ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উল্টো নির্যাতিতদের নামেই থানায় মামলা ॥ গা-ছাড়া ভাব পুলিশের

নাটোরে চুরির অভিযোগে গাছে বেঁধে নির্যাতন, কেউ গ্রেফতার হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৭ আগস্ট ২০১৫

নাটোরে চুরির অভিযোগে গাছে বেঁধে নির্যাতন, কেউ গ্রেফতার হয়নি

সংবাদদাতা, নাটোর, ৬ আগস্ট ॥ নাটোরের বড়াইগ্রামে চুরির অভিযোগে গাছের সঙ্গে বেঁধে শিশু শাকিল কাজী এবং আবু সামাকে নির্মম নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। নির্যাতনের ভিডিও ফাঁসের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও কেউ আটক হয়নি। এদিকে, ঘটনার পাঁচ দিনেও থানায় অভিযোগ করতে পারেনি নির্যাতিতরা। উল্টো চুরির অভিযোগে শিশু শাকিল এবং আবু সামার নামে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মাঝগাঁও ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কামরুল ইসলাম। এলাকাবাসী জানান, গত শুক্রবার রাতে নাটোরের বড়াইগ্রামের দক্ষিণ মালিপাড়া গ্রামের বোবার মোড়ে বুলবুল হোসেন নামে স্থানীয় এক মুদি দোকানির মালপত্র চুরি হয়। এ বিষয়ে দোকান মালিকসহ কিছু লোক শিশু শাকিল কাজী (১৪) এবং আবু সামাকে (৩৬) সন্দেহ করে। রবিবার বিকেলে সৌদি প্রবাসী স্থানীয় রবিউল করিমের নির্দেশে চুরির অভিযোগে শিশু শাকিল এবং আবু সামাকে সুপারি গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। আর নির্যাতনে অংশ নেয় গ্রামের মহিদুল ইসলাম, শাহজাহান আলী, শফিকুল ইসলামসহ অনেকেই। নির্যাতনের সময় স্থানীয় এক যুবক মোবাইলে নির্যাতনের দৃশ্যধারণ করেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে নির্যাতনের ভিডিওটি ফাঁস হলে তোলপাড় শুরু হয়। শিশু শাকিল কাজীর মা হাসিনা বেগম ছেলেকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের বিষয়ে বলেন, আমার ছেলে অন্যায় করে থাকলে সমাজের লোকজন আমাদের বলত। কিন্তু তারা আমাদের না জানিয়ে গাছে বেঁধে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছে। আমরা এই নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। শাকিলের পিতা মিজান আলী বলেন, নির্যাতনকারী রবিউল করিমসহ অন্যরা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে দেয়নি। তারা বাড়িতে আটকে রেখে চিকিৎসা দিয়েছে। তাছাড়া থানায় মামলা করতে গেলে আমিসহ ছেলেকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেয়। তাই মামলা করা সম্ভব হয়নি। আরেক নির্যাতিত আবু সামার স্ত্রী রেহেনা বেগম বলেন, ঘটনার দিন সে পার্শ্ববর্তী মাঠে কাজ করতে গিয়েছিল। পরে তার ছেলের কাছে বাবাকে পেটানোর খবর শুনতে পান তিনি। ছুটে এসে দেখেন গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে। এ সময় সে বাধা দিতে গেলে সমাজের লোকজন বলে তাকেও মারপিট করা হবে। পরে স্থানীয় ইউপি মেম্বারকে খবর দেয়া হলে তিনি এসে নির্যাতন বন্ধ করেন। আবু সামার বোন নার্গিস বলেন, মানুষ চুরি করলেও এভাবে নির্যাতন করে না। আমার ভাই অপরাধী হলে পুলিশে সোপর্দ করত। কিন্তু তা না করে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সে দৃশ্য মনে হলে এখনও গা শিউরে ওঠে। তিনি অবিলম্বে নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবি জানান। নির্যাতন প্রসঙ্গে সৌদি প্রবাসী রবিউল করিম বলেন, সামাজিকভাবে তাদের বিচার করা হয়েছে। এভাবেই আমাদের গ্রামে সামাজিক বিচার হয়। বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, যারা (শিশু শাকিল এবং আবু সামা) চুরি করেছে তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। নির্যাতিতের পরিবার থেকে কোন মামলা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনও কোন মামলা হয়নি। তবে মামলা না হলেও আমরা অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা করছি। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, পুরো বিষয়টিকে পুলিশ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। পুলিশের পরোক্ষ ইঙ্গিতেই নির্যাতিত শাকিল ও আবু সামার নামে বুধবার বিকেলে মাঝগাঁও ইউনিয়নের মেম্বার কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগে দায়ের করেছেন। অবশ্য ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কথা অস্বীকার করে পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী বলেন, ভিডিওটি ফাঁস হওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযুক্তদের আটকের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×