ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

তাহের ও ননী ২৮ জনকে ত্রিমোহনী ব্রিজের কাছে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৯ জুলাই ২০১৫

তাহের ও ননী ২৮ জনকে ত্রিমোহনী ব্রিজের কাছে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার দুই রাজাকার ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৪তম সাক্ষী মোঃ আবু বকর সিদ্দীক জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, ননী ও তাহেরের নেতৃত্বে রাজাকাররা দবিরসহ ২৮ জনকে ত্রিমোহনী ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ৩০ আগস্ট দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দীর সময় সাক্ষীকে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। অন্যদিকে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফদার। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ আবু বকর সিদ্দিক। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৩ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম মৌজেবালি, থানা ও জেলা-নেত্রকোনা। আমি ইতোপূর্বে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের অধীনে চাকরি করে বর্তমানে অবসরে আছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি নেত্রকোনা কলেজে দ্বাদশ বর্ষের ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানী আর্মিরা নেত্রকোনা শহরে এলে পাকিস্তান সমর্থক স্থানীয় নেতারা তাদের স্বাগত জানায়। পাকিস্তানী আর্মিরা নেত্রকোনা শহরে এসে নেত্রকোনা ডাকবাংলোয় ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে ক্যাম্প স্থাপন করে। ওই ক্যাম্প স্থাপন করার পরে নেত্রকোনা শহরে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে। রাজাকার বাহিনী শহরের বড় বাজারে একজন হিন্দু যিনি স্বর্ণ বণিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সাক্ষী জবানবন্দীতে আরও বলেন, তারা মাছুয়া বাজারে শিরিশ মোক্তারের বাড়ি দখল করে নেজামে ইসলামী পার্টির অফিস স্থাপন করে। স্থানীয় নেজামে ইসলামী পার্টির নেতা মঞ্জুরুল হকের ছেলে আসামি ওবায়দুল হক তাহের রাজাকার কমান্ডার নিযুক্ত হন। আসামি আতাউর রহমান ননীসহ অনেকেই ওই রাজাকার বাহিনীর সদস্য হন। রাজাকার বাহিনী নেত্রকোনা শহরে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন শুরু করলে আমি ভীত হয়ে ভারতে চলে যাই। ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করি। ট্রেনিং শেষে আমাদের কোম্পানিকে যুদ্ধের জন্য কলমাকান্দা এলাকায় প্রেরণ করি। সে সময় আমাদের একজন সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারি, আসামি আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহেরের বন্ধু দবিরকে নেত্রকোনা শহরের আখড়ার মোড় থেকে আটক করে ডাকবাংলোতে নিয়ে সেখানে তার ওপর দিনভর নির্যাতন চালিয়ে ওই দিনই রাতে দবিরকে নেত্রকোনা মোক্তারপাড়া ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনাটি ঘটে ৪ অক্টোবর ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালের নবেম্বর মাসের শেষের দিকে আমরা জানতে পারি যে, রাজাকাররা নেত্রকোনা জেল থেকে ২৭ জনকে ধরে আনে। যাদের মধ্যে শিক্ষক কামিনী বাবু ছিলেন। তাদের ধরে এনে ত্রিমোহনী ব্রিজের কাছে গুলি করে হত্যা করা হয়।
×