ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পলিসি ব্রিফে ইউনিসেফ

বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু সবচেয়ে বেশি পাঁচ জেলায়

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৩০ জুলাই ২০১৫

বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু সবচেয়ে বেশি পাঁচ জেলায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পাঁচ জেলায় শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে। শিশুদের বিদ্যালয় বহির্ভূত থাকার প্রধান কারণ দারিদ্র্য। এছাড়াও অন্য কারণগুলো হলো- শিশুদের মায়েদের শিক্ষাস্তর ও সার্বিক শিক্ষাসহ একীভূত শিক্ষার পরিবেশ। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিশু বিদ্যালয়ের বাইরে আছে বান্দরবান, সুনামগঞ্জ, ভোলা, নেত্রকোনা এবং কক্সবাজারে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম আছে ঝালকাঠি, বরগুনা, পিরোজপুর, ফেনী এবং যশোর জেলায়। দেশের সব জেলাতেই বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু আছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক বৈষম্য রয়েছে। বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম এবং বিদ্যালয় বর্হিভূত শিশু সংক্রান্ত পলিসি ব্রিফে এসব তথ্য দিয়েছে ইউনিসেফ। এছাড়া কয়েকটি সুপারিশ দেয়া হয়েছে। বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশ যৌথভাবে পলিসি ব্রিফ উপস্থাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, ক্যাম্পেন ফর পপুলার এডুকেশনের রাশেদা কে চৌধুরী, ডিএফ আইডি বাংলাদেশের প্রতিনিধি সারা কুক, ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বিগবেদার এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এস মুর্শিদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ। পলিসি ব্রিফগুলোতে বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পরিবীক্ষণ এবং শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট বৃদ্ধি করা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়ন ও বিস্তৃত করা; যেটি হবে পারিবারিক দারিদ্র্য এবং শিশুদের প্রয়োজনের প্রতি সংবেদনশীল, সকল মেয়ের বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকা এবং কমপক্ষে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা সমাপন নিশ্চিত করা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাল্যবিয়ে, শিশুদের স্কুলের বাইরে থাকা এবং শিশুশ্রম আমাদের সমাজের ব্যাধি। আমাদের শিশুরা লেখাপড়া করতে পারবে না, তাদের বিয়ে হয়ে যাবে, সারাটা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলের বাইরে থাকবেÑ সভ্য সমাজে এটা মেনে নেয়া যায় না। শিশুরা হচ্ছে ভবিষ্যত। আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের পুরোপুরি মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। শিক্ষা খাতে বরাদ্দকে ব্যয় বলা যাবে নাÑ এটা বিনিয়োগ। পলিসি ব্রিফে জানানো হয়েছে, শ্রমে নিয়োজিত শিশুরা সাধারণত কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতে কাজ করে থাকে। শ্রমে নিযুক্ত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ১০ লাখ শিশু রয়েছে। এর মধ্যে সেবা খাত ও কৃষি খাতে নিয়োজিতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যথাক্রমে- প্রায় ৪ লাখ ৭ হাজার এবং ৩ লাখ ৯০ হাজার। শিল্প খাতে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ২ হাজার, যা সেবা খাতে নিয়োজিতদের প্রায় অর্ধেক। সংখ্যার দিক দিয়ে সব খাতেই মেয়ে শিশুশ্রমিকের তুলনায় ছেলের সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে বাল্যবিবাহের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মহিলাদের অর্ধেকেরও বেশি তাদের ১৮তম জন্মদিনের আগেই বিবাহিত এবং প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়সের আগে (ইউনিসেফ, এমআইসিএস ২০১৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী)। তবে কিছু ইতিবাচক খবরও আছে। গবেষণা ও উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার কিছুটা নিম্নগামী। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বন্ধের উদ্দেশ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই শক্ত একটি আইনী কাঠামো, উপযুক্ত নীতি বাস্তবায়ন এবং অধিকতর সামাজিক সচেতনতা ও জনসমর্থন নিশ্চিত করার এটাই উপযুক্ত সময়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেহের আফরোজ চুমকী বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অনেক সামাজিক সমস্যা রয়েছে, যেগুলো রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়। তবে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে গেলে আমরা সফল হব। এর প্রমাণ আমরা এমডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখিয়েছি। আপনারা বারবার বলেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কম। কিন্তু শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দই শেষ কথা নয়। আইসিটি মন্ত্রণালয় এবং আমার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের অনেক ব্যয় হয় শিক্ষা খাতে। যেমন- আমরা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা খাতে কর্মসূচী বাস্তবায়ন করি, বিশেষ করে দুর্গম এলাকা ও চা শ্রমিকদের জন্য। অন্যদিকে আইসিটি খাতের পুরো বরাদ্দই হচ্ছে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। তিনি আরও বলেন, ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে নয়Ñ এ বিষয়ে আইন হচ্ছে। তবে শুধু আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য দারিদ্র্য কমানোসহ অন্যান্য বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে।
×