ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘সত্যিকারের নায়ক মেসি’

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১ আগস্ট ২০১৫

‘সত্যিকারের নায়ক মেসি’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বার্সিলোনার জার্সি গায়ে গৌরবময় সব কীর্তিই গড়েছেন লিওনেল মেসি। করেছেন ভুরি ভুরি গোল, জিতেছেন কাড়ি কাড়ি শিরোপা। অথচ জাতীয় দল আর্জেন্টিনার হয়ে ভা-ার একেবারে শূন্য। এমন দ্বৈত পারফর্মেন্সের কারণে মেসিকে সবসময়ই গিলতে হচ্ছে সমালোচনা। কোপা আমেরিকা কাপের ফাইনালে চিলির কাছে হারের পর সমালোচনার বারুদটা আরও বেড়েছে। ফুটবলবিশ্বে রীতিমতো তোলপাড় মেসির অমার্জনীয় ব্যর্থতা নিয়ে। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের মু-ুপাত করেছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা দিয়াগো ম্যারাডোনাও। কিন্তু মেসিকে নিয়ে এমন নেতিবাচক মন্তব্য মোটেও পছন্দ হচ্ছে না আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার জর্জে ভালডানোর। শুক্রবার সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, অযথাই মেসির কৃতিত্বকে খাটো করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার ভালডানোর মতে, মেসিকে বলির পাঁঠা বানানোর প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ব্যাপারটা মোটেও ভাল কোন কিছু নয়। ভালডানোর অভিযোগটা তাদের বিপক্ষে, যারা মেসিকে জাতীয় দল থেকে সরে যেতে বলছেন। যে খেলোয়াড়টিকে এত দিন ভক্তি করা হয়েছে, এখন তাকে গালমন্দ করার এই দ্বৈতনীতিই বিরক্তির উদ্রেক করেছে তাকে। এ প্রসঙ্গে ভালডানো বলেন, মানুষের জীবনে সব সময়ই নায়কের দরকার। আবার প্রয়োজন মতো সে কাউকে বলির পাঁঠাও বানিয়ে দেয়। মেসির কপালে দুটোই জুটেছে। সে এতদিন নায়ক হয়ে ছিল। এবার সে বলির পাঁঠা হতে যাচ্ছে। জিতলে তাকে পুজো করছি, হারলে বলির পাঁঠা বানাচ্ছি। পুরো বিষয়টিই অস্বাস্থ্যকর। ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর কোপা আমেরিকার ফাইনালেও হার মানে মেসির আর্জেন্টিনা। এ নিয়েই যত সমালোচনা। অথচ ফাইনালের আগে মেসির খেলা নিয়েই হয়েছে উন্মাদনা। ভালডানো সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, কোপা আমেরিকায় পাঁচ ম্যাচে সেই (মেসি) ম্যাচসেরা হয়েছিল। যখন একটা পুরো জাতি আপনার ওপর নির্ভর করে, তখন খেলাকে উপভোগ করা অসম্ভব। মেসি যখন খেলে ৪ কোটি মানুষ তার প্রতি পদক্ষেপ অনুসরণ করে। মেসির ফাইনালে ব্যর্থ হওয়া প্রসঙ্গে একটা উদাহরণও টেনেছেন ভালডানো। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ফ্রান্স বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে সবার চোখ রোনাল্ডোর (ব্রাজিলের কিংবদন্তি) ওপর ছিল। শত কোটি মানুষের মনোযোগ তাকে ভেতরে-ভেতরে শেষ করে দিয়েছিল। ফাইনালে সে কিভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল, সে উদাহরণ তো খুব বেশি আগের নয়। মেসিকে নিয়ে তাই যা বলা হচ্ছে তা মাত্রাতিরিক্ত। সে আসলে সত্যিকারের নায়ক। তবে ভালডানো যতই সাফাই গান না কেন মেসিকে নিয়ে সমালোচনা থামবে বলে মনে হয় না! ম্যারাডোনার সমালোচনা এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকছে। ম্যারাডোনা সবসময়ই মেসির প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন। সেই তিনিই কিনা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে কিছুদিন আগে বলেন, ক্লাবের হয়ে অপ্রতিরোধ্য থাকলেও জাতীয় দলে একটা বলও ঠিকমতো ধরতে পারেন না মেসি! আর্জেটাইন এক পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাতকারে ম্যারাডোনা বলেছিলেন, আমাদের একজন খেলোয়াড় আছে, যে কি না বিশ্বসেরা! সে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে চার গোল ঠিকই করে, কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে একটা বলও ঠিকমতো ধরতে পারে না। আরে মেসি, তুমি আর্জেন্টাইন না কি সুইডিশ? ম্যারাডোনা কিছুতেই বুঝতে পারেন না একটা খেলোয়াড়কে নিয়ে কেন এত মাতামাতি। তার মতে, মেসিকে এখন থেকে কম পাত্তা দিতে হবে। তাকে অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে একই কাতারে রাখতে হবে। জাতীয় দলে অন্যরা যেমন মেসিকেও তেমনই ভাবা উচিত। কেন অন্যদের মেসির চেয়ে পিছিয়ে রাখা হবে? দেশের হয়ে মেসির ব্যর্থতায় চরম নাখোশ ম্যারাডোনা। বিস্ফোরক মন্তব্যই তিনি করেন প্রিয় শিষ্যকে নিয়ে। আক্ষেপের সুরে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক বলেন, যারা বলেন যে মেসি দিনকে দিন উন্নতি করছে, তাদের নিয়ে আমি কোন কথা বলতে চাই না। যারা সমীক্ষা চালাচ্ছেন যে মেসি আর জাতীয় দলে খেলবে কি না, তাদের সম্পর্কেও আমার কোন বক্তব্য নেই। আমি কেবল একটা প্রশ্নই করতে চাই, আর কতদিন বিভিন্ন আসরে দ্বিতীয় হয়ে থাকতে হবে আমাদের। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারের এমন বিস্ফোরক কথার পর মেসির ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ হয়েছে ভালডানোর মন্তব্যে। তবে প্রশ্নটা কিন্তু ঠিকই থেকে যাচ্ছে। আর কতদিন আর্জেন্টিনার জার্সিতে দ্বিতীয় হয়ে থাকতে হবে মেসিকে?
×