বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বয়সের ভারে স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়াতে অনেকেরই বিচার ও দ- কার্যকর করা যাচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালের দ- ঘোষণা বা বিচারিক কার্যক্রম শেষ হবার পর আসামিদের স্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দেশের সিনিয়র আইনজীবী ও প্রসিকিউটরবৃন্দ বলেছেন, দীর্ঘ ৪০ বছর পর বিচার শুরু হয়েছে। অনেক আসামির স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে মামলার শুনানি থেকে শুরু করে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। দীর্ঘ ৪০ বছর পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। আসামিদের অনেকেরই বয়স ৬৫ থেকে ৬৯ বছর। আর বাংলাদেশের মানুষের গড় আযু ৭০ বছর ৪ মাস। সর্বশেষ ২৮ জুলাই বাগেরহাটের রাজাকার আব্দুল লতিফ মারা গেছেন। তার মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর মারা গেছেন গোলাম আযম ও আব্দুল আলীম। মামলা চলাকালীন মারা গেছেন একেএম ইউসুফ।
বিভিন্ন জায়গায় তদন্ত সংস্থা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত করে দেখতে পেয়েছে অভিযোগের সঙ্গে যাদের নাম এসেছে তারা কিছুদিন আগে মারা গেছেন। আবার যারা জীবিত আছেন তাদেরও বয়স অনেক হয়ে গেছে। বয়সের ভারে তারা ন্যুব্জ। মহেশখালীতে সবচেয়ে বেশি আসামির সন্ধান পাওয়া গেছে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন তদন্ত শেষে মহেশখালীতে ৭৫ জন রাজাকারের সন্ধান পেয়েছে। সেখানে ৬ জন রাজাকার গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এদের মধ্যে ৩২ জন রাজাকার মারা গেছে। বাদবাকি ৪৩ জন রাজাকারের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে তেমন বড় ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্মান্তরিতসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জামালপুর ,শরিয়তপুর , মৌলভীবাজার , নেত্রকোনা সহ ্প্রায় অর্ধডজন মামলার তদন্ত শরু করেছে তদন্ত সংস্থা। সহসা বেশ কিছু তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করবে তদন্ত সংস্থ্।া তদন্ত সংস্থা তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার পর প্রসিকিউশন তা যাচাই বাছাই করে ফরমাল চার্জ ট্রাইব্যুনালে জমা দিবেন।
আসামীদের স্বাভাবিক মৃত্যু প্রসঙ্গে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকন্ঠকে বলেছেন ,মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার দ্রুতই হচ্ছে। আসামীদের বয়স হয়েছে, সে কারণে মৃত্যুবরণ করলে কিছু করার নেই। অনেকে তো অল্প বয়সেও মারা যান। অন্যদিকে প্রসিকিউটর ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ বলেছেন ,এত বছর পর বিচার হচ্ছে স্বাভাবিক ভঅবেই আসামীদের মৃত’্য হবে এটাই স্বাভাবিক। এটা মেনে নিয়েই আমাদের অগ্রসর হতে হবে। উচিত যে হেতু বিচার শুরু করেছি এই প্রসেসটি এগিয়ে নেয়া। শুনানি থেকে শুরু করে নিষ্পত্তি দ- কার্যকর করা সবই দ্রুত করা প্রয়োজন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মেহেদী জনকণ্ঠকে বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল দ্রুত বিচার করছে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে আমার মতে প্রতি কার্যদিবসেই মামলা রাখা ভাল। আইন অনুসারে ন্যায় বিচারের স্বার্থে শুনানি দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেছেন, প্রসিকিউটর হিসেবে দ্রুত শুনানি মনে করি না। ন্যায় বিচার বিঘিœত হয় না, যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয় সে কারণে তা হলে দ্রুত শুনানি করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭০ বছর চার মাস হয়েছে। ২০০৯ সালে এটি ছিল ৬৭ বছর দুই মাস। পরিসংখ্যান ব্যুরোর খবরে এ তথ্য জানা গেছে।