ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২৪৬ রান

শেষ বেলায় ব্যাটিং ধস বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৩১ জুলাই ২০১৫

শেষ বেলায় ব্যাটিং ধস বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ শুরুতেই খেলায় বৃষ্টি কোন বাধা তৈরি করতে না পারায় হাশিম আমলা, ডেল স্টেইনরা সে কী খুশি। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড তো ম্যাচ শুরুর আগে রোদোজ্জ্বল আকাশ দেখে টুইটই করে দিয়েছে, ‘তাপযুক্ত ঢাকাকে শুভ সকাল। দ্বিতীয় টেস্ট খেলার জন্য তৈরি আমরা।’ বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে বোঝা গেল কেন এতটা খুশি দক্ষিণ আফ্রিকানরা। বৃষ্টি না হলে যে ম্যাচে একটা ফল আসবেই। প্রথমদিন শেষে বাংলাদেশ ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করায় দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেই যে আপাতত সেই ফল ঝুঁকে আছে। শেষ বেলায় এসে যে বাংলাদেশের ব্যাটিং ধসের সূচনা হয়েছে, সেখানেই প্রোটিয়াদের দিকে দিনের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। বৃষ্টি যেন না হয়, রোদ থাকে; সেই প্রার্থনা কী আর এমনিতেই করেছে প্রোটিয়ারা! এখন মুস্তাফিজুর রহমান ও জুবায়ের হোসেনকে নিয়ে ১৩ রানে ব্যাট হাতে থাকা নাসির হোসেন অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে পারলেই হয়। চট্টগ্রামে হওয়া প্রথম টেস্ট বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এখন সমতাই আছে। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া দ্বিতীয় টেস্টে যে দল জিতবে, তারাই টেস্ট সিরিজ জিতে নেবে। এ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটারদের দৃষ্টি দুটি দিকে ছিল। প্রথমটি, অবশ্যই জয়, জিতে সিরিজ জয়। দ্বিতীয়টি, ডেল স্টেইন যেন ৪০০ উইকেট পেয়ে যান। দ্বিতীয়টি পূরণ হয়ে গেছে। দিনের প্রথম উইকেট নেয়ার মধ্য দিয়ে, তামিম ইকবালকে আউট করতেই দক্ষিণ আফ্রিকা ও স্টেইনের এ স্বপ্ন পূরণ হয়ে যায়। বাকি থাকে জয়। যেটির অপেক্ষাই এখন করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিনে বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে তাই বোঝা যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটাররা এদিন কালো আর্মব্যান্ড পরে খেলতে নেমেছে। শ্রদ্ধেয় ক্লাইভ রাইসের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতাও পালন করেছে। কিন্তু দিন শেষে দেখা গেছে এ নীরবতা যেন প্রোটিয়াদের শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রেরণা এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের ইনিংস স্তব্ধ হয়ে থেকেছে। দুর্দান্ত সময় কাটছিল। একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডও মজবুত হতে থাকে। ৪ উইকেট হারিয়ে ২০০ রানও করে ফেলে বাংলাদেশ। দিনে ৯০ ওভার খেলা হয়। সেই হিসেবে দিনটি শেষ হতে আর ১৬ ওভার বাকি থাকে। মনে হচ্ছিল, দিনটি বাংলাদেশেরই হতে চলেছে। কিন্তু যেই দলীয় স্কোরবোর্ডে ২১৫ রান যুক্ত হলো, বিপত্তিও যেন ঘনিয়ে আসল। এলগার হাওয়ায় ভাসিয়ে বল করলেন। বলটি পিচে পড়ে খানিক বাউন্স হলো। মুশফিক ব্যাট দিয়ে সেই বল ঠেকাতে গেলেন। টার্ন করে বলটি মুশফিকের ব্যাটে চুমু দিয়ে উইকেটরক্ষক ভিলাসের হাতে জমা হলো। সঙ্গে সঙ্গে আপীল করলেন এলগার ও ভিলাস। আম্পায়ারও আউটের সিদ্ধান্ত দিলেন। কিন্তু ৬৫ রান করা মুশফিকের কাছে মনে হলো আউট না। তাই রিভিউ নিলেন। অনেকক্ষণ থার্ড আম্পায়ার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আউট সত্যিই হয়েছে কিনা ‘স্নিকো মিটার’ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন। শেষপর্যন্ত স্নিকো মিটারে দেখা গেল ব্যাটে হালকা স্পর্শ করেছে বল। এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও মুশফিককে সাজঘরে ফিরতেই হলো। আম্পায়ার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আউটের। যদি আম্পায়ার আউট না দিতেন, দক্ষিণ আফ্রিকা রিভিউ নিত; তাহলে এ দ্বিধাযুক্ত আউটটি হয় তো থার্ড আম্পায়ার দিতেন না। যেহেতু মাঠের আম্পায়ারই আউটের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তাই ‘বেনিফিট অব ডাউট’ ব্যাটসম্যানের পক্ষে গেল না। মুশফিকের এ আউট যেন দিনটিতে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ থেকেও ছিটকে ফেলল। মুশফিক সাজঘরে ফেরার পর লিটন কুমার দাস (৩) এসে আউট হয়ে গেলে শেষ বেলায় ধসের মধ্যেই পড়ে গেল বাংলাদেশ। অথচ মুশফিকের আউটের আগ পর্যন্ত দিনটির নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই ছিল। যদিও দলীয় ১২ রানেই তামিমকে (৬) আউট করে দিয়েছিলেন স্টেইন। তাতে করে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ৪০০ উইকেট নেয়ার মাইলফলকও স্পর্শ করেন। কম ম্যাচ খেলে সবার আগে ৪০০ উইকেট নেয়ার রেকর্ডও গড়েন। কিন্তু এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হক মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে উইকেটে সেটও হয়ে যান। এরই মধ্যে সেই পুরনো চিত্রই চোখে পড়ে। উইকেটে সেট হওয়ার পর আউট হওয়ার সেই চিত্র থেকে রক্ষা মিলেনি। ইমরুল-মুমিনুল মিলে দলকে ৮১ রানে নিয়ে যান। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৯ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। মনে করা হচ্ছিল, মধ্যাহ্ন বিরতি শেষ হয়েছে। এবার দ্বিতীয় সেশনও খেলে দেবেন। অন্তত দলের স্কোরবোর্ডে দুইজন মিলে ১০০ রান তো জমা করবেন। কিন্তু ৬৯ রানেই মুমিনুল হককে (৪০) আউট করে দেন জেপি ডুমিনি। এরপর যখন আবার বল করতে এসে ইমরুল কায়েসকেও (৩০) সাজঘরে ফেরান ডুমিনি, তখন বাংলাদেশের ইনিংসে কম্পন ধরে যায়। সেখান থেকে আবার হাল ধরেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিক। দুই ‘ভায়রা’ মিলে দলকে ১৫০ রানে নিয়ে যান। ১৮০ রানও স্কোরবোর্ডে যুক্ত হয়। দুইজন মিলে ৯৪ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। বড় ‘ভায়রা’ মাহমুদুল্লাহ দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ৬৭ রানের ইনিংসও খেলেছেন। কিন্তু ছোট্ট ‘ভায়রা’ মুশফিক ছন্দে নেই। টেস্ট, ওয়ানডে মিলিয়ে সর্বশেষ ৮ ম্যাচে নেই কোন অর্ধশতক! যাকে ‘রান মেশিন’ আখ্যা দিয়ে ফেলেছেন মাশরাফি, সেই মেশিন থেকে ইদানিং আর গুলি (রান) বের হচ্ছে না। অবশেষে মুশফিক রান পেলেন। রান পেতে ভাগ্যও লাগে। সেই ভাগ্যও এদিন মুশফিকের ছিল। তা না হলে ১০ রানের সময় স্টেইনের বল স্টাম্পে লাগার পরও কেন বেল পড়বে না! সেই ভাগ্যে মুশফিক অর্ধশতকও করে ফেললেন। কিন্তু দলের ১৮০ রানের সময় মাহমুদুল্লাহ ৩৫ রান করে স্টেইনের বলেই আউট হলেন। এরপর মুশফিক-সাকিব মিলে খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া দলকে আবারও টেনে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। এবার মুশফিকই আউট হয়ে যান। তাতে করে দলও বিপাকে পড়ে যায়। প্রথমদিনেই অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায়। নাসির হোসেনকে এ টেস্টে একাদশে রাখা হয়। তাতে করে আট ব্যাটসম্যান খেলে। কাজ কী সে রকম হলো? সাকিব, লিটন, নাসির ব্যাটিংয়ে থাকার পরও ছন্দ পতন বজায় থাকল। মুশফিকের আউটের পর ৫ রান যোগ হতেই লিটন আউট হন। দলের ২৪৫ রানের সময় মরকেলের বল বুঝতে না পেরে সাকিবও (৩৫) সাজঘরের পথ ধরেন। ১ রান যোগ হতেই মোহাম্মদ শহীদ (১) অহেতুক শট খেলতে গিয়ে স্টেইনের বলে বোল্ড হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে আম্পায়ারও দিন শেষ হওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। আকাশে মেঘের কোন ঘনঘটা নেই। পরিষ্কার আকাশ। চাইলেই আরও খেলানো যেত। কিন্তু বাংলাদেশের ৮ উইকেট পতনের সঙ্গে সঙ্গে দিনের ১১ বল বাকি থাকতে শেষ হয়ে যায় টেস্টের প্রথম দিন। সেই দিনটিতে শেষবেলায় এসে বাংলাদেশের ইনিংসে ধসের সূচনাও হয়।
×