ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে অনুমোদন

অবশেষে পূর্বাচলে হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৫ আগস্ট ২০১৫

অবশেষে পূর্বাচলে হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানীর আগারগাঁও এ হচ্ছে নতুন সচিবালয় তাই ভবিষ্যতে সেখানে আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা করা সম্ভব হবে না। এ কারণে পূর্বাচলে নির্মিত হবে স্থায়ী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র। এ প্রকল্পটিসহ ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ২ হাজার ৩৭৯ কোটি ৩১ লাখ, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৫৭ কোটি ১৯ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম প্রমুখ। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রটি স্থাপিত হলে পণ্য প্রস্তুতকারী ও রফতানিকারকরা তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন। ফলে বাণিজ্যের উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ বাড়বে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য একটি প্ল্যাটফরম স্থাপিত হবে। এতে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদার হবে। এসব দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, বাণিজ্যমেলা এখন যেখানে হয় সেখানে সচিবালয় হওয়ার কারণে আগামীতে সেখানে আর বাণিজ্যমেলা করা যাবে না। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ-চায় না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ, এর ব্যয় ৭৯৬ কোটি ১ লাখ টাকা। অগমেন্টেশন অব গ্যাস প্রোডাকশন আন্ডার ফাস্ট ট্র্যাক প্রোগ্রাম, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩০০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার জন্য বেলারুশ হতে মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, এর ব্যয় ৪২০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। জামালপুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন, ব্যয় ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। পীরগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন, ব্যয় ১০৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন, ব্যয় ১৯৫ কোটি টাকা। ভূগর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণের মাধ্যমে সেচ দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যয় ১৩৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলাধীন ফিলিপনগর, আবেদর ঘাট ও ইসলামপুর এলাকায় পদ্ম নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, ব্যয় ৮৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প,এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছে, দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর অবশেষে পূর্বাচলে হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র। এটি তৈরিতে অনুদান দিচ্ছে চীন সরকার। এর আগে তেজগাঁও পুরাতন বিমান বন্দরের খালি জায়গায় এটি তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হলেও সময় মতো জমি না পাওয়ায় সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। অবশেষে পূর্বাচলের নিউটাউন এলাকায় চার নম্বর সেক্টরের ৩১২ নম্বর রোডে ২০ একর জায়গা জুড়ে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নামের স্থায়ী এ বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, প্রতিটি ৯ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট ৮০৬টি বুথ সংবলিত ২টি বড় হলরুম নির্মাণ, ১৫০০ কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থাকরণ এবং সম্মেলন কক্ষ, প্রেস সেন্টার, সভাকক্ষ, বাণিজ্য তথ্য কেন্দ্র, অভ্যর্থনা কেন্দ্র, সার্ভিস রুম, সাবস্টেশন ইত্যাদিসহ আনুষঙ্গিক কাজ। অন্যদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোর বর্জ্য অপসারণের জন্য বেলারুশ থেকে কেনা হচ্ছে যন্ত্রপাতি। বেলারুশ সরকার বাংলাদেশকে দ্রব্য ঋণ (কমোডিটি লোন) হিসেবে এ অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ২৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেলারুশ সরকার দিচ্ছে ৩৩১ কোটি ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা এবং বাকি ৮৮ কোটি ৮০ লাখ ৭ হাজার টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। বেলারুশ থেকে যানবাহন ও যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে নিয়ে আসার পর দুই বছরের ওয়্যারেন্টি দেয়া হবে। এছাড়া ১১ বছর পর্যন্ত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পরিমিত মূল্যে উক্ত যানবাহন ও যন্ত্রপাতির যন্ত্রাংশ প্রদান করবে। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলারুশ সফরের সময় বেলারুশ হতে সহজ শর্তে দ্রব্য ঋণ (কমোডিটি লোন) গ্রহণের মাধ্যমে দ্রব্য আমদানির বিষয়ে ওই বছরের ৯ জুলাই একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন প্রভিশনস অব এক্সপোর্ট কমোডিটি ক্রেডিট শীর্ষক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির শর্তের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ বেলারুশ হতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার দ্রব্য (যান ও যন্ত্রপাতি) আমদানি করবে। এসব যন্ত্রপাতি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন ও পরিষ্কার, ড্রেন নির্মাণ, মেরামত ও পরিষ্কার, রাস্তা নির্মাণ ও মেরামত ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হবে। বর্তমানে যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতার জন্য এসব কাজে প্রতিবছর পৌরসভাগুলোকে প্রচুর পরিমাণে ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি আমদানি ও ব্যবহার করা হলে যে ভাড়া সাশ্রয় হবে এবং অবসর সময়ে ভাড়া প্রদান করে যে আয় হবে তা থেকেই ঋণের বার্ষিক কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
×