ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতি মাসে গড়ে ১২৫ পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আসে

ভাবমূর্তির সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারছে না পুলিশ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৮ জুলাই ২০১৫

ভাবমূর্তির সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারছে না পুলিশ

শংকর কুমার দে ॥ যেই পুলিশ অপরাধ দমন করবে সেই পুলিশই জড়াচ্ছে নানা ধরনের অপরাধে, যেন শনির দশায় পেয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। শিশু রাজন হত্যাকা-ের গাফিলতির ঘটনায় তিন পুলিশকে বরখাস্তসহ অপরাধে অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরও ইমেজ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠতে পারছে না পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাদেশে প্রতি মাসে গড়ে ১২৫০ জন পুলিশ অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ পাচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। গত সাড়ে ৩ বছরে পুলিশ সদর দফতরের সিকিউরিটি সেল এবং ডিসিপ্লিন বিভাগে ৫০ হাজারের বেশি অপরাধের অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে আলোচ্য সময়ে ইয়াবা, মানব পাচার, খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, পরকীয়া প্রেম, জমি দখল, ঘুষ, নির্যাতন, ধর্ষণ, গ্রেফতার বাণিজ্য, দুর্নীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গেও অভিযোগের অপরাধে পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৩৪ হাজার ১২৯ পুলিশ সদস্যকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। বড় ধরনের অপরাধে গুরুদ- দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৪০০ পুলিশ সদস্যেকে আর লঘুদ- পেয়েছে ৩১ হাজার ৭২৯ পুলিশ সদস্য। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। শিশু সামিউল ইসলাম রাজন হত্যাকা-ের ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি, বরিশালে পুলিশ নিয়োগে ঘুষের তহবিল গঠন, কুমিল্লার মুরাদনগরে পুলিশের বিরুদ্ধে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ঘুষের অভিযোগে পুলিশ প্রত্যাহার, ইয়াবা পাচারের ঘটনায় পুলিশের জড়িত থাকাসহ নানা ধরনের অভিযোগ এখন পুলিশ সদর দফতরের সিকিউরিটি সেল এবং ডিসিপ্লিন বিভাগে তদন্তনাধীন। সম্প্রতিকালে কয়েকটি ঘটনায় কিছু পুলিশ সদস্যের ভূমিকা এবং এসব ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ঐহিত্যবাহী এই শৃঙ্খলা বাহিনীর ভবিষ্যত সম্পর্কে উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসনও। ফেনীতে এক সাব ইন্সপেক্টর গাড়িতে ইয়াবাসহ ধরা পড়ার ঘটনা এবং কক্সবাজারে মানব পাচারের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ইমেজ সঙ্কটের মধ্যে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। এমনকি গত রমজান মাসের সময়ে পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা ইয়াবা, মাদক ও চাঁদাবাজির মতো গুরুতর ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণœ হতে না পারে তার জন্য পুলিশের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সম্প্রতি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে ঘুষ তহবিল গঠন করার অভিযোগে একজন ডিসিসহ ১০ পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে এক দল যুবক নারীদের লাঞ্ছিত করে। নিপীড়নকারীদের বাধা দিতে গিয়ে আহত হন ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি লিটন নন্দীসহ কয়েকজন। ওই সময় চার নিপীড়ককে ধরে দুই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে দেয়া হলেও তাদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি স্বীকার করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। শুধু তাই নয়, রাজধানীর কাফরুল এলাকার ১৭ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক এবং ওই কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার শেখ রাজীবুল হাসানের বিরুদ্ধে। বহুল আলোচিত ঘটনায় গোয়েন্দারা অপহৃত হওয়ার আগে ও পরে ওই কিশোরীর সঙ্গে মুঠোফোনের কথোপকথনের রেকর্ডেও রাজীবের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায় গোয়েন্দারা।
×