ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৮ আগস্ট ২০১৫

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘... টলে ওঠে বাংলাদেশ প্রবল ধিক্কারে/ শুধু ওই সিঁড়ি নয় সকল মানচিত্র জুড়ে/ ছড়ানো এ রক্ত-চিহ্ন নিঃশব্দে বলবে বারে বারে;/ এ যে সিঁড়ি কিংবা পিতার বক্ষ নয়;/ যতদূরে দৃষ্টি যায় তাকাও দেখবে বাংলাদেশ/ গুলিবিদ্ধ। এই রক্ত অনন্ত সাগর অনিঃশেষ/ বয়ে যাবে কাল থেকে কালান্তরে ইতিহাস ছুঁয়ে। এই রক্ত আমাদের প্রিয় স্বাধীনতার প্রখর সূর্য/ নাম উচ্চারণমাত্র শ্রদ্ধায় পড়বে মাথা নুয়ে।’ বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘৃণ্য হত্যাকা- নিয়ে কবি নাসির আহমেদ তাঁর ‘গুলিবিদ্ধ বাংলাদেশ’ নামক কবিতায় এসব কথা লিখেছেন। বাঙালী জাতির বেদনাবিধুর শোকের মাস আগস্টের আজ অষ্টম দিন। পুরো দেশই যেন শোকে মুহ্যমান। শোকের নানা অনুষ্ঠানে কৃতজ্ঞ জাতি শ্রদ্ধানবত চিত্তে স্মরণ করছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। শোকের মাসে বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে কালো পতাকা উত্তোলন এবং নানা অনুষ্ঠানে তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার জানাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর খুনী নরপিশাচ একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের। দিন যতই এগোচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধীসহ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মদদদাতাদের বিচারের দাবিও ততই তীব্র হচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে সাঁটানো পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুনেও শোভা পাচ্ছে এই একই দাবি। বীর বাঙালীর ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে এ মাসেই। ইতিহাসের দীর্ঘপথ পেরিয়ে বাঙালী জাতি পিতৃ হন্তারকের বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলেও আমাদের প্রতিটি শিরা-উপশিরা ও ধমনিতে তীব্র ঘৃণার উদ্রেক করে এ মাস। ইতিহাসে হয়ত এ মাসে অনেক বিজয়ের কাহিনী লেখা আছে। কিন্তু বিজয়ের সেসব কাহিনী রক্তের স্রোতধারায় মিশেছে আগস্টে এসে। এ মাস নতুন করে ভাবতে শেখায়। এ মাস প্রতিশোধের চেতনায় শাণিত করে সবাইকে। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা। বাঙালীর অমোঘ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকেই ঘর ছেড়েছিল মানুষ। মৃত্যুর থাবায় বুক মেলে দেয় কোটি জনতা। শুরু করে স্বাধীনতার লড়াই। তারপর টানা ৯ মাস সেই প্রাণপ্রিয় নেতার নির্দেশেই চলে মুক্তির যুদ্ধ। একদিন স্বাধীন হয় দেশ। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় আরও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রÑ ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। জন্ম নেন এক চিরভাস্বর মুখ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই কালজয়ী মানুষকেই একদিন, এই আগস্টেই নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার পবিত্র মাটি। বাঙালীর ইতিহাসে যোগ হয় এক কলঙ্কময় অধ্যায়। বাঙালী কাঁদে। কাঁদায় বিশ্ববাসীকে। বুকের খুনে বঙ্গবন্ধু রচনা করেন ভালবাসা ও শ্রদ্ধার এক কালজয়ী ইতিহাস। ১৯৭৫ সালের এই মাসেই বাঙালী হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৫ আগস্ট কালরাতে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, একাত্তরের পরাজিত ঘৃণ্য নরপশুরা একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে। জঘন্যতম এই হত্যাকা- থেকে বাঁচতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। যে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে কারাগারে বন্দী রেখেও দেশে স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাঁকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। জাতির পিতাকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি ৪০টি বছর বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরাধিকারিনী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।
×