ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোথাও অপসারণ হলেও ক’দিনের মধ্যে তা ফের ঝুলে যায়

আলোচনা আর সরানোর সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও তারের জঞ্জাল ঝুলেই থাকে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১ আগস্ট ২০১৫

আলোচনা আর সরানোর সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও তারের জঞ্জাল ঝুলেই থাকে

রশিদ মামুন ॥ আলোচনা হয় সরানোর সিদ্ধান্ত হয় কিন্তু রাজধানীর তারের জঞ্জালে রাস্তায় ঝুলেই থাকে। আবার কোন এলাকার ঝুলন্ত তার অপসারণের কয়েক দিনের মধ্যে আবার তা ঝুলে যায়। বিদ্যুত বিতরণ অবকাঠামো থেকে অপসারণে বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে কমিটি গঠন করা হলেও গত এক বছরে কিছুই করতে পারেনি ওই কমিটি। এখন ওই কমিটির কার্যক্রম তদারকি করতে ফের কমিটি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজধানীর ঝুলন্ত তার অপসারণ নিয়ে বিদ্যুত বিভাগের শীর্ষ ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও তা মানতে চাইছে না রাজধানীর কেবল টিভি এবং ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর সৌন্দর্য বর্ধন এবং বিদ্যুত বিতরণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুলন্ত তার মাটির নিচে দিয়ে সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হয়। রাজধানীর কেবল টিভি এবং ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা বার বার চাপ প্রয়োগ করে ঝুলন্ত তার অপসারণের সময় বৃদ্ধি করে নিচ্ছে। মন্ত্রণালয় নিয়মিত বৈঠক করলেও বিতরণ সংস্থাকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়নি কোন সময়ই। এজন্য মাঝে মধ্যে কিছু তার অপসারণ করলেও কার্যত বেশিরভাগ এলাকার তার থেকেই যায়। যেসব এলাকার তার অপসারণ হয় তাও আবার অপসারণের দিন কয়েকের মধ্যেই পুনরায় ঝুলিয়ে দিতে দেখা যায়। বিদ্যুত বিভাগ বলছে বিটিআরসি, বিটিসিএল, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি), কেবল টিভি অপারেটর (কোয়াব) এসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের সঙ্গে বৈঠক করলে ঝুলন্ত তার অপসারণে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। কিন্তু মাঠে ঝুলন্ত তার অপসারণ করতে গেলেই কোন না কোন পক্ষ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরে এসব কার্যক্রম ভেস্তে যায়। বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, শুধু রাজধানীর সৌন্দর্য বিধান নয় বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার নিরাপত্তার জন্যও রাজধানী ঢাকার বিদ্যুত বিতরণ লাইনও মাটির নিচ দিয়ে করার পরিকল্পনা করছে সরকার। কিন্তু নিজেদের খুঁটিতে জড়িয়ে থাকা অন্যদের তারই সরাতে পারছে না তারা। গত বছর অক্টোবরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এক সপ্তাহের মধ্যেই রাজধানীর সব ঝুলন্ত তার এক সপ্তাহের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই সময় পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয় এক সপ্তাহের মধ্যে এসব তার অপসারণ না করলে রাজধানীর বিদ্যুত বিতরণকারী কোম্পানি নিজ দায়িত্বে এসব তার কেটে দেবে। কিন্তু পরবর্তীতে ওই প্রক্রিয়া আর সেভাবে কাজ করেনি। এখন এসে সম্প্রতি এক বৈঠকে বলা হচ্ছে যেসব জায়গায় তার অপসারণ করা হয়েছিল পরে আবার তা টাঙ্গানো হয়েছে। ওই বৈঠকে বলা হয় এখন যেসব জায়গায় তার অপসারণ করা হচ্ছে সেখানে যাতে আবার তার না বসানো হয় এজন্য আরও একটি নিরপেক্ষ কমিটি মনিটর করবে। ঝুলন্ত তার অপসারণ কমিটির আহ্বায়ক টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষে কর্মরত যুগ্ম সচিব ওই বৈঠকে জানান, প্রতি সপ্তাহে শুক্র এবং শনিবার ঝুলন্ত তার অপসারণের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তিনি ডেসকো এলাকার নিকেতন এবং ডিপিডিসি এলাকার মতিঝিলে ঝুলন্ত তার অপসারণ করা হয়েছে বলে ওই বৈঠকে জানান। বৈঠকে বিটিআরসির প্রতিনিধি জানান, রাজধানীর দুই বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি ঝুলন্ত তার অপসারণের পর আবার তা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। কোন অবস্থাতে যাতে কেবল অপারেটররা পুনরায় তার ঝোলাতে না পারে সে বিষয়ে মনিটরিং দরকার। তিনি জানান, আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১২৬ রাস্তায় একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তবে ডিপিডিসি এবং ডেসকো এলাকাতে যেসব ঝুলন্ত তার অপসারণ হচ্ছে তা আবার ঝোলানো হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করার জন্য বিদ্যুত বিভাগকে অনুরোধ করেন তিনি। বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তা জানান, ঝুলন্ত তার একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে ঢাকার সৌন্দর্য হানি ঘটাচ্ছে। বার বার নোটিস দিয়েও এ সংক্রান্ত ঘোষণার পরও যেসব সংস্থা ঝুলন্ত তার অপসারণ করেনি এবার তাদের তার অপসারণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই এ কার্যক্রম চালানো হবে। সরকার তার আগের মেয়াদে ২০১০ সালে রাজধানীর সব ঝুলন্ত তার ও বিদ্যুত বিতরণ লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়। কিছু কিছু এলাকায় তার অপসারণ করা হলেও বেশিরভাগই হয়নি। এই সময়ের মধ্যে বিতরণ সংস্থার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বার বার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এ অবস্থা বিদ্যুত বিভাগের পক্ষ থেকে সম্প্রতি নিরপেক্ষ কমিটি করে বিষয়টি তদারকির সিদ্ধান্ত হলো। বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ঝুলন্ত তার অপসারণের পর আবার তা ঝোলানো হচ্ছে বিষয়টি একেবারেই কাম্য নয়। এর একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। এ বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
×