প্রদান, ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, ঋণ আদায়, মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ও কৃষকদের চাহিদা ও সন্তুষ্টি নিশ্চিতে ব্যাংক এমডিদের আহ্বান জানান গবর্নর। একই সঙ্গে কৃষিঋণ আদায়ের ব্যাপারে আরও যতœবান হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। ড. আতিউর রহমান বলেন, কৃষি আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ও উৎপাদনশীল খাত। এখনও আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবার সরাসরি কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, জীবনমান এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের চাহিদার একটি বড় অংশই পূরণ করছে কৃষি খাত। কৃষকদের ১০ টাকার এ্যাকাউন্ট নিয়ে গবর্নর বলেন, কৃষকদের স্বার্থে প্রচলিত দশ টাকার হিসাবগুলো শুধু ভর্তুকি দেবার জন্য চালু করা হয়নি। এ হিসাব রেমিটেন্স প্রদান, ঋণ প্রদান, সঞ্চয় সংরক্ষণসহ নিয়মিত হিসাবের মতোই পরিচালনা (তবে বিনাচার্জে) করতে হবে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান গবর্নর। তিনি বলেন, আমাদের মূল কাজ মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবেই এ কৃষি ঋণ নীতিমালা জারি করা হয়ে থাকে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এবারের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দিকের মধ্যে রয়েছে-কৃষি ও পল্লী ঋণের আবেদন ফরম সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আপলোড, পত্রিকায় প্রকাশ এবং এই ফরম অনুযায়ী কৃষি ঋণের জন্য আবেদন করতে কৃষককে উৎসাহ দিতে মিডিয়ায় প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি ব্যাংক শাখায় কৃষিঋণের সুদহার, কৃষিঋণের খাত, আমদানি বিকল্প ফসল চাষের জন্য রেয়াতি সুদহার এবং কৃষিঋণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর সংবলিত ব্যনার-ফেস্টুন দৃষ্টিগোচর স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রধান কার্যালয়ের কৃষি ঋণ মনিটরিং সেল এবং গ্রামীণ অঞ্চলের ব্যাংক শাখায় যেখানে পর্যাপ্ত জনবল নেই সেখানে জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের বিভাগীয় অফিসগুলোও কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায়ে আরও সক্রিয় থাকবে। এছাড়া যে কেউ হটলাইন, ফেসবুক, টেলিফোন, ই-মেইল ও ফ্যাক্সযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগে সরাসরি এবং গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ বিভাগে কৃষিঋণ বিষয়ক যে কোন অভিযোগ জানাতে পারবেন বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। গেল অর্থবছরের শুরু থেকেই কৃষিঋণ বিতরণে কাক্সিক্ষত গতি পায়নি। তবে শেষ সময়ে এসে কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে। ফলে অর্থবছর শেষে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩ শতাংশ বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয় ব্যাংকগুলো। এছাড়া গেল অর্থবছরে আদায়যোগ্য ঋণের ৭০ শতাংশ আদায় হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় বেশি। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, গেল অর্থবছরে আমদানি বিকল্প ফসল চাষে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদহারে সাড়ে ৯৫ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮২ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বাধা দূর করতে তিনি ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে কৃষিঋণ বিতরণে যাতে কোন কেলেঙ্কারি না হয় সে ব্যাপারে তিনি ব্যাংকগুলোকে বিশেষভাবে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, কৃষিঋণ বিতরণের বিষয়টি পারফরম্যান্স মূল্যায়ন বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
×