ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আলোকচিত্রে জননায়ক তাজউদ্দীন আহমদের বর্ণাঢ্য জীবন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৩১ জুলাই ২০১৫

আলোকচিত্রে জননায়ক তাজউদ্দীন আহমদের বর্ণাঢ্য জীবন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক একটি ছবির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এদেশের সংগ্রামী ইতিহাস। আর সেই খরস্রোতা ইতিহাসের অনন্য এক চরিত্র তাজউদ্দীন আহমদ ধরা দিয়েছেন খ- খ- অসংখ্য ফ্রেমে। তেমন একটি ছবিতে একাত্তরের ডিসেম্বরে ভারতের সংবাদমাধ্যম আকাশবাণীর এক সাংবাদিক সাক্ষাতকার নিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের। সাক্ষাতকারের একপর্যায়ে পাকবাহিনীর হাতে বন্দী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করে ঝরছে তাজউদ্দীনের চোখের জল। ইতিহাসের স্মৃতি জাগানিয়া এমন ২২০টি ছবি এখন শোভা পাচ্ছে ধানম-ির গ্যালারি টোয়েন্টিওয়ানে। আর প্রতিটি ছবিটিতে ফ্রেমবন্দী হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের ইতিহাসের অনন্য চরিত্র তাজউদ্দীন আহমদ। সেই ছবিগুলো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে অসাধারণ এক দেশপ্রেমিকের কীর্তিগাঁথা। ক্যামেরার আলো-ছায়ায় দৃশ্যমান হয়েছে একাত্তরে পাকবাহিনীর হাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের কা-ারি হয়ে ওঠা মহান এই জননেতার কর্মতৎপরতা। উঠে এসেছে বঙ্গতাজের নয় মাস অপরিসীম পরিশ্রম ও অসীম সাহসে রণাঙ্গন পরিচালনার দায়িত্ব পালনের নানা দৃশ্যপট। ছবিগুলোই যেন বলে দিচ্ছে দেশপ্রেম, সততা ও মেধার মেলবন্ধনে বাঙালীর স্বপ্নের রাষ্ট্র বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কাছ থেকে কেমন করে ছিনিয়ে নেন মহান এই জননায়ক। গত ২৩ জুলাই ছিল এই মহান নেতার ৯০তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে ধানম-ির এই প্রদর্শনালয়টিতে শুরু হয়েছে বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ইতিহাস আশ্রয়ী আলোকচিত্রগুলোয় দেখা মিলেছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা থেকে শুরু করে ছেষট্টির ছয় দফার অন্যতম রূপকার কিংবা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উদ্দীপ্ত নেতা তাজউদ্দীকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্যালারি টোয়েন্টিওয়ানে প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। উপস্থিত ছিলেন গ্যালারির পরিচালক শামীম সুব্রানা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা তাজউদ্দীনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ পর্বে অন্যদের সঙ্গে অংশ নেন কর্নেল (অব) আবু ওসমান। উদ্বোধনী বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, এই প্রদর্শনীর ছবিগুলোয় ধরা দিয়েছে এদেশের জন্মের ইতিহাসের অনেকখানি অংশ। তাজউদ্দীন আহমদের জন্মবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলির এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে এদেশের সংগ্রামের ইতিহাস। একাত্তরে তাজউদ্দীনের বর্ণময় ভূমিকা উঠে এসেছে ছবির মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন তাজউদ্দীন আহমদ। সব সময় রুখে দাঁড়িয়েছেন উৎপীড়নের বিরুদ্ধে। ১৯৫১ সালে তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে। আমি তখন যুবলীগের সামান্য এক কর্মী আর তিনি এক বড় নেতা। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আমাদের এই সম্পর্কটি অটুট ছিল। অসাধারণ এক মানুষ ছিলেন তাজউদ্দীন। আমৃত্যু কাজ করে গেছেন দেশ ও জাতির কল্যাণে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি নীতির প্রশ্নে রাজনীতি করেছেন। এখন আর এমনটা দেখা যায় না। প্রদর্শনীর আলোকচিত্রগুলোতে উঠে এসেছে মুজিবনগর সরকার ও মহান মুক্তিযুদ্ধের নানা দুর্লভ মুহূর্ত। প্রতিটি ছবিই যেন বলে যায় ইতিহাসের এক মহান নাবিক ও তাঁর সময়ের যোদ্ধাদের কথা। নতুন করে চোখের সামনে হাজির হয় পুরনো দিনের সংগ্রামের ইতিহাস। সহজেই দর্শনার্থীরা ফিরে যান অতীতের আয়নায়। নতুন প্রজন্মের কাছে বইয়ের পাতার বাইরে দৃশ্যমান হয় বাঙালীর অহঙ্কার মুক্তিযুদ্ধ, সত্তরের সাধারণ নির্বাচন কিংবা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দৃশ্যকল্প। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পাওয়া ছবির মধ্যে আছে একাত্তরে শত্রুমুক্ত হওয়া যশোরের মুক্তাঞ্চলে তাজউদ্দীন আহমদের দীপ্ত ভঙ্গিতে বক্তৃতার দৃশ্য। আছে জননেতার রণাঙ্গন পরিদর্শনের ছবি। পরম মমতায় একাত্তরের এই নেতা বুড়িমারী সীমান্তে আহত এক মুক্তিযোদ্ধার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিচ্ছেনÑঠাঁই পেয়েছে এমন মমতমাময় আলোকচিত্র। একাত্তরের এপ্রিলে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে গঠিত মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন সংগ্রামী জনতার মাঝে দাঁড়িয়ে সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করছেন। আরেক ছবিতে সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন এই অবিসংবাদিত নেতা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তির পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফ্রেমবন্দী হয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযাত্রী তাজউদ্দীন। আছে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় এক জনসভায় উদ্দীপ্ত ভঙ্গিতে তাজউদ্দীনের বক্তৃতা দেয়ার দৃশ্য। ১৯৬৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের আগে পরিবারের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন জননেতা। তাঁর কোলে স্নেহের বন্ধনে আশ্রয় নিয়েছে ছেলে সোহেল তাজে। পাশে অবস্থান করছেন সহধর্মিণী জোহরা তাজউদ্দীন। সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে তিন মেয়ে রিমি, রিপি ও মিমি। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। সেই সূত্রে জাতির জনকের প্রতি তাঁর হৃদয়ের গভীর ভালবাসার প্রমাণ মেলে এক ছবিতে। একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর ভারতের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি মেলার পর আকাশবাণীর এক সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে তাঁর চোখের কোণ গড়িয়ে ঝরছে অশ্রুজল। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে তাঁকে বরণ করে নিতে ফুল হাতে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে। পাশের ছবিতেই বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরে দুই নেতার আনন্দের অশ্রুজলে হৃদয়স্পর্শী ভালবাসার প্রকাশ। আছে স্বাধীন দেশে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতির জনকের সঙ্গে তাজউদ্দীনের একান্ত আলাপচারিতার দৃশ্য। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে রশিদ তালুকদার, আফতাব আহমেদ, মঞ্জুরুল আলম বেগ গোলাম মাওলা, জহিরুল হক, পাভেল রহমানসহ দেশ-বিদেশের আলোকচিত্রীদের ফ্রেমবন্দী অনবদ্য সব ছবি। রাঢ়াঙ নাটকের ১৫০তম প্রদর্শনীর উৎসব ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা চত্বর সজ্জিত সাঁওতাল সংস্কৃতির নানা উপকরণ। তীর-ধনুক ও আদিবাসী জীবনের নানা অনুষঙ্গ দিয়ে সাজানো হয়েছে জাতীয় নাট্যশালা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হলো নাট্যদল আরণ্যক আয়োজিত তিন দিনব্যাপী রাঢ়াঙ উৎসব। নাটকটির ১৫০তম প্রদর্শনী উপলক্ষে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উৎসবের উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, রাঢ়াঙ শব্দটি শুনে আমার তেভাগা আন্দোলনের কথা মনে পড়ছে। তখন রাজশাহীর সাঁওতাল পল্লীতে ঢোল ও মাদল বাজিয়ে লড়াইয়ের জন্য সাঁওতালরা জড়ো হতো। রংপুরে তিরিশ হাজার আদিবাসী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আদিবাসীদের আদিবাসী বলে আলাদা করে দেখা যাবে না, তাদের পূর্ণ সাংবিধানিক অধিকার দিতে হবে। চিত্রশালায় কবিকন্ঠে কবিতাপাঠ ও সঙ্গীতানুষ্ঠান ॥ বৃহস্পতিবার বিকেলে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ ও সঙ্গীনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে গান ও কবিতার সম্মিলিত এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঙ্গী পরিবেশন করেন ইয়াসমীন আলী। ‘শিলাইদহের জল-মাটিতে রবীন্দ্রনাথ’ ॥ সাংস্কৃতিক সংগঠন উজ্জয়ন এর আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হলো ‘শিলাইদহের জল-মাটিতে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস বাইশে শ্রাবণকে স্মরণ করেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনটি।
×