ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের চিহ্নিত স্থানগুলোয় অবিলম্বে যৌথ অভিযান ;###;কৌশল নির্ধারণে ১২ আগস্ট ভারতীয় প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে ;###;অভিযোগের তীর সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের দিকে

জালমুদ্রা নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে শীঘ্রই শুরু ॥ কম্বিং অপারেশন

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৬ আগস্ট ২০১৫

জালমুদ্রা নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে শীঘ্রই শুরু ॥ কম্বিং অপারেশন

গাফফার খান চৌধুরী ॥ জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ও ভারতে কম্বিং অপারেশন শুরু হচ্ছে। নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশ ও ভারত এমন অপারেশন শুরু করছে। আর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের চিহ্নিত কয়েকটি জায়গায় দুই দেশ যৌথভাবে অপারেশন শুরু করতে যাচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তির অংশ হিসেবে জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের কৌশল ঠিক করতে আগামী ১২ আগস্ট ভারতের একটি প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। কৌশল ঠিক করার পরেই শুরু হচ্ছে কম্বিং অপারেশন। বাংলাদেশ-ভারতের স্থল সীমান্তের পাঁচটি জায়গাকে জাল মুদ্রা পাচারের প্রধান ট্রানজিট রুট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পয়েন্টগুলোতে যৌথ অভিযান, স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন ও সিল করে দেয়ার বিষয়ে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ আলোচনা চলছে। গত ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। এ সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরমধ্যে ১৪ নম্বর চুক্তিটি হয় মাদক চোরাচালান ও জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে। মাদক পাচার অনেকাংশে কমে গেছে। তবে জাল মুদ্রার কারণে উদ্বিগ্ন দুই দেশই। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমানের সম্প্রতি খাগড়াগড় বিস্ফোরণে জেএমবির দুই সদস্য নিহত হয়। গ্রেফতার হয় দুই নারী। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বোমা তৈরির কারখানা স্থাপনের অর্থের উৎস জানতে তদন্ত শুরু করে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তদন্তে বেরিয়ে আসে জেএমবির অর্থের অন্যতম উৎস জাল মুদ্রা। বিশেষ করে জালরূপী। শুধু জেএমবি নয়, ভারতীয় মুজাহিদীনদেরও অর্থের অন্যতম উৎস জাল টাকা। এনআইএ’র বরাত দিয়ে ভারতের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে জাল রুপী ভারতে প্রবেশ করছে। এসব জাল রুপী ঢোকানোর সঙ্গে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি জড়িত। জেএমবি সদস্যরা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে জাল রুপী তৈরি করতে সক্ষম। যা সাধারণত ল্যাবরেটরিতেও ধরা পড়ে না। শুধু জেএমবি নয়, ভারতীয় মুজাহিদীনরাও নিখুঁতভাবে দীর্ঘ দিন ধরে জাল রুপী তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে। এসব জাল রুপী অনেক সময়ই দুই একবার পরীক্ষাতেও মুদ্রা শনাক্ত করার ল্যাবরেটরিতেও জাল বলে ধরা পড়ছে না। এছাড়া পাকিস্তানেও ভারতীয় জাল রুপী তৈরি হচ্ছে। যা অত্যন্ত নিখুঁত। পাকিস্তানে তৈরি অধিকাংশ জাল রুপীই বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত পথে ভারতে যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে জঙ্গীরা। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ছাড়াও অনেক জালরুপী ভারত-পাকিস্তান স্থল সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান ও ভারতীয় মুজাহিদীনদের মাধ্যমে ভারতে ঢোকে। ভারতে জাল রুপী প্রবেশ করানোর সঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের জঙ্গীরা জড়িত। পাকিস্তানের জাল মুদ্রার কারবারীরা ভারতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পরিকল্পিতভাবে জাল রুপী তৈরি করে তা সীমান্তপথে ভারতে প্রবেশ করায়। যেসব সীমান্ত দিয়ে জাল রুপী ভারতে প্রবেশ করে তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের মুরাদাবাদ ও মালদার ছাছানি অন্যতম। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সম্প্রতি ছাছানি থেকে প্রায় ১৫ লাখ ভারতীয় জাল রুপী উদ্ধার করে। গ্রেফতার হয় ভারতীয় মুজাহিদীনদের মধ্যে জাল মুদ্রা পাচারকারী ও তৈরিকারী চক্রের অন্যতম ইয়াসিন বকতাল। সম্প্রতি দক্ষিণ বেঙ্গল থেকেই গত বছর এক কোটির বেশি ভারতীয় জাল রুপী উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকৃত জাল রুপীগুলো খুবই নিখুঁতভাবে তৈরি। যা খালি চোখে কারও ধরার উপায় নেই। ভারতীয় মুজাহিদীনদের অর্থের অন্যতম উৎস জাল রুপী বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। ভারতের রাজস্ব মহাপরিচালকের গোয়েন্দা পরিদফতরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, জাল রুপী ভারতীয় অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। জাল রুপীর কারণে ভারতের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে। এর কারণে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র বাড়ছে। জাল মুদ্রার অধিকাংশই ব্যবহৃত হচ্ছে চোরাচালানের ক্ষেত্রে। চোরাচালানের পণ্য বেচাকেনার সূত্র ধরে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইউএই ও মালয়েশিয়া থেকে ভারতে জালরুপী প্রবেশ করছে। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারী সূত্রগুলো বলছে, সরকার আগাগোড়াই জাল মুদ্রা নির্মূলে কঠোর। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাসহ (এনএসআই) সকল গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি একযোগে কাজ করছে। হালনাগাদ জাল মুদ্রার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে সারাদেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অন্তত ২৪শ’ গ্রেফতার হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছরে অন্তত সাড়ে ৫শ’ দেশী-বিদেশী জাল মুদ্রা কারবারী গ্রেফতার হয়েছে। যারমধ্যে অন্তত সাড়ে ৪শ’ বিদেশী। এদের অধিকাংশই আফ্রিকান। উদ্ধার হয়েছে দেশী-বিদেশী বিপুল অঙ্কের জাল মুদ্রা এবং জাল মুদ্রা তৈরির সরঞ্জাম। জাল মুদ্রার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত আছে। জাল মুদ্রা কারবারীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে জানিয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত র‌্যাবের অভিযানে দেশী-বিদেশী ১৭শ’ জাল মুদ্রা কারবারী গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে সাড়ে ৬ কোটি জালটাকা ও সমপরিমাণ জালটাকা ছাপানোর সরঞ্জাম, ৫ কোটি জাল ভারতীয় রুপী, ৪ লাখ জাল ইউএস ডলারসহ বিভিন্ন দেশের জাল মুদ্রা। জাল মুদ্রা আইনে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবনের বিধান রয়েছে। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত থাকলে জাল মুদ্রার প্রভাব দিন দিন কমে যাবে। বাংলাদেশের ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ থেকে চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত জাল নোট সংক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মামলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯টি শাখার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে ইতোপূর্বে জালনোটের গোপন লেনদেন ধরাও পড়েছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪ উর্ধতন কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, জাল মুদ্রার কারবার ঠেকাতে নিয়মিত মনিটরিং চলছে। প্রতিটি ব্যাংকে এ সংক্রান্ত নোটিস জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে জাল মুদ্রা বিশেষ করে জালটাকা চেনার উপায় সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। মুদ্রা লেনদেনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাল মুদ্রা শনাক্তকরণ বুথ স্থাপন ছাড়াও নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় জাল মুদ্রা তৈরি এবং বাংলাদেশের সীমান্তকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে ভারতে জাল রুপী প্রবেশ করানো হতো বলে এক সময় ভারতের সংশ্লিষ্টদের ধারণা ছিল। সম্প্রতি ভারতের সংশ্লিষ্টরা সে ধারণা থেকে সরে এসেছেন বলেও জানান তিনি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই জাল মুদ্রা রয়েছে। তবে কোন দেশে কি পরিমাণ জাল মুদ্রা রয়েছে অদ্যাবধি তার কোন পরিসংখ্যান মেলেনি। যেসব পরিসংখ্যান বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার তরফ থেকে বলা হয়, তারও কোন ভিত্তি পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে এক দেশের মুদ্রা আরেক দেশে জাল হওয়া এবং জাল মুদ্রা তৈরি করে তা বিক্রি করার প্রবণতা বেশি। এরমধ্যে জাল মুদ্রার কারবারীদের মধ্যে জাল ইউএস ডলার তৈরি করে তা অন্যদেশে বিক্রি করার বিষয়টি বেশি লক্ষণীয়। বিশেষ করে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশী, ভারতীয় ও পাকিস্তানীদের মধ্যে এমন প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জাল মুদ্রার কারবারীদের বদ্ধমূল ধারণা, এক দেশের নাগরিক আরেক দেশের মুদ্রা চেনার উপায় সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। তারা এমন ধারণাকে পুঁজি করেই বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের জাল মুদ্রা তৈরি করে তা বাজারজাত করার চেষ্টা করে থাকে। এক্ষেত্রে ইউএস ডলার জাল করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। কারণ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমবেশি ডলার বেচাকেনা হয়। এটি অপেক্ষাকৃত সহজ। বিভিন্ন কারণের পাশাপাশি মানুষ লাভবান হওয়ার আশায় ডলার কিনে রাখেন। বিশেষ করে ২০১২ সালে রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়ি থেকে জাল ইউএস ডলার, ইউএস জাল ডলার তৈরির সরঞ্জাম, হেরোইন ও কোকেনসহ ১৯ আফ্রিকান, ওই বছরই ঢাকার গুলশানের লেকশোর হোটেল থেকে প্রায় ৭শ’ বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ১১ লাখ টাকা, প্রায় ২ লাখ টাকার সমপরিমাণ জাল ইউএস ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, মাদকদ্রব্য ও মাদ্রকদ্রব্য ব্যবহারের বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামসহ লিবিয়ার নাগরিক সামির আহম্মেদ ওমর ফর্ড, আমারা মাহমুদ আমারা ও মাবুর্ক ফর্ড সাইলেম, গত বছরের ৬ আগস্ট ২০ লাখ জালটাকা ও ১০ লাখ ভারতীয় জাল রুপী এবং বিপুল পরিমাণ জাল নোট তৈরির সরঞ্জামসহ ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের চায়না গলির ৩ নম্বর সড়কের ২২ নম্বর বাড়ি থেকে ৭ জন ও গত বছরের ১৮ অক্টোবর ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানাধীন আটিবাজারের টেবার গ্রামের একটি জাল মুদ্রা ছাপানোর কারখানা থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের জাল ইউএস ডলার, ভারতীয় জাল রুপী, জাল টাকা ও পাসপোর্ট, ভিসা, ভিসার জাল সিকিউরিটি স্ট্যাম্প এবং বীমা রেভিনিউ স্ট্যাম্প উদ্ধারসহ স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদেও এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের সূত্রগুলো বলছে, জাল টাকা ও জাল রুপী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চোরাচালানের মাধ্যমে পণ্য বেচাকেনার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জাল মুদ্রার মধ্যে বাংলাদেশে জাল টাকা, জাল রুপী ও জাল মার্কিন ডলার তৈরির প্রবণতা বেশি। এরসঙ্গে দেশী-বিদেশী চক্র জড়িত। সিআইডির একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদির সফরে জাল মুদ্রার বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তি মোতাবেক আগামী ১২ আগস্ট ভারতের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল কয়েক দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছে। সফরে দুই দেশের মধ্যে জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণে কৌশল ঠিক হবে। যদিও দীর্ঘ দিন ধরেই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। ভারতের তরফ থেকে জাল মুদ্রা বিশেষ করে ভারতীয় জাল রুপী ভারতে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের পাঁচ সীমান্ত পয়েন্টকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ভারতীয় জাল রুপী তৈরি হয়ে তা বাংলাদেশের যশোর, সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, শেরপুর ও কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকানো হয় বলে ভারতের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ পাঁচটি সীমান্ত পয়েন্ট ভারত সরকারের তরফ থেকে এক প্রকার সীল করে দেয়ারও প্রস্তাব রয়েছে। সিল বলতে সিলগালা বোঝানো হয়নি। এসব পয়েন্টে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীসহ (বিজিবি) সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীসহ (বিএসএফ) সে দেশটির সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে চব্বিশ ঘণ্টাই যৌথ টহল ও স্থায়ী চেকপোস্ট বসানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসানোর বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। এসব পয়েন্টে নির্দিষ্ট সময়ের পর অনেকটা কার্ফ্যু জারির কথাও আলোচিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিআইডি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম (সংঘবদ্ধ অপরাধ) নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী জনকণ্ঠকে বলেন, জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রতিটি ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একসঙ্গে কাজ করছে। জাল মুদ্রা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে জাল মুদ্রার বিষয়ে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ চলছে। জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের কৌশল ঠিক করা হচ্ছে। কৌশলপত্র ঠিক করার পরই দুই দেশেই জাল মুদ্রা উদ্ধার ও এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে যার যার দেশের তরফ থেকে কম্বিং অপারেশন শুরু হবে।
×