ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-দ. আফ্রিকা টেস্ট

দুই দলেরই লক্ষ্য সিরিজ জয়

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৩০ জুলাই ২০১৫

দুই দলেরই লক্ষ্য সিরিজ জয়

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হচ্ছে আজ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া এ ম্যাচটির আগে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক হাশিম আমলা বলেছেন, ‘আমরা জেতার জন্যই খেলব।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম বলেছেন, ‘জেতার সম্ভাবনা আমাদেরও আছে।’ বোঝাই যাচ্ছে, দুই দলই চায় ঢাকা টেস্ট জিততে। প্রথম টেস্ট বৃষ্টির জন্য ড্র হওয়ায় যে দল ঢাকা টেস্ট জিতবে, তারাই টেস্ট সিরিজ জিতে নেবে। দুই দলেরই তাই সিরিজ জয়ের দিকেই দৃষ্টি রয়েছে। হাশিম আমলার দল এখন টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বরে আছে। বাংলাদেশ আছে ৯ নম্বরে। র‌্যাঙ্কিংই বলে দিচ্ছে দুই দলের মধ্যে শক্তির পার্থক্য কত। এরপরও বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসী। টি২০ সিরিজ হার হয়েছে। তাতে দমে যায়নি বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে হেরে যেখানে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে উল্টো দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিপদে ফেলেছে। এমনকি দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে জিতে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে। যখন টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ, বোঝাই গেছে ওয়ানডেতে যে দুর্দান্ত সময় যাচ্ছে, তার ছোয়া টেস্টেও লেগেছে। বৃষ্টির জন্য টেস্টটি ড্র হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছে। অসাধারণ নৈপুণ্যও দেখিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়েও প্রথম ইনিংসে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আবার প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের ২৪৮ রানের বেশি করতেও দেয়নি। বাংলাদেশও করেছে ৩২৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে যখন দক্ষিণ আফ্রিকা খেলতে নেমেছে ৬১ রান করার পর আর ব্যাট হাতেই নামতে পারেনি। তাতে ম্যাচও ড্র হয়েছে। টেস্ট সিরিজে এখন পর্যন্ত কোন দলই হারেনি। দ্বিতীয় টেস্টে তাই দুই দলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, সেই আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক যা বলেছেন, তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আভাসই মিলেছে। বলেছেন, ‘শেষ টেস্টটা সবদিক থেকেই আল্লাহর রহমতে খুব ভাল হয়েছে। বোলিং-ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং সবই ভাল হয়েছে। ওই ম্যাচ থেকে অনেক আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। তবে এখানে (মিরপুরে) উইকেট একটু ভিন্ন। চট্টগ্রামের তুলনায় এখানে বাউন্স বেশি। আমরা চলতি মৌসুমের শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে সবাই খুব ভাল খেলার জন্য মুখিয়ে আছে।’ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুশফিক জানান, ‘সম্ভব তো অবশ্যই। তবে সত্য হলো, আমরা টেস্টে এখনও খুব বেশি ধারাবাহিকভাবে খেলতে পারছি না। তবে সম্প্রতি ফর্মের কথা বললে, বাংলাদেশ খুব ভাল ক্রিকেট খেলছে। ওয়ানডে-টেস্ট; দুই ফরমেটেই। এটাই আমাদের জন্য আত্মবিশ্বাসের দারুণ জায়গা। বোলারদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, ভাল জায়গায় বোলিং করে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকেও অলআউট করা যায়। সেটাও খুব কম রানে; ২৪৮ রান টেস্টে খুবই ছোট স্কোর। সে দিক থেকে বলব যে, আত্মবিশ্বাস সবার মধ্যেই। আশা করি আত্মবিশ্বাসের প্রভাব যেন সামনের ম্যাচে পড়ে। এ সব কিছু মাথায় রেখেই ঢাকায় সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। যেহেতু এটা শেষ ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকাও জানে এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে খেলতে হয়। তারা টেস্টের এক নম্বর দল। ওদের বোলিংটা পরিকল্পনা মতোই হয়। আমরা যদি সবকিছু ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারি, তবে ফলাফলটা আমাদের পক্ষেও আসতে পারে। এমনকি সিরিজটাও আমাদের হতে পারে।’ তবে জয়-পরাজয়ের চেয়ে মুশফিক পাঁচদিন দাপটের সঙ্গে খেলতে চান। বলেছেন, ‘পাঁচদিন আমাদের ভাল খেলতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে, আমরা প্রথম দিনেই ম্যাচ জিতে যাব। এটা পাঁচদিনের খেলা। পুরো পাঁচদিনই আমাদের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে খেলতে হবে। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ও সুযোগও। আমরা যেহেতু এক নম্বর দলের বিপক্ষে খেলছি, সুযোগটা আসলে সেখানেই। তাদের বিপক্ষে জেতাটা অনেক বড় হবে। গত টেস্টে আমরা প্রতি সেশনেই দাপট দেখিয়ে খেলেছি। সে দিক থেকে বলব যে, লক্ষ্য তো অবশ্যই ভাল করা। আমাদের বোলিং ইউনিটের ক্ষমতা আছে ওদের ২০ উইকেট নেয়ার। সেটা করতে পারলে ফলাফলটা ভাল হতে পারে। ভাল ফলাফলটা আপনারা জানেন কী? বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ ১-০ ব্যবধানে সিরিজটি জিততেও পারে।’ মুশফিকের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাও সেই আশাই করছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা কী সেটা হতে দেবে? মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পেসারদের জন্য সুবিধা থাকে। তাতে করে ডেল স্টেইনরা তো আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারেন। এ ভরসাতেই মিরপুরে জয় তুলে নিতে চাইছে প্রোটিয়ারা। হাশিম আমলাই যেমন বলেছেন, ‘জয় ছাড়া বিকল্প কোন পথই দেখছি না।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘আমরা যখন বাংলাদেশে এসেছি, তখন আশা নিয়েই এসেছি। যেন অনেক ম্যাচ জিততে পারি। প্রথম টেস্ট বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। যদি শুরুটা ভাল করতে পারি তাহলে দ্বিতীয় টেস্টে জিতব।’ ওয়ানডে সিরিজ হারের পর বিপদেই আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্ট সিরিজ যে হারবে না, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। হার না হলেও যদি ড্র হয়, তাহলে টি২০ সিরিজ জয় ছাড়া আর কোন সিরিজ জয়ই দক্ষিণ আফ্রিকার ঝুলিতে থাকবে না। তাই দ্বিতীয় টেস্টটি সফরকারীদের জন্য ‘জিততেই হবে’ এমন ম্যাচ। কিন্তু আমলা তা মানতে রাজি নন। তার সাফ কথা, ‘টেস্ট ক্রিকেটে নকআউট বলে কোন কথা নেই। আমরা জিততেই এখানে (বাংলাদেশে) এসেছি। আশা করি শেষ ম্যাচটায় জিতবও।’ আমলা হুমকিই যেন দিয়ে দিলেন। ওয়ানডে সিরিজ হারের পর প্রথম টেস্ট জিততে না পারায় যে ক্রোধ প্রোটিয়াদের ভেতর তৈরি হয়েছে, তাই যেন আমলার কণ্ঠে ফুটে উঠছে। তাই বলে কী বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা ভয় পাবে কিংবা পিছপা হয়ে যাবে? একদমই না। উল্টো জয়ের আশাই প্রকাশ করেছেন। দুই দলই জয়ে দৃষ্টি দিচ্ছে। দেখা যাক এখন কোন দল জিতে। না আবার বৃষ্টিতে এ টেস্টও ভেসে যায়!
×