আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা যাচ্ছে পূর্বাচলে
হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ শুরু থেকে গত ২০ বছর ধরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের খোলা স্থানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা হয়ে আসলেও ২০১৮ সালের পর তা চলে যাবে পূর্বাচলে। সেখানে নির্মিত হচ্ছে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র। চীন সরকারের অনুদানে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। জমি সংক্রান্ত জটিলতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত জমি পাওয়া গেছে। পূর্বাচলের নিউটাউন এলাকায় চার নম্বর সেক্টরের ৩১২ নাম্বার রোডে ২০ একর জায়গা জুড়ে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নামের স্থায়ী এ বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৬ কোটি ১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩৮ কোটি ১৮ লাখ এবং চীন সরকারের অনুদান থেকে ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
এর আগে তেজগাঁও পুরাতন বিমান বন্দরের খালি জায়গায় এটি তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হলেও সময় মতো জমি না পাওয়ায় সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। শেষ পর্যন্ত নতুন করে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে জানান, এ প্রদর্শনী কেন্দ্রটি নির্মিত হলে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য একটি প্ল্যাটফরম স্থাপিত হবে। এতে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদার হবে। এসব দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। তাছাড়া ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পণ্য প্রস্তুতকারী ও রফতানিকারকরা তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পাবে। ফলে বাণিজ্যের উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ বাড়বে।
চীনের অনুদানে এ প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, প্রতিটি ৯ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট ৮০৬টি বুথ সম্বলিত ২টি বড় হল রুম নির্মাণ, ১৫০০ কার পাকিং-এর ব্যবস্থাকরণ এবং সম্মেলন কক্ষ, প্রেস সেন্টার, সভাকক্ষ, বাণিজ্য তথ্য কেন্দ্র, অর্ভ্যথনা কেন্দ্র, সার্র্ভিস রুম, সাব-স্টেশন ইত্যাদি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি জুলাই ২০০৯ হতে জুন ২০১২ সালে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের উত্তর-পশ্চিম কর্ণারে খালি জায়গায় বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে চীন সরকারের অনুদান ছিল ২১০ কোটি টাকা এবং সরকারী সুদমুক্ত ঋণ ও অনুদান ছিল ৬৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটির উপর ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় দুটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এগুলো হলো- বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি চীনা অনুদান, সরকারী সুদবিহীন ঋণ ও অনুদান এবং ইপিবির নিজস্ব অর্থায়নে জুলাই ২০০৯ হতে জুন ২০১২ সালে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন করা হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভূমির মূল্য অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা অনুযায়ী আন্ডারগ্রাউন্ড এ কার পার্কিং ইউটিলিটি সার্ভিসের ব্যবস্থা রেখে সংশোধিত নক্সা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসহ প্রকল্পটি পুনর্গঠনপূর্বক প্রকল্প ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) জরুরীভিত্তিতে পেশ করবে।
সূত্র জানায়, একনেক অনুমোদিত হলেও এই প্রকল্পটির জন্য উপর্যুক্ত জমি যথা সময়ে পাওয়া যায়নি ফলে এর নক্সা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন কাজ আরম্ভ করা যায়নি। পরবর্তীতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে রাজউক পূর্বাচল উপশহরে মোট ২০ একর জমি চূড়ান্ত বরাদ্দ প্রদান করে। এই জমি বিবেচনায় রেখে বেইজিং ইনস্টিটিউট অব আরকিটেকচারাল ডিজাইন (বিআইএডি) কর্তৃক প্রস্তাবিত সেন্টারের সিসমিক ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়। ডিজাইন চূড়ান্ত করার পূবে বিআইএডি প্রকল্প এলাকায় সমীক্ষা পরিচালনা করে জানায় যে, একনেকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই প্রকল্পের ডিজাইনে ভূ-গর্ভস্থ কার পার্কিং ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা অর্থনৈতিক এবং কারিগরি দৃষ্টিকোণ থেকে যৌক্তিক হবে না। ফলশ্রুতিতে বিআইএডি প্রস্তাবিত সেন্টারের সিসমিক ডিজাইন এ ভূ-গর্ভস্থ কার পার্কিংয়ের পরিবর্তে সারফেস এ ১ হাজার ৫০০টি কার পার্কিং ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ডিজাইন এ প্রস্তাবিত সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় মাতৃ কর্ণার ও শিশুদের জন্য একটি বিনোদন কর্ণারের ব্যবস্থা থাকবে। এই সিসমিক ডিজাইন ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক বরাদ্দকৃত ২০ একর জায়গায় সারফেস এ কার পার্কিং, ইউটিলিটি সার্ভিস এবং ভূমি উন্নয়ন ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে সেন্টার নির্মাণের লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হলে গত মে মাসে প্রকল্পটির উপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটির প্রক্রিয়াকরণ সমাপ্ত হয়েছে।