ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্থাপনা নির্মাণে নতুন বিধান

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৩১ জুলাই ২০১৫

স্থাপনা নির্মাণে নতুন বিধান

পাহাড়, জলাভূমি, সমভূমি ও কৃষিজমি রক্ষার ব্যাপারে রয়েছে আলাদা আইন। তবে সমন্বয় না থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি দেশের সামাজিক অবকাঠামো ও অর্থনীতির ওপর ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত কয়েক দশক ধরে দেশের সমভূমিসহ জলা, খানাখন্দ, পাহাড় ও কৃষিজমি বেদখল তো হচ্ছেই, পাশাপাশি এগুলোর ব্যবহারও হচ্ছে না সঠিকভাবে। দিনে দিনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপেই হোক আর অন্য প্রয়োজনেই হোক ভূমির পরিমাণ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। কমে যাচ্ছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি যে কৃষি সেটার জমি। এ বাস্তবতা অব্যাহত থাকলে এক সময় খাদ্য ঘাটতি তো দেখা দেবেই, পাশাপাশি বিপর্যস্ত হবে অর্থনীতি। দেশে একটা সঙ্কটময় মুহূর্ত আসবে সেই আশঙ্কা দেখা দিতে পারে কিছু মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকা-ের জন্য। অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা, বহুতল ভবন নির্মিত হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে। নিকট অতীতের স্মরণকালের বিয়োগান্ত ও করুণ সাক্ষ্য দিচ্ছে সাভারের রানা প্লাজা। মাঝে মধ্যেই কমবেশি এ জাতীয় দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে স্বজনরা হারাচ্ছেন নিকটজন, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সম্পদ। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়ই এমন অপরিকল্পিত বহুতল ভবন, স্থাপনা বা অবকাঠামো গড়ে উঠছে চোখের সামনেই। আবার পাহাড়ী এলাকায়ও নির্বিচারে পাহাড় ও পাহাড়ী গাছ কাটার ফলে সেখানেও ঘটছে সম্পদ ও প্রাণহানি। বাংলার আবহমানকালের গ্রামের চিত্র এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাটা ইতিবাচক বটে। তবে সেখানেও দিন দিন ভূমির পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে, ক্ষেত্র বিশেষে অবৈধভাবেও। দেশের বিদ্যমান আইন শহর ও গ্রামের ভূমির ধরন রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয়। এজন্য ভূমির ধরন পরিবর্তন রোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এই বাস্তবতা রোধের জন্য যে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে তাতে গ্রাম শহর নগর যেখানেই হোক না কেন কোন অবকাঠামো, স্থাপনা নির্মাণ করতে পূর্বানুমতির প্রয়োজন বাধ্যতামূলক। ‘নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ নামে থাকবে একটি সংস্থা। এর সহযোগিতায় থাকবে ‘জাতীয় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা উপদেষ্টা পরিষদ’। এদের কাছ থেকেই মূলত নিতে হবে অনুমতি। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা ইত্যাদি শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে। সেটা ৫ বছর সশ্রম কারাদ-সহ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আইনটি যে কঠোর তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আইনটি খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। আমরা আশা করব দ্রুত মন্ত্রিসভায় তা পাসের জন্য উপস্থাপিত হবে। এ উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। তবে যে কথাটি উল্লেখের দাবি রাখে তা হলোÑ দেশে অনেক ব্যাপারেই ভিন্ন ভিন্ন আইন আছে। সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ ও পালন অনেক সময় প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। এ আইনটি পাসের পর যথাযথ প্রয়োগই কাম্য। আইনটির যেন অশুভ প্রয়োগ না করে বা প্রয়োগকারীদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।
×