ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হয় ইরান চুক্তি নয়ত যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৭ আগস্ট ২০১৫

হয় ইরান চুক্তি নয়ত যুদ্ধ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির বিরোধীদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তিনি তার ঐ ঐতিহাসিক চুক্তির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, তার সমালোচকরা একই ব্যক্তি যারা ২০০৩ সালে ব্যর্থ ইরাক যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। বুধবার এক ভাষণে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি সামরিক সংঘর্ষের দিকে কংগ্রেসকে লেলিয়ে দেয়ার দায়ে ওয়াশিংটনের ঐসব ‘কল্পনাবিলাসী’ যুদ্ধবাজদের অভিযুক্ত করেন। তিনি সতর্ক করে দেন, চুক্তিটি নস্যাত করে দিতে রিপাবলিকানদের পরিকল্পনা আমেরিকাকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে ফেলবে। খবর গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ ও ইয়াহু নিউজের। বুধবার আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে একদল শ্রোতার উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ওবামা বলেন, আমাদের সরাসরি কথা বলা উচিত: আমাদের শেষ পর্যন্ত কূটনীতি করে কোন ধরনের যুদ্ধের মধ্যে কোন একটিকে বেছে নিতে হবে। সেটি হয়ত আগামীকাল নয়, হয়ত তিন মাস পরে নয়, কিন্তু শীঘ্রই। প্রেসিডেন্ট বলেন, গতানুগতিক ধ্যানধারণা এবং যুদ্ধের দামামা প্রতিহত করুন। এটি ছিল রিপাবলিকান সমালোচকদের প্রতি তার প্রকাশ্য জবাব। ওবামা ইরানের সঙ্গে এক কূটনৈতিক বোঝাপড়ায় পৌঁছতে তার নিজস্ব প্রয়াসকে ঠা-া লড়াইয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জন এফ কেনেডি ও রোনাল্ড রিগানের আলোচনার সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি আগামী মাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ভোটাভুটিতে চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান না করতে কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। যখন কংগ্রেসের রিপাবলিকান নেতারা সেপ্টেম্বরে চুক্তিটি অননুমোদন করার এক প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির পরিকল্পনা ঘোষণা করে সেটি প্রত্যাখ্যান করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন ওবামা ওই ভাষণ দিলেন। এ চুক্তি নিয়েই তার কংগ্রেসের সঙ্গে সবচেয়ে তীব্র লড়াই হতে পারে। চুক্তিতে ইরান যাতে কোন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিতকল্পে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়ার বিনিময়ে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে ইরানকে কিছুটা অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। ওবামা বলেন, ইরানের কোন পরমাণু অস্ত্র তৈরির ওপর নিষেধাজ্ঞা ‘চিরস্থায়ী’ই হবে এবং নিবিড় পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ ওই নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন যোগাবে। অবশ্য সমালোচকরা অভিযোগ করছেন, চুক্তি সত্ত্বেও ইরানের পরমাণু অবকাঠামো অনেকাংশেই অক্ষুণœ থেকে যাবে। ওবামা বলেন, চুক্তি থেকে সরে যাওয়া হলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ভেঙ্গে পড়তে পারে এবং তিনি বা কোন ভবিষ্যত প্রেসিডেন্ট ইরানের পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়ার অভিলাষ ব্যর্থ করে দেয়ার লক্ষ্যে সামরিক ব্যবস্থা নিতে নিশ্চিতভাবেই বাধ্য হতে পারেন। ওবামা ইরানের কট্টরপন্থীদের সঙ্গে কার্যত সহযোগিতা করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে আরেক লড়াইয়ের পথ খুলে দেয়ার দায়ে চুক্তিটির রিপাবলিকান বিরোধীদের অভিযুক্ত করেন। ওই কট্টরপন্থীরাই ইরানের রাজধানী তেহরানের রাস্তায় রাস্তায় ‘আমেরিকা ধ্বংস হোক’ বলে সেøাগান দিয়ে থাকে। প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে বলেন, আমেরিকানরা এখনও ইরাক আক্রমণের সিদ্ধান্তের পরিণতি ভোগ করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পরিহাসের কথা, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানই ছিল ওই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। কারণ দেশটির দীর্ঘদিনের শত্রু সাদ্দাম হোসেনের অপসারণের মধ্য দিয়ে এর সামরিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার জন বোয়েনারের মুখপাত্র কেরি ফ্রিটজ প্রেসিডেন্টের ভাষণের সমালোচনা করেন। ফ্রিটজ এক বিবৃতিতে বলেন, যখন কংগ্রেস ও জনগণ এ চুক্তির পর্যালোচনা করছে তখন প্রেসিডেন্ট ওবামার বাগাড়ম্বর যত না উত্তর তার চেয়ে বেশি প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এ চুক্তি আমেরিকাকে আরও নিরাপদ করবে, এমন তথ্য, উপাত্ত ও প্রমাণ দেয়ার বদলে প্রেসিডেন্ট দলের প্রতি আক্রমণ, মিথ্যা দাবি ও ভীতি সৃষ্টির ওপর নির্ভর করছেন। প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা কেভিন ম্যাককার্থি রিপাবলিকান সদস্য এড রয়স উত্থাপিত অননুমোদনের প্রস্তাবের ওপর ভোট নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককোনেলও তার কক্ষে অননুমোদনের এক প্রস্তাবের ওপর ভোট নেবে বলে মঙ্গলবার আভাস দেন। এর উদ্দেশ্য হবে, ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়ন করা থেকে ওবামা প্রশাসনকে বিরত রাখা।
×