ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি কর্পোরেশনের বাজেট

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২ আগস্ট ২০১৫

সিটি কর্পোরেশনের বাজেট

নবনির্বাচিত দুই মেয়র ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) চলতি বছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ঢাকা দক্ষিণের বাজেট ২ হাজার ৮৫ কোটি ৩৬ লাখ এবং ঢাকা উত্তরের বাজেট ১ হাজার ৬০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এ বাজেটের আকার বিশাল মনে হলেও কাজে নামার পর বোঝা যাবে প্রকৃত অবস্থা কতটা ব্যয় দাবি করে। এ বছরের অভিজ্ঞতা পরের বছর বাজেট তৈরি করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। বাজেট ঘোষণাকালে দুই মেয়র যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নগরবাসীর জন্য আগ্রহের। দুই মেয়রই বলেছেন, তারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না। আমরা আশা করতে পারি এ নিছক কথার কথা হবে না। বসবাসের জন্য অনুপযোগী ঢাকাকে বাঁচানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। যেভাবে ঢাকায় যেখানে সেখানে আকাশছোঁয়া অট্টালিকা তৈরি করা হয়েছে তা হয়ে উঠেছে ক্রমান্বয়ে আত্মঘাতী। ঢাকা শহরে বহু প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। এতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটেছে। মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছেÑ এমন উদাহরণ প্রায় নেই বললেই চলে। ঢাকা দেশের রাজধানী হওয়ার কারণে অন্য যে কোন শহর থেকে এটির নাগরিক সুবিধা ও সামগ্রিক অবস্থা উন্নততর হবে এমনটাই প্রত্যাশিত। তাই ঢাকার বাজেট তৈরির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার দুই অংশের বাজেটেই সর্বোচ্চ ব্যয়-বরাদ্দ করা হয়েছে সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য। এটিকে আমরা সুবিবেচনাপ্রসূতই বলব। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও অত্যন্ত ঘনবসতির কারণে ঢাকায় চলাচল ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কোন কৌশলেই যেন কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়রদ্বয় কী কার্যকর পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাবেন তা নিশ্চয়ই দেখার বিষয়। মেয়াদের প্রথম বছরই শতভাগ সফল হবেন তারাÑ এমন অযৌক্তিক প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। তবে প্রথম বছরেই যদি লক্ষ্যযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়, স্থবির নগরীতে প্রাণপ্রবাহ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেই সঙ্গে কর্মঘণ্টার অপব্যয়ের মাত্রা কমে আসে তাহলেই নগরবাসী স্বস্তি বোধ করবেন। আরেকটি কথা, ভাড়াটিয়ার ব্যয় বৃদ্ধির যুক্তি দিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এতে বাড়িওয়ালারা অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান থেকে বেঁচে গেলেন বটে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই সুবাদে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে বছরান্তে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার নিয়ম বদলাবে কি? ট্যাক্স না বাড়লে বছর বছর নিশ্চয়ই বাড়ি ভাড়া বাড়ার যুক্তি থাকতে পারে না। মেয়রদ্বয় যে দুটি নতুন বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তা হলো ‘সমন্বিত কর্তৃপক্ষ’ ও ‘এনফোর্সমেন্ট টিম’। নগর উন্নয়নের বহুবিধ কর্মকা-ের ভেতর সমন্বয় সাধন যে জরুরী তা নিয়ে দ্বিমত নেই। একই সঙ্গে অনিয়ম ও আইনবহির্ভূত কর্মকা-ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও সময়মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা প্রয়োজন। তাই মেয়রদ্বয় উত্থাপিত দুটি বিষয় বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। আমরা আশা করব, ঢাকা মহানগরের বাজেট ব্যয়ে স্বচ্ছতা, সুনীতি ও দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন ঘটবে। মহানগর উন্নয়নে মেয়রদ্বয় নিয়ম ও নীতিনিষ্ঠ থাকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন এবং নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার পরিচয় রাখবেন এমনটাই ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা।
×