ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএনসিসির ১৬শ’ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৩০ জুলাই ২০১৫

ডিএনসিসির ১৬শ’ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৬০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। গতকাল বুধবার উত্তরায় ডিএনসিসির কমিউনিটি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসির প্রথম নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক এ বাজেট ঘোষণা করেন। এর আগে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বোর্ড মিটিংয়ে গত অর্থবছরের সংশোধিত ৮০৩ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। বাজেট ঘোষণা শেষে মেয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়কালে মেয়র ডিএনসিসির উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে তার নেয়া মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। আনিসুল হক বলেন, আমার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে একটি সুন্দর, সবুজ, পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ নগরী গড়ে তোলা। আর এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগও হাতে নেয়া হয়েছে। দেশে বর্তমানের ন্যায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি চলমান থাকলে আগামী ৫ বছরে ডিএনসিসির সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০১৬ সালের মধ্যেই ৫৬টি আধুনিক বর্জ্যবাহী গাড়ি, ৩০টি টিপিং ট্রাক, ৪০টি কন্টেনার ও ২০০টি হাতগাড়ি ডিএনসিসিতে যুক্ত হবে। মশক নিধনের জন্য গত অর্থবছরে ২০০টি হস্তচালিত স্প্রে মেশিন, ১০০টি ফগার মেশিন কেনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরও ১০০টি ফগার মেশিন ও ১০০টি স্প্রে মেশিন ও চারটি হুইল ব্যারে মেশিন কেনা হবে, যা পরিকল্পনাধীন রয়েছে। তবে মশার ওষুধ কেনার জন্য গত বছরের চেয়ে এবার বাজেট বাড়ানো হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ইতোমধ্যে একটি অত্যাধুনিক জেট এ্যান্ড সাকার মেশিন কেনা হয়েছে। এটির দ্বারা ডিএনসিসি এলাকার জলাবদ্ধতা অনেকটা নিরসন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। যানজট, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটি সারাসরি সিটি কর্পোরেশেনের ওপর দায়িত্ব না হলেও নাগরিকদের সমস্যার কথা বিবেচনায় এ সমস্যা সমাধানে সম্পৃক্ত দায়িত্বশীলদের সঙ্গেও তিনি মতবিনিময় করেছেন। ভবিষ্যতেও এ সমস্যা দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করার ঘোষণা দেন। মেয়র বলেন, বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিদ্যমান সমস্যার ১০ শতাংশ তিনি সমাধান করেছেন। আগামী ৫ বছরে বাকি ৯০ শতাংশ সমস্যার সমাধান করে দিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। ভোটের ভয়ে আগের জনপ্রতিনিধিরা নগরীর ট্যাক্স মূল্যায়নের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসীর ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আপনিও সে ভয়ে এ উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন কিনাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমার কোন ভোটের ভয় নেই। আমি তো আগামীতে নির্বাচনই করব না। তবে পরে এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামীতে আবার নির্বাচন করার প্রত্যাশা থাকলে তিনি ভাল কাজগুলো করতে পারবেন না। এবারও তিনি নিজের ইচ্ছায় মেয়র হননি। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় প্রার্থী হয়েছেন। তাই তিনি কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চান। গত অর্থবছরে ডিএনসিসির ঘোষিত ২ হাজার ৪১ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বাজেটের মাত্র ৮০৩ কোটি টাকা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, গতবার ঘোষিত বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গত অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটে সরকারের পক্ষ থেকে ১ হাজার ১০৩ কোটি টাকা পাওয়ার প্রত্যাশা করা হয় কিন্তু পাওয়া গেছে ১৪০ কোটি টাকা। হোল্ডিং ট্যাক্স খাতে ৮৮২ কোটি টাকা আদায়ের কথা থাকলেও আদায় হয়েছে ৫২১ কোটি টাকা। তবে নতুন এ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বর্তমানের তুলনায় অনেক বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন। রাজধানীর সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে সংস্থার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরাই বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, বাজেটে তাদের জন্য একটি বিশেষ প্রণোদনা রাখা হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়রের প্রতিশ্রুতি ছিল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় রাজনৈতিক কোন বাধা আছে কিনাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কর্মকর্তারা খুব আন্তরিক হয়ে কাজ করছেন। আমি কেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব না? অতীতে কী হয়েছে তিনি জানেন না। তবে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভাল কাজ করার প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন। তাছাড়া এরই মধ্যে আমি কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি অবশ্যই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব। বাজেটের আয় সম্পর্কে মেয়র বলেন, নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্সবাবদ আয়ের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৪১০ কোটি, যা মোট রাজস্বে আয়ের ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মহাখালী ও আমিনবাজারে সদ্যনির্মিত বাজার থেকে সালামী বাবদ ১৬০ কোটি ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৪০ কোটি টাকা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর খাতে ১৩০ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করছি। সরকারী উন্নয়ন অনুদান হিসেবে ১৩৫ কোটি টাকা, বিশেষ অনুদান ১০০ কোটি টাকা এবং সরকারী ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প থেকে প্রায় ৪৭৬ কোটি টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া ডিএনসিসির রাজস্ব আয়ের খাতগুলোর মধ্যে বাজার ভাড়া থেকে ১৪ কোটি, রিক্সা লাইসেন্স থেকে ৫০ লাখ, প্রণোদনা কর থেকে ১ কোটি, ক্ষতিপূরণ (অকট্রয়) থেকে ৫ কোটি, বিজ্ঞাপন খাত থেকে ১৬ কোটি, বাস-ট্রাক ট্রার্মিনাল থেকে ১০ কোটি, গরুর হাট ইজারা থেকে ১৬ কোটি, ইজারা (টয়লেট, ঘাট) থেকে ৫০ লাখ, পুরাতন অকেজো মালামাল বিক্রি ৫০ লাখ, জবাইখানা ইজারা ২৫ লাখ, রাস্তা খনন ফি থেকে ৪৪ কোটি, যন্ত্রপাতি ভাড়া ২ কোটি, সিডিউল ও অন্যান্য ফরম বিক্রয় ১ কোটি, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ, কবরস্থান ও শ্মশানঘাট থেকে ৬ কোটি, বিদ্যুত বিল আদায় ১২ কোটি, বিবাহ, জন্ম ও মৃত্যু সনদ খাত থেকে ৩ কোটি, অন্যান্য ভাড়া থেকে ৩ কোটি এবং অন্যান্য থেকে ৪ কোটি টাকা আয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সমাপনী স্থিতি ধরা হয়েছে ৯৮ কোটি টাকা। আনিসুল হক বলেন, চলতি অর্থবছরে উন্নয়নমূলক খাতে মোট ব্যয় ১ হাজার ১৪৪ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের প্রায় ৭১ শতাংশ। বাজেটে ব্যয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ব্যয়ের খাতগুলোর মধ্যে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুত, পানি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং মশক নিধনসহ সেবামূলক কার্যক্রমের মান বৃদ্ধির খাতে ৩১০ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন খাতে ২৪৯ কোটি টাকা, বাজার নির্মাণসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা, কবরস্থান ও শ্মশানঘাট সংস্কার ও উন্নয়ন এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শেষকৃত্য স্থান নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতে ১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পরিবেশের উন্নয়নের জন্য বাজেট রাখা হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নের মাধ্যমে নগরিকদের বিনোদন সুবিধা খাতে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পরিবেশ উন্নয়ন খাতে ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক, সচিব আবু সাঈদ শেখ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ মমতাজ উদ্দিন, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ আহসান এবং ডিএনসিসির বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
×