ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বড় হুমকিতে মার্কিন কর্মকর্তারা বিভক্ত

আইএস না আল কায়েদা?

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৬ আগস্ট ২০১৫

আইএস না আল কায়েদা?

ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ গোয়েন্দা, সন্ত্রাস দমন এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা কোন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ইসলামী স্টেট (আইএস) না আল কায়েদা ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ভূখ-ের প্রতি বৃহত্তম হুমকির সৃষ্টি করেছে সে প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই মতভেদ একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে যে, আইএসের দিক থেকেই আশু বিপদের হুমকিটা বেশি কারণ তাদের নজিরবিহীন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণা। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র হামলা চালানোর জন্য অনুসারীদের প্ররোচিত করতে তারা অত্যাধুনিক অনলাইন বার্তার সাহায্য নিচ্ছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। অনেক গোয়েন্দা ও সন্ত্রাস দমন কর্মকর্তা অবশ্য সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ইয়েমেন ও সিরিয়ার আল কায়েদার চরেরা ওইসব দেশের বিশৃঙ্খলকে কাজে লাগিয়ে শত শত যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংসসহ বড় ধরনের ‘ব্যাপক প্রাণহানির’ ঘটানোর হামলার চক্রান্ত করছে। প্রসঙ্গটি আইএসের প্রতি সন্ত্রাস দমন নীতি পর্যালোচনার জন্য হোয়াইট হাউসকে ইতোমধ্যেও তৎপর করে তুলেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র দীর্ঘমেয়াদি চরমপন্থী হুমকির বিষয়ে দায়িত্ব পালনকারী বিশ্লেষকদের আইএসের ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ করতে বলেছে। জুন মাসে এত বেশি লোক সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত তদন্তে যার বেশিরভাগ আইএস সম্পর্কিত এফবিআইর নজরদারির আওতায় ছিল যে, তত্ত্বাবধায়কদের সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের ওপর নজর রাখতে ‘অপরাধ দমন স্কোয়াড’ হিসেবে কাজ করার জন্য নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়। অনেক উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সত্ত্বেও বিগত ১৪ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আল কায়েদার কোন হামলা হয়নি, যদিও কিছু সম্ভাব্য হামলা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে কিংবা সেগুলো কার্যকর হয়নি। এ পর্যন্ত আইএস অনুপ্রাণিত বেশিরভাগ চক্রান্ত ছিল আনাড়ি ধরনের তবে কর্তৃপক্ষের পক্ষে আগেভাগে তা শনাক্ত করা ছিল কঠিন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, যারা স্বদেশের প্রতি প্রধান হুমকি হিসেবে আল কায়েদার জন্য বেশি উদ্বিগ্ন এবং যারা মনে করে আইএসই বড় হুমকি এটি তাদের মধ্যে ভাল-মন্দের কোন বিতর্ক নয়। দুটিই উদ্বেগের কারণ। কখন কার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে এটি অনেকটা সে রকম। বিচার বিভাগ এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ আইএসের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি সম্পর্কে বেশি উদ্বিগ্ন। অপরদিকে পেন্টাগন, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এবং জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র, যারা বিদেশে সন্ত্রাসবাদীদের হুমকির প্রতি বেশি দৃষ্টি দিয়ে থাকে তারা বিদেশে আল কায়েদার চরদের ব্যাপারে বেশি উদ্বিগ্ন। হোয়াইট হাউস আইএসের ব্যাপারে ক্রমবর্ধমানভাবে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে বলে মনে হয়। প্রেসিডেন্ট ওবামার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও সন্ত্রাস দমন উপদেষ্টা লিসা মোনাকো সম্প্রতি এই চরমপন্থী গোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অদ্বিতীয় হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন। চলমান সময়ে এই বিতর্ক বিবর্তিত হচ্ছে। তাই কোন নির্দিষ্ট দিকে অথবা অন্যদিকেও অর্থ অথবা কর্মচারীদের বড় ধরনের কোন স্থানান্তর ঘটেনি। তবে এই প্রথমবার সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা এই বিবর্তন সম্পর্কে এত খোলাখুলি মুখ খুলেছেন। সন্ত্রাস দমনে যুুক্তরাষ্ট্র কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তা নির্দিষ্ট করা কঠিন, কারণ প্রধান ভূমিকা পালনকারীও সংস্থাসমূহের অনেকেই মার্কিন সৈন্য, সিআইএ বিশ্লেষক এবং এফবিআই এজেন্টরাও অন্যদের মধ্যে কাজ করে থাকে। তবে সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সন্ত্রাস দমন কর্মসূচীতে সিআইএ এবং অন্য গোয়েন্দা সংস্থাসমূহে কর্মরত লক্ষাধিক লোকের মোটামুটি ৪ জনের মধ্যে ১ জনকে নিযুক্ত করা হয় এবং এখানে ৫ হাজার কোটি ডলারের বার্ষিক গোয়েন্দা বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় হয়। ইরাকে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ আমেরিকান সৈন্য আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরাকীদের সাহায্য করছে, অপরদিকে আফগানিস্তানে প্রায় ১ হাজার ৮০০ সৈন্য সেখানে তালেবান, আল কায়েদা ও অন্য চরমপন্থীদের মোকবেলায় সে দেশের নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তা করছে।
×