ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুক ওয়াল ছেয়ে গেছে অনুসারীদের প্রতিবাদী পোস্ট, মাতমে

নিলয় হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার করুন ॥ এ্যামনেস্টি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৮ আগস্ট ২০১৫

নিলয় হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার করুন ॥ এ্যামনেস্টি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রজন্ম যোদ্ধা নিলয় হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সহ্য করা হবে না বলে হত্যাকারীদের উদ্দেশে শক্ত বার্তা পাঠানোরও আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি। এদিকে নিলয় হত্যার পর পরই তার ফেসবুক পেজসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিবাদ আর মাতম। খোদ রাজধানীতে শুক্রবার দিনদুপুরে ব্লগার নিলয় নীলকে হত্যার পর পরই এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে এ্যামনেস্টি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয়ের পর এ বছর চতুর্থ ব্লগার হিসেবে হত্যাকা-ের শিকার হলেন নিলয় নীল। এ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ডেভিড গ্রিফিথস বলেন, এ ধরনের নির্মম হত্যাকা-ের ঘটনা এখানেই শেষ হওয়া দরকার। বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভীতি ছড়াতেই এ ধরনের হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কারণে কাউকে হত্যা করা হতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি সরকারকে এ ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীকে মৃত্যুদ- দেয়ার আহ্বান জানান। প্রতিবাদ-পোস্ট আর মাতম... খুনের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর মুহূর্তেই ব্লগার নিলয় চক্রবর্তীর ফেসবুক ওয়াল ছেয়ে গেছে অনুসারীদের প্রতিবাদী পোস্ট আর মাতমে। উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হয়ে না-ফেরার দেশে চলে যাওয়া এই প্রজন্মসেনাকে নিয়ে কেউ জানিয়েছেন সমবেদনা, কেউবা নিজের অসহায়ত্ব ঝেড়েছেন সমাজের প্রতি। প্রশ্ন তুলেছেন মুক্তচিন্তার অধিকার নিয়ে। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর পর নিজ বাসায় নিলয় খুন হয়েছেন এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাৎক্ষণিক অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি এই ঘটনা। সাড়া চেয়ে ওয়ালে পোস্টও দেন কেউ কেউ। মেলেনি সাড়া। এর পরই পুলিশ নিশ্চিত করে উত্তর গোড়ান টেম্পোস্ট্যান্ডের কাছে একটি পাঁচতলা ভবনের পঞ্চম তলায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় নিলয়কে, যিনি কাজ করতেন একটি বেসরকারী সংস্থায়। সর্বশেষ বেলা একটা ৮ মিনিটে সুরমা মেহজাবিন নামের একজনের পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করেন নিলয়। এর কিছুক্ষণ পরই তাকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর ৫১ মিনিট পর নিলয়কে হত্যার খবরের মধ্যে একটা ৫৯ মিনিটে মুহাম্মদ আসিফ নামে একজন নিলয়ের ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, “ভাই, ভাই, ভাই।” এর পর থেকে অনেকেই নিলয়ের খোঁজ নিতে তার ফেসবুকের ওয়ালে পোস্ট দিলেও কারো পোস্টেই আর সাড়া মেলেনি। শহীদুল শাহেদ নামে একজন নিলয়ের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “কিছু বলার নেইরে ভাই। পিংকী চৌধুরী বাবু লিখেছেন, মাফ করে দিও নিলয়! কান্নার শক্তিটুকুও আর নেই!” নিলয়কে খুনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ফেসবুক-ব্লগেও এ নিয়ে লিখেছেন অনেকে। পাশাপাশি প্রায় তিন মাস আগে থানায় গিয়ে জিডি করতে না পারার ঘটনা সামনে নিয়ে এসেছেন অনেকে। নিলয় সোবহান নামের একজন গত ১৫ মে নিলয়ের সেই স্ট্যাটাসটিও তুলে দিয়েছেন ফেসবুকে। অলি আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, বড় ভুল দেশে জন্মেছিলেন ভাই। এই দেশে চিন্তা করার ক্ষমতা থাকার চেয়ে বড় অপরাধ আর কিছু নেই। অন্ধ বিশ্বাসী আইডি থেকে একজন লিখেছেন, বিচারহীনতার এই দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেও আজ ঘৃণা লাগছে। প্রতিনিয়ত আপন মানুষগুলোর মৃতদেহ দেখার আর শক্তি নেই। এর থেকে সরকার বলুক, আর কত লাশ দরকার তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে? নিলয় ভাই, ওয়াদা রইল কলম থামবে না কখনও। সজীব বৈদ্য লিখেছেন, দুর্ভাগ্য আপনার যে এই দেশে জন্মেছিলেন। এই দেশটার নিশ্চিত ভবিষ্যত হচ্ছে চরম মৌলবাদীদের রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া। সেখানে কি দরকার কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করা! নিলয়ের সঙ্গে ওয়েবসাইটের ডোমেইন কেনার স্মৃতি নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রিন্স অরণ্য। অর্কিড ফুল লিখেছে, কি যন্ত্রণা, আইডি আছে মানুষ নেই! কয়েকটা ঘুমের বড়ি খেয়েছি কিন্তু অস্থিরতা থামছে না। দাদা তুমি কোথায় গেলে? আবৃশা আবীর লিখেছেন, আপনার দুর্ভাগ্য আপনি বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। আপনার দুর্ভাগ্য আপনি চিন্তা করতে শিখেছিলেন। আপনার হত্যার বিচার হবে না, এটা নিশ্চিত। শুধুই সমবেদনা, ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই গেল। দিপ্তি তেরেসা পালমা লিখেছেন, কি হইতেছে এসব? আপনি কি সত্যিই আর নেই? এর আগে সব ঘটনাতেই রাস্তায় হামলা হলেও ব্লগার নিলয়কে হত্যা করা হলো তার বাসায় ঢুকে। তাকে যে মাঝেমধ্যেই অনুসরণ করা হচ্ছিল, তা তিনি ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছিলেন গত ১৫ মে। ওই পোস্টে নিলয় লেখেন, আমাকে দুজন মানুষ অনুসরণ করেছে গত পরশু। অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে যোগদান শেষে আমার গন্তব্যে আসার পথে এই অনুসরণটা করা হয়। ওই ঘটনায় জিডি করতে গেলেও থানা তা নেয়নি বলে ওই পোস্টে লিখেছিলেন তিনি। অনেক থানা অতিক্রম করার জন্য গতকাল ঘটনাস্থলের আওতায় থাকা একটি থানায় গেলে তারা জিডি নিল না, তারা বলল আমাদের থানার অধীনে না, এটা অমুক থানার অধীনে পড়েছে; ওখানে গিয়ে যোগাযোগ করুন, আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ছেড়ে চলে যান। পুলিশের পক্ষ থেকে নিলয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে দেশ ছেড়ে চলে যাবার পরামর্শ দেয়ায় ফেসবুকে চলছে তীব্র সমালোচনা। জানমাল রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
×