ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্জয় সরকার

বাল্যবিয়ে রোধে প্রস্তাবনা

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৩০ জুলাই ২০১৫

বাল্যবিয়ে রোধে প্রস্তাবনা

বাল্যবিয়ে বন্ধের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাও সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছে। কিন্তু এরপরও বাল্যবিয়ে বন্ধ হচ্ছে না। বরং কোন কোন সমাজে এটি সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে- বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়- এ দেশের শতকরা ৬০ থেকে ৬৫ জন মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই। একই বয়সের শতকরা পাঁচ ভাগ ছেলে শিশুও বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। দরিদ্রতা, অজ্ঞতা, অশিক্ষা, লিঙ্গবৈষম্য, যৌতুক প্রথা এবং ধর্মের অপব্যাখ্যা ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বাল্যবিয়ের অন্যতম প্রধান একটি কারণ। অনেক অভিভাবক তার মেয়েকে কেন্দ্র করে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। হরহামেশাই মেয়েরা রাস্তাঘাটে ইভটিজিং ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। এছাড়া কিছু অভিভাবক মেয়েকে পরিবারের বাড়তি বোঝা হিসেবে মনে করেন। দরিদ্রতার কারণে অনেকে ভাবেন, বিয়ে দিলে মেয়েটি অন্তত খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবে। ‘যত বেশি বাড়বে বয়স, তত বেশি বাড়বে খরচ’, ‘বয়স বেশি মানেই যৌতুক বেশি’- এমন কিছু ধারণাও প্রচলিত আছে সমাজে। এসব নেতিবাচক ধারণাও বাল্যবিয়েকে আরও ত্বরান্বিত করে। যেসব মেয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পায় না অথবা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে সেসব মেয়েই সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের শিকার হয়। শুধু আইন প্রয়োগ করে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা যাবে নাÑ এটি সত্য। এজন্য বহুমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার, স্থানীয় সরকার, বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবকসহ সমাজের সব স্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। সমন্বিত কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন : ১. সব কন্যাশিশুদের মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা; ২. স্কুল থেকে ঝরেপড়া শিশুদের কারিগরি শিক্ষার আওতায় নেয়া; ৩. দরিদ্র পরিবারের কন্যাশিশুদের লেখাপড়ার জন্য বৃত্তি প্রদান; ৪. স্কুলে ভর্তির সময় অভিভাবকের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর গ্রহণ; ৫. রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, ৬. ভোটার তালিকা বা আদমশুমারির মতো সকল নাগরিকের জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা; ৭. মুসলিমদের মতো হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিয়েতেও বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন চালু করা এবং রেজিস্ট্রেশনে নাগরিকত্বের নম্বর (জন্ম সনদ/ভোটার নং) উল্লেখ করা; ৮. রেজিস্ট্রেশনবিহীন বিয়ের জন্য শাস্তি বা জরিমানা আরোপ; ৯. বিবাহ নিবন্ধনকারীদের (ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বা কাজী) কার্যক্রমের নিবিড় মনিটরিং করা; ১০. ভুয়া তথ্য দিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি ও জরিমানা প্রদান এবং বিদ্যমান আইনের সংশোধন; ১১. বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদফতর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সক্রিয় করা; ১২. পাঠ্যপুস্তকে বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে পাঠ অন্তর্ভুক্তি; ১৩. প্রত্যেক জেলায়/উপজেলায় বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদফতরের মাধ্যমে হটলাইন (মোবাইল নম্বর) চালু করা; ১৪. সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রভৃতি। নেত্রকোনা থেকে
×