ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মালয়েশিয়ায় পাঁচ লাখ কর্মী নিয়োগে ঢাকায় বৈঠক

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৯ জুলাই ২০১৫

মালয়েশিয়ায় পাঁচ লাখ কর্মী নিয়োগে ঢাকায় বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আজ ঢাকায় আসছে। প্রতিনিধি দল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে কি পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ করা হবে তা ঠিক করা হবে। বেসরকারী পর্যায়ে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্প্রতি একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। সেই চুক্তির আলোকে দেশটির কর্তৃপক্ষ কৃষি, নির্মাণ, ফার্নিচার কারখানাসহ কয়েকটি সেক্টরে ৫ লাখ কর্মী নিয়োগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। দেশটির কর্তৃপক্ষ অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ৫ কর্মী নিয়োগ দেয়ার কথা জানিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এমন তথ্য দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া সফর করে বেসরকারী পর্যায়ে কর্মী নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রীর নূরুল ইসলাম বিএসসি দায়িত্ব নিয়েই মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের ওপর জোর দেন। কেউ যেন আর সাগর পথে বা অবৈধ উপায়ে মালয়েশিয়া না যান এ নিয়েও তিনি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এরপর তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হাইকমিশন দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা জানিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। কোন প্রকার বদনাম যাতে না সেদিকে নজর রাখা হবে। জনশক্তি রফতানিকারকরা যাতে কোন কর্মীর কাছ থেকে বেশি টাকা নিতে না পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। কর্মী নিয়োগের আগেই তদারকির জন্য একটি কমিটি করে দেয়ার চিন্তাও রয়েছে। মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৬ মাসের মধ্যে ৫ লাখ কর্মী সেখানে চাকরি পাবেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক কর্মী দেশটিতে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি সত্যিই দেশের জন্য একটি বড় খবর। আশা করি সব কিছু ঠিক থাকলে ৬ মাসের মধ্যেই ৫ লাখ কর্মী আমরা সরবরাহ দিতে পারব। সরকার টু সরকার মতই বেসরকারীভাবেও কম খরচেই কর্মীরা মালয়েশিয়া যেতে পারবেন। ডাটাবেজ পদ্ধতিতে নিবন্ধিত কর্মী থেকেই কর্মী নিয়োগ করবে দেশটির কর্তৃপক্ষ। জনশক্তি রফতানিকারকরাও নিবন্ধনের বাইরে থেকে কোন কর্মী পাঠাতে পারবেন না। নিবন্ধিত কর্মীদের মধ্যে থেকে কর্মী নিয়োগ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বচ্ছতা। এটা হলে কোন কোন অসাধু আদম ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিতে পারবে না। মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগে সোর্স কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশকে ঘোষণা দিয়েছে। কর্মী নিয়োগ করতে হলে বাংলাদেশ থেকে তাদের কর্মী নিতে হবে। বর্তমানে ১৫টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগ করছে। এই ১৫ দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ প্রথম স্থানেই রয়েছে। বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম, সততা রয়েছে। বাংলাদেশের কর্মীদের মধ্যে এমন গুণ থাকায় মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কয়েক বছরে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগ দেবে। গোটা বিশ্বেই বাংলাদেশী কর্মীদের সুনাম রয়েছে। ১৯৭৬ সালে ২ হাজার ৭২৫ নিয়োগের মাধ্যমে জনশক্তি রফতানি যাত্রা শুরু। বর্তমানে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার রয়েছে ১৬২টি দেশে। সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দিয়েছে। সবশেষ যে বৈধতা দেয়া হয়েছিল সেখানে নানা কারণে বাদ যাওয়া ৬৪ হাজার কর্মীকেও বৈধতা দেয়ার বিষয়টিও মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে অবৈধ কর্মীদেরও বৈধ করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ১৬২টি দেশে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। নতুন বাজার সৃষ্ট বাজারগুলোও চাঙ্গা করার হবে। নতুন বাজরের মধ্যে রয়েছে, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুদান, গ্রীস, লাইবেরিয়া, তানজানিয়, এসতোনিয়, আজারবাইজান, নাইজেরিয়া, বোতসোয়ানা, সিয়েরালিয়ন, তাইওয়ান, স্পেন, পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, চেক রিপাবলিক, বেলজিয়াম, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে শ্রমবাজার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া এসব দেশে এর আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল সফর করেছেন। জানা গেছে, কর্মীদের বিদেশী ভাষায় পারদর্শিতা, প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক এ্যাক্রোডিটেশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এ্যাফিলিয়েশন করা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া, আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদার আলোকে বিদ্যমান কোর্স কারিকুলামকে নিয়মিত আপগ্রেড করা, বেসরকারী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত প্রশিক্ষণের মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখার জন্য নিয়মিতভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সূত্র জানিয়েছে, এবার প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সৌদি আরবেও কর্মী নিয়োগের বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সৌদিতে যাতে পুরুষ কর্মী নিয়োগ করা হয় তার জন্য দেশটিতে আগামী মাসেই প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। বর্তমানে সৌদিতে নারী কর্মী ছাড়া পুরুষ কর্মী নেয়া হচ্ছে না। নারী কর্মীর চাহিদা থাকলেও দেশ থেকে নারী কর্মী সৌদি যেতে খুব বেশি আগ্রহ নেই। নানা কারণে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে সৌদিতে একটি প্রতিনিধি দল সফর করে এসেছেন। দেশটিতে পুরুষ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে বলে জানা গেছে।
×