ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুস্তাফিজকে দেখে শিখেছেন স্টেইন!

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ আগস্ট ২০১৫

মুস্তাফিজকে দেখে শিখেছেন স্টেইন!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার বাংলাদেশ সফরটাকে দীর্ঘ প্রায় ১১ বছরের ক্যারিয়ারে স্মরণীয় করে রাখবেন ডেল স্টেইন নিশ্চিতভাবেই। কারণ এবার এ সফরে দারুণ এক মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে তিনি ৪০০ উইকেটশিকারি হয়েছেন বিশ্বের ১৩তম বোলার হিসেবে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের শুরুতেই ওপেনার তামিম ইকবালের উইকেট শিকার করে এ কীর্তির অধিকারী হয়েছেন বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর বোলার স্টেইন। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে তাকে উইকেট পেতে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। এ পেসার চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ছিলেন উইকেটশূন্য। এরপর বাংলাদেশের অভিষেক হওয়া পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ের ভিডিও দেখে এবং তা বিশ্লেষণ করে প্রোটিয়ারা বুঝতে পেরেছেন উইকেট পেতে হলে কিভাবে বোলিং করতে হবে। দ্বিতীয় টেস্টে মুস্তাফিজের কৌশল অবলম্বন করেই প্রোটিয়া পেসাররা ভাল করতে পেরেছেন এবং স্টেইন নিজেও ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন। এমনটাই বললেন ৩২ বছর বয়সী এ প্রোটিয়া পেসার। বিস্ময়করভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছেন ১৯ বছর বয়সী তরুণ মুস্তাফিজ। ওয়ানডে অভিষেকে ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতীয় দলকে নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন সুইং ও ভয়ঙ্কর সব কাটার দিয়ে। ওই সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন মুস্তাফিজ। অবশেষে এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দলেও জায়গা করে নিলেন তিনি। তখন সবাই বলেছিলেন আসল পরীক্ষা হবে এ তরুণের টেস্ট ক্রিকেটে। বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের সমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে শুরুতে তেমন প্রভাব খাটাতে না পারলেও ঠিকই ঝলসে উঠলেন মুস্তাফিজ। চার বলে তিন উইকেট শিকার করে উঠে গেলেন রেকর্ডবুকে। শেষ পর্যন্ত ৩৭ রানে চার উইকেট নেন। এর মধ্যে অধিনায়ক হাশিম আমলাকে দারুণ এক অফকাটারে কুপোকাত করেছিলেন। তরুণ মুস্তাফিজ যা করেছিলেন সেটা করতে পারেননি বিশ্বসেরা টেস্ট বোলার স্টেইন, ৫ নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী ভারনন ফিল্যান্ডার ও ৯ নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী মরনে মরকেলরা। বাংলাদেশের ধীর গতির উইকেটে সফল হওয়ার জন্য কি করা প্রয়োজন সেটা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে তাই প্রোটিয়া শিবির। সে জন্য পর্যালোচনা করতে বেছে নিতে হয়েছে সফলতম পেসার মুস্তাফিজের বোলিংটাকেই। চট্টগ্রামে টেস্টে দু’দলের মধ্যে সবচেয়ে সফল বোলিং করেছেন তিনিই। এ বিষয়ে স্টেইন বলেন, ‘আমরা সত্যিই অনেক বেশি চেষ্টা করেছি গতিময় বোলিং করার। সেটাই মূল লক্ষ্য ছিল। কিন্তু তেমন কিছু করার মতো পরিস্থিতি সেখানে ছিল না। অথচ আমরা দেখলাম বাংলাদেশের যে তরুণ বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ তিনি কিভাবে তার কব্জির দারুণ ব্যবহার দেখালেন। চমৎকার বোলিং করেছেন এবং ওই পরিস্থিতিতেও বলে অনেক সুইং আদায় করলেন। আমরা সেসব থেকে কিছু বিষয় লিপিবদ্ধ করেছিলাম। বুঝতে পারলাম এটাই আমাদের জন্যও মূল শক্তি হতে পারে।’ চট্টগ্রামে শেষ পর্যন্ত তিন উইকেট শিকার করেছিলেন স্টেইন। কিন্তু বড় শিক্ষাটা সবেমাত্র টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখা মুস্তাফিজের বোলিং দেখেই পেয়েছেন। বাংলাদেশের উইকেটে কিভাবে বোলিং করতে হবে সেটাও বুঝতে পেরেছে প্রোটিয়া পেসাররা। বিশেষ করে চতুরতার সঙ্গে মুস্তাফিজ যে কাটার ব্যবহার করেছেন সেটাই বেশি টনক নড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে। আর সেই শিক্ষাটা দারুণ কার্যকর হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। মিরপুরে ঝড় তুলেছেন স্টেইন। শুরুতেই তামিমের উইকেট নিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোহাম্মদ শহীদের উইকেট তুলে নিয়েছেন। এ বিষয়ে স্টেইন বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছিলাম এটাই আমাদের জন্য মূল শক্তি হতে পারে। আমরা যদি রিভার্স সুইং আদায় করে নিতে পারি এবং বাতাসে বলটাকে ঘুরাতে পারি সেটা ফলপ্রসূ হবে।’ এ কারণেই মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে নতুন বল নেয়ার সুযোগ থাকলেও সেটা নেননি প্রোটিয়া অধিনায়ক হাশিম আমলা। পুরনো বল তুলে দিয়েছেন স্টেইনকে। ওয়ানডে ক্রিকেটে যেভাবে তিনি রিভার্স সুইং আদায় করেন সেটা বাদ দিয়ে এবার অন্যভাবে চেষ্টা চালিয়ে হয়েছেন সফল। নতুন বলে নিজের চিরাচরিত আক্রমণাত্মক মনোভাব একং গতি দিয়েই চাপ তৈরি করেছিলেন তিনি। এ বিষয়ে স্টেইন বলেন, ‘নতুন বল যথেষ্ট শক্ত এবং তেমন কোন সুইং পাওয়া যায় না। তবে তখন কিছু বেশি বাউন্স পাওয়া যায়, যে কোন ছেলেকে গতি দিয়ে ভড়কে দেয়া যায়। তবে পুরনো বলে সুইংয়ের প্রয়োজন অনেক।’
×