ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১ আগস্ট ২০১৫

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ “হে মহান, মহাবীর/ গর্ব তুমি বাঙালি জাতির/ তুমিই তো জাতির পিতা/ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।/ তুমি রবে ততদিন/ বাঙালি জাতির হৃদয়ে/ যতদিন তোমার অর্জিত বাংলার পতাকার/ সেই লাল রক্তিম সূর্য উদ্দীপ্ত হবে/ বাংলার পূর্ব আকাশে।” “শেষ হোক তাদের বেঁচে থাকার দিন/ যারা অবেলায় জাতিকে করেছে পিতৃহীন।” বাঙালীর জীবনে আগস্ট মানেই শোকের মাস, বেদনার মাস। বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালী জাতির ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা শোকাবহ আগস্ট। আজ শনিবার আগস্টের প্রথম দিন। শোকের মাসে প্রত্যয় ও শপথে শোককে শক্তিতে পরিণত করার অভয়মন্ত্রে আবার উদ্দীপিত হবে বাঙালী জাতি। দেখতে দেখতে জাতির পিতা হত্যার কালো অধ্যায়ের ৪০ বছর পূর্তি হলো। তাই এবার মাসব্যাপী নয়, ৪০ দিনব্যাপী কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বীর বাঙালীর ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে এ মাসেই। ইতিহাসের দীর্ঘপথ পেরিয়ে বাঙালী জাতি পিতৃ হন্তারকের বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলেও আমাদের প্রতিটি শিরা, উপশিরা ও ধমনিতে তীব্র ঘৃণার উদ্রেক করে এ মাস। ইতিহাসে হয়ত এ মাসে অনেক বিজয়ের কাহিনী লেখা আছে। কিন্তু বিজয়ের সেসব কাহিনী রক্তের স্রোতধারায় মিশেছে আগস্টে এসে। এ মাস নতুন করে ভাবতে শেখায়। এ মাস প্রতিশোধের চেতনায় শানিত করে সবাইকে। ১৯৭৫ সালের এই মাসেই বাঙালী হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৫ আগস্ট কালরাতে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি একাত্তরের পরাজিত ঘৃণ্য নরপশুরা; একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে। জঘন্যতম এই হত্যাকা- থেকে বাঁচতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। পরাস্ত পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের ষড়যন্ত্রের নৃশংস শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার তথা মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনা। এই শোকের মাসেই বাঙালীর স্বাধীনতার স্থপতির বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল স্বাধীন শ্যামল বাংলার মাটি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ত্যাগ, দূরদর্শিতা এবং অকুতোভয় আপোসহীন নেতৃত্বে দেশ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল। বাঙালী জাতি পেয়েছিল হাজার বছরের আকাক্সিক্ষত প্রিয় স্বাধীনতা, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন মানচিত্র। বজ্রকণ্ঠে তিনি ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে রক্তনদী পেরিয়ে অর্জিত হয়েছিল মহার্ঘ স্বাধীনতা। যে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে বন্দী রেখেও স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাঁকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। জাতির পিতাকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি ৪০টি বছর বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। তাই শোকার্ত বাঙালী জাতি আগস্ট মাসজুড়ে গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবেন বাঙালী জাতির এই মহানায়ককে। শুক্রবার দিবাগত রাতের প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে আওয়ামী লীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আলোক শিখা প্রজ্বলন, আলোর মিছিল ও শপথ গ্রহণের মাধ্যমে শোকের মাস আগস্টের ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচী শুরু হয়। এছাড়া ছাত্রলীগ আজ বুধবার সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় সকল কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করবে। শোকাবহ পরিবেশে ৪০ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অজস্র সংগঠন। আজ শনিবার দুপুরে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংগঠনের সদস্য, উপদেষ্টাম-লী, মন্ত্রিপরিষদসহ সব পর্যায়ের নেতারা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে কর্মসূচী শুরু করা হবে। বিকেলে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের গৃহীত কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল পৌনে সাতটায় ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও গার্ড অব অনার প্রদান, সাড়ে সাতটায় বনানী কবরস্থানে দোয়া, মোনাজাত, ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিল, সোয়া দশটায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরস্থানে দোয়া ও ফাতেহা পাঠ, বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত, মন্দিরে মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা, বাদ আছর অসচ্ছল-দুস্থ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধু ভবনে মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। ১৬ আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আজ শনিবার থেকে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪০ দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী, ভাতৃপ্রতীম ও সমমনা সংগঠনগুলো ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে জাতির পিতাকে স্মরণ করবে। আজ আগস্টের প্রথম দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন।
×