ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৬ আগস্ট ২০১৫

শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন

চঞ্চল মেহমুদ কাশেম ১৯৬০ দশকের কথা। সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষা দিয়েই আমাদের শিক্ষাজীবন শুরু। আমাদের শিক্ষাজীবনের ভিত্তিটাই ছিল প্রাইমারী স্কুল। স্যারের প্রতি ছিল আমাদের শুধু ভয় আর ভয়। পড়ায় ভাল ছাত্রছত্রীদের মধ্যে যেমন স্যারদের বাহবা পাবার আশায় চলত সামনের বেঞ্চিতে বসার প্রতিযোগিতা, তেমনই পড়ায় দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও ছিল বেত্রাঘাতের ভয়ে পিছনের বেঞ্চিতে বসার প্রবণতা। তাছাড়া, ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই রোল নম্বর কাউন্ট করা হতো। তাই পড়ায় দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের রোল নম্বরও থাকত পিছনে। সামনে বসার প্রতিযোগিতা থেকে তারা ইচ্ছে করেই বিরত থাকত। বলা চলে, তারা পিছনের সারিতে বসতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত। একদিনের ঘটনা। আমাদের বুড়া স্যার যখন পড়া না পাড়ার জন্য একজন একজন করে বেত্রাঘাত করছিলেন, তখন কেমন যেন একটা দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল! সিলিং ফ্যানের বাতাস দুর্গন্ধটা যেন সবার নাকের ডগায় ছড়িয়ে দিচ্ছিল। দুর্গন্ধটা ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। দুর্গন্ধ পেয়ে মেয়েরা নাকে ওড়না চেপে ধরে আছে কিন্তু লজ্জায় মুখ খুলছে না। আমরা ছেলেরাও মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছি। বুঝতেই পারছেন! বুড়া স্যারের নির্মম বেত্রাঘাতের ভয়ে, পিছনে বসা, পড়ায় দুর্বল ছাত্রটির কর্মকাবার হয়ে গেছে ক্লাস রুমেই। পরনের হাফপ্যান্টখানা পিছন দিক দিয়ে ভিজে জবজব হয়ে গেছে। সেদিনের সেই করুণদশা ও লজ্জার কারণে বহুদিন ছেলেটি আর স্কুলে আসেনি। বিশেষ করে, বেত্রাঘাতের ভয়ে প্রায়ই সে বুড়া স্যারের ক্লাস থেকে পালিয়ে যেত। সেই ছেলেটি পড়াশোনায় আর এগুতে পারেনি। ওই প্রাইমারী পর্যন্তই থেমে গেছে তার পড়াশোনা। এ ধরনের নিষ্ঠুরতায় অনেক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা থেকে অকালেই ঝরে যেত। ফলে, শিক্ষার হার বেশিদূর এগুতে পারত না। সেই সময়ে বেত্রাঘাতের মতো কঠিন শাস্তি, কান ধরে বেঞ্চির ওপর দাঁড় করানো, শিক্ষক কর্তৃক কানমলা, একপায়ে দাঁড় করানো, ডাস্টার দিয়ে মাথায় টাকমারা, দু’পায়ের নিচ দিয়ে হাত গলিয়ে, কান ধরে কোমর উঁচু করে রাখা, দুই আঙুলের মাঝখানে পেন্সিল দিয়ে চাপ দেয়া ইত্যাদি শারীরিক শাস্তির সম্মুখীন হওয়া ছিল আমাদের নিত্যদিনের আতঙ্ক। যে সব শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ, পাঠদানে আন্তরিক নন, তাঁরাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করতেন। এজন্য অনেক ছাত্রছাত্রীকে পড়ালেখা থেকে অকালেই ঝরে পড়তে হয়েছে। তুলনামূলকভাবে, আজকের দিনে পড়ালেখার গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। ক্লাসরুমে বেত নেয়া নিষিদ্ধ। জয়দেবপুর, গাজীপুর থেকে
×