ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মামার বিরুদ্ধে ভাগ্নের মামলা, আটকে অভিযানে নেমেছে পুলিশ ॥ বংশালে শোকের ছায়া

পাওনা চাইতে গিয়ে ছোট ভাইয়ের হাতে মরতে হলো বোনকে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৬ আগস্ট ২০১৫

পাওনা চাইতে গিয়ে ছোট ভাইয়ের হাতে মরতে হলো বোনকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাওনা টাকা চাওয়ায় ছোটভাই ও তার সহযোগীদের নিয়ে হত্যা করল একমাত্র বোনকে। যে ভাইকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন সেই ভাইয়ের হাতেই খুন হলেন বোন। পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র বোন ছিলেন নিহত হাজী আসমা আক্তার। ব্যবসার জন্য আদরের ছোটভাইকে ধার দেয়া ১৫ লাখ টাকা চাইতে গিয়েই বেঘোরে মরতে হলো বোনকে। এমন ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শত শত মানুষ ভিড় করছেন রাজধানীর বংশালের বাঘদাশা লেনের বাড়িতে। পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মর্মান্তিক এমন ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না পাড়া-প্রতিবেশীরাও। তারা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বুধবার সকাল নয়টার দিকে রাজধানীর বংশাল থানাধীন বাঘদাশা লেনের ৪৩ নম্বর তিনতলা নিজ বাড়ির দোতলায় মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত হাজী আসমা আক্তার (৫০) ওই এলাকার হাজী জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী। নিহত আসমা আক্তার পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র বোন ছিলেন। তার পিতার নাম হায়দার আলী (মৃত)। এ ব্যাপারে বংশাল থানায় নিহতের ছেলে ফয়সাল মোহাম্মদ সুমন বাদী হয়ে তার মামা আকবর হোসেন ও পাশের মহল্লার বিপ্লব নামের একজনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে আরও দুইজনের কথা বলা হয়েছে। তবে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ঘটনার পর থেকে আসমার ছোটভাই আকবর হোসেন (৩৫) পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলার বাদী সুমন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা তিন ভাই, দুই বোন। বাবা ও আমরা ভাইরা ব্যবসায়ী। ঘটনার সময় গৃহকর্মী মাহি (১৬) ছাড়া দোতলার ফ্ল্যাটে কেউ ছিল না। বাবা ব্যবসার কাজে বাইরে ছিলেন। সকাল নয়টার দিকে ছোট মামা আকবর হোসেন তার তিন সহযোগীকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যান। চারজনের মধ্যে একজন বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর মামাসহ তিনজন উপরে যান। মামা মানুষ অজ্ঞান করার ওষুধ রুমালে মেখে সেই রুমাল মার নাক মুখে চেপে ধরেন। এ সময় অপর দুইজন মায়ের হাত-পা ধরে রাখে। এরপর বালিশ চাপা দিয়ে ও কিল ঘুষি দিয়ে মাকে হত্যা করা হয়। মাহি ঘটনা দেখে চিৎকার দিলে খুনীরা পালিয়ে যায়। হত্যাকা-ের কারণ হিসেবে সুমনের অভিযোগ, তাদের তিনটি মুরগির দোকান ছিল। সম্প্রতি সেই দোকান তিনটি বিক্রি করে দেন মা। বিক্রির ১৫ লাখ টাকা মা জমা রাখেন। মামা সেই ১৫ লাখ টাকা ব্যবসার কথা বলে মার কাছ থেকে নেয়। মামা পাশের বাঘদাশা লেনের ৩৩/১ নম্বর বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। মামা আজ দেয়, কাল দেয় করে, সেই টাকা আর মাকে দিচ্ছিল না। এ নিয়ে মার সঙ্গে মাঝে মধ্যেই মামার কথা কাটাকাটিও হতো। মামা তাড়াতাড়ি টাকা দিয়ে দেবে বলেও মাকে আশ্বাস দিত। কিন্তু টাকা দিত না। টাকার জন্য মা চাপ দিলে মামা তার তিন সহযোগীকে নিয়ে মাকে হত্যা করে। হত্যাকারীদের মধ্যে পাশের গোবিন্দ দাশ লেনের স্থানীয় বাসিন্দা ও মামার ঘনিষ্ঠ বিপ্লব (৪০) ছাড়াও আরও দুইজন ছিল। তাদের নাম জানা যায়নি। বংশাল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ নাসির উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, নিহত আসমা আক্তারের স্বামী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। আসমার ভাই পলাতক আকবর হোসেনও ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সময় বোনের কাছ থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ধার নিয়েছেন তিনি। ব্যবসায় মার খেয়ে টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। পাওনা টাকা চাওয়ার জের ধরেই ভাই বোনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ভাই বোনের গলা চেপে ধরে। গুরুতর আহত অবস্থায় আসমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
×