স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ কবর থেকে উধাও হয়ে যাওয়া দিনমজুর বৃদ্ধ আব্দুল মনাফের লাশের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। দাফনের ২ মাস ১৩ দিন পর আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের জন্য মঙ্গলবার কবর খুড়ে তুলতে গেলে লাশের পরিবর্তে পাওয়া গেছে কাফনের কাপড়, নীল রংয়ের পলিথিন ও প্লাস্টিকের সুতলি। এই ঘটনা সবাইকে অবাক করেছে। এলাকাবাসী এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে।
উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত জবান আলীর পুত্র আব্দুল মনাফ (৫৫) গত ১৬ মে বিকেল থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ১৮ মে সন্ধ্যায় বসত ঘরের সম্মুখের গোয়াল ঘরে র্দুগন্ধ পেয়ে নিখোঁজ আব্দুল মনাফের স্ত্রী সেখানে গিয়ে দেখতে পান তার স্বামীর গলায় দঁড়ি লাগানো মৃতদেহ। তখন তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে লাশ উদ্ধার করে। পরদিন আব্দুল মনাফকে হত্যার অভিযোগে গ্রামবাসী হরিপুর গ্রামের অভিযুক্ত উস্তার আলী ও তার ছেলে মিন্টু মিয়াকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই থানায় তাৎক্ষণিকভাবে একটি দরখাস্ত করেন। বিশ্বনাথ থানায় অপমৃত্যু জিডি (জিডি নং-০৭) হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। অতপর নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট এর ভিত্তিতে আব্দুল মনাফ আত্মহত্যা করেছেন মর্মে থানা পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর আব্দুল মনাফকে হত্যার অভিযোগে তার ভাই আব্দুল হাশিম বাদি হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে গত ২৫ মে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ একটি দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন (বিশ্বনাথ সি.আর মামলা নং-১৪১/২০১৫)। ওই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- হরিপুর গ্রামের উস্তার আলীর পুত্র টিটু মিয়া (২৫), তার পিতা উস্তার আলী (৫৫), ভাই মিন্টু মিয়া (২২), লুৎফুর (৩২) ও একই গ্রামের মৃত মজর আলীর পুত্র কবিরুল (৩৫)।
নিহত মনাফের ভাই আব্দুল হাসিম আদালতে অভিযোগ করেন, কোন ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে বাদীসহ এলাকাবাসী এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিহত মনাফের লাশ পুনরায় ময়না তদন্ত করা জন্য গত ১৭ জুন আদেশ প্রদান করেন সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। একই সঙ্গে জেলহাজতে আটক অভিযুক্ত পিতা ও পুত্র কে পুনরায় ময়না তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল না হওয়া জামিন প্রদান করে আদালত। ৫ জুলাই এর মধ্যেও ময়না তদন্ত না হওয়ায় গত ২৬ জুলাই পুনরায় ময়না তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, সিভিল সার্জন, মেডিকেল অফিসার, পুলিশ কর্মকর্তাসহ এলাকার কয়েক শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার আব্দুল মনাফের কবর খোড়া হয়। কিন্তু কবরে লাশ পাওয়া যায়নি। এদিকে নিহত মনাফের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, আদালত লাশের পুনরায় ময়না তদন্তের নির্দেশের পর অভিযুক্তরা কবর থেকে আব্দুল মনাফের লাশ সরিয়ে ফেলেছে বলে বলে তাদের ধারণা করছেন।