ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভেজাল ও নকল ওষুধ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৪ আগস্ট ২০১৫

ভেজাল ও নকল ওষুধ

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন নামীদামী ফার্মেসিতে বিদেশী ভেজাল ও নকল ওষুধে সয়লাব। ক্যান্সারসহ নানা প্রাণঘাতী জটিল রোগে আক্রান্তরা এসব ওষুধের ওপর নির্ভরশীল। ডাক্তারের পরামর্শে রোগীরা উচ্চমূল্যের এসব ওষুধ কিনছেন। কিন্তু এত দাম দিয়ে যে ওষুধ কিনছেন তা আসল না নকল তা বোঝার কোন উপায় নেই। আমদানিকৃত এসব নকল ওষুধ রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। নকল এসব ওষুধ দেখতে আসলটার মতোই। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে বিভিন্ন স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর দিয়ে আসা নকল ওষুধের ২৩টি চালান আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। অনেক কম দামে নকল ওষুধ আনা হয় কিন্তু তা রোগীদের কাছে বিক্রি করা হয় আসলটার দামেই। চিকিৎসকরা বলছেন, নকল ওষুধের ক্ষতিকর রাসায়নিক শরীরে ঢুকলে যে রোগটি শরীরে আছে, তার সঙ্গে আরও নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাতে রোগীর জীবন আরও সঙ্কটের মধ্যে পড়তে পারে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে ভুয়া ডাক্তার, ভুয়া হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকের কথাও। এসব কারণে চিকিৎসা সেক্টরে বিরাজ করছে এক ধরনের অনিয়ম। এখন বিদেশী নকল ওষুধের বিস্তার স্বাস্থ্য খাতে মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। রোগ মুক্তির জন্য যে চিকিৎসা সেখানে এসব ওষুধ খেয়ে আরও রোগাক্রান্ত হওয়া কিংবা জীবনহানির কোন আশঙ্কা হোক তা কেউ প্রত্যাশা করে না। তাই রোগের প্রতিকার এবং প্রতিরোধের স্বার্থে সংশ্লিষ্টদের বিষয়গুলোর ওপর যথাযথ নজর দেয়া জরুরী। এই ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত তারাও যে এই বিষয়টি জানেন না তাও নয়। অথচ জেনে শুনেই এই অপরাধমূলক কাজটি করে যাচ্ছে তারা। চিকিৎসাসেবায় স্বচ্ছতা ও মান নিশ্চিত করতে নকল ওষুধ আমদানি ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে। দেশে ওষুধ শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ ওষুধ শিল্পই বেসরকারী বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, ওষুধ শিল্প বর্তমানে দেশের অন্যতম রফতানি খাত হিসেবেও চিহ্নিত। দেশে আন্তর্জাতিকমানের অনেক ওষুধ কারখানাও রয়েছে। অনেক জটিল ও দুরারোগ্য রোগের ওষুধও বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশী ওষুধের বাজার এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শে বিদেশী ওষুধের প্রচলন এদেশে রয়েছে। আমদানিকৃত দামী এসব ওষুধের নকল ও ভেজালের বিষয়টি সত্যি দুঃখজনক। ভেজাল বা নকল ওষুধ তৈরি বা আমদানি করা অপরাধ, এটি মানুষ হত্যার শামিল অথচ এই কাজটিই হচ্ছে অহরহ। রোগমুক্তির জন্য ওষুধের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি গুরুত্ব দেয়া দরকার ভুয়া চিকিৎসক ও অপচিকিৎসার বিষয়টিতেও। এই বিষয়গুলো জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময় এসব অপরাধ বা কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয় কিন্তু আইনের দুর্বলতা এবং একটি সুনির্দিষ্ট ওষুধ নীতিমালা না থাকার কারণে তা রোধ করা যাচ্ছে না। বিদেশী ওষুধ আমদানির স্বচ্ছতা নির্ণয় এবং দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো যাতে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করে তা নিশ্চিত করা দরকার। ওষুধের দোকানে ড্রাগ লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা, লাইসেন্সবিহীন দোকানের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে জেলাভিত্তিক ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অফিস স্থাপন করা যেতে পারে। নিয়মিত তদারকি করা গেলে জনগণ মানসম্মত ওষুধ ও চিকিৎসা পাবে। এতে কমবে ভেজাল ও নকল ওষুধ বিক্রিও। ওষুধের গুণগতমান বজায় রাখার বিষয়টি তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এ ধরনের ভেজাল, নকল ও বিষাক্ত ওষুধ রোগীর জন্য খুবই বিপজ্জনকÑ এই বোধ সবার মাঝে জাগ্রত হলে নকল ওষুধ বিক্রি ও আমদানির প্রবণতা কমতে পারে।
×