ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৭ আগস্ট ২০১৫

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ “..মুজিবুর রহমান/ জীবন দানের প্রতীক্ষালয়ে লক্ষ সেনানী পাছে/ তোমার হুকুম তামিলের লাগি সাথে তব চলিয়াছে/ রাজভয় আর কারা শৃঙ্খল হেলায় করেছে জয়/ ফাঁসির মঞ্চে মহত্ত্ব তা, তখন হয়নি ক্ষয়/ বাংলাদেশের মুকুটবিহীন তুমি প্রমূর্ত রাজ/ প্রতি বাঙালীর হৃদয়ে হৃদয়ে তোমার তখন তাজ..।” পল্লী কবি জসীমউদ্দীন তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ নামক কবিতায় এভাবেই বিশ্ববাসীর সামনে স্বাধীনতার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবর রহমানের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম এবং পুরো জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে একসুতোয় গাঁথার বর্ণনা দিয়েছেন। বাঙালী জাতির বেদনাবিধূর শোকের মাস আগস্টের আজ সপ্তম দিন। পুরো দেশই যেন শোকে মুহ্যমান। সর্বত্র উড়ছে শোকের পতাকা। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, অলি-গলি পর্যন্ত ছেয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাপানো কালো ব্যানার, পোস্টার আর প্লাকার্ডে। লাল, সাদা আর কালো কালিতে লেখা শোকবাণী ছড়াচ্ছে শোকের ছায়া। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী। স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতি বাঙালীর হৃদয়ে তাঁর স্মৃতি যে অমলিন, শোকের মাস আগস্টে প্রতিটি স্থানে তার প্রতিফলন ঘটেছে। নানা অনুষ্ঠানমালায় কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আগস্ট বাঙালীর জীবনে শুধু শোকের নয়, একটি অভিশপ্ত মাসও বটে। কারণ এই মাসেই ঘটেছিল বাঙালীর ইতিহাসে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম কলঙ্কজনক ট্রাজেডি। একাত্তরের পরাজিত ঘাতকদের হাতে এ মাসেরই ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কের যে বাড়িটি একদিন স্বাধীনতার প্রশ্নে একই পথে নিয়ে এসেছিল বাঙালীকে, সেই বাড়িটিই সেই বাঙালীকে কাঁদালো একদিন অঝোর ধারায়। বাড়িটির ব্যালকোনিতে দাঁড়ানো দৃঢ়চেতা যে নেতার অঙ্গুলি হেলনে বুকের ভেতর জ্বলতো মুক্তির দ্রোহ, ঘাতক নরপিশাচদের কারণে সেই পিতাই একদিন মুখথুবড়ে পড়লেন বাঙালীর অনিবার্য সেই বাড়ির মেঝেতেই। সিঁড়ি গড়িয়ে বইল রক্তের ধারা। ঘাতকের বুলেট বিদ্ধ করল কালজয়ী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে- সপরিবারে। বিদ্ধ হলো গোটা বাঙালী, স্বাধীন বাংলাদেশ। রচিত হলো পৃথিবীর এ যাবতকালের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম ইতিহাস। তাই আগস্ট এলেই মোচড় দিয়ে ওঠে বাঙালীর বুকের ভেতরটা। স্মৃতির উঠোনে গল্প বুনে বেদনার। সেই অমোঘ নেতার স্মরণে-শ্রদ্ধায়, কান্না-ভালবাসায় বারবার অবনত হয় মাথা। কতিপয় বর্বর স্বাধীনতাবিরোধী সেনা কর্মকর্তা বর্বরোচিত অভিলাষ পূরণে গড়ল ঘৃণ্য ইতিহাসÑ তার মর্মবেদনা বাঙালীকে বয়ে বেড়াতে হবে অনন্তকাল। ঘৃণ্য সে কালিমায় লিপ্ত হলো সহজ-সরল বাঙালীর মুখ। শোকের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবিতে উচ্চকিত। এবারের এ দাবির পাশাপাশি সোচ্চার দাবি উঠেছে মানবতাবিরোধী সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও দ্রুত সম্পন্ন করে আদালতের রায় কার্যকরের।
×