ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৮ আগস্ট ২০১৫

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী, মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে জাতির পিতা হত্যাকারীদের নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে স্বামী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনিও শাহাদাতবরণ করেন। শহীদ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মাত্র তিন বছর বয়সে পিতা ও পাঁচ বছর বয়সে মাতাকে হারান। তাঁর ডাকনাম ছিল ‘রেণু’। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। দাদা শেখ কাসেম চাচাত ভাই শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিবাহ দেন। তখন থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুর মাতা সাহেরা খাতুন নিজের সন্তানদের সঙ্গে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে তিনি প্রাথমিক লেখাপড়া করেন। অতঃপর সামাজিক রীতি-নীতির কারণে গ্রামে গৃহশিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের স্মৃতি শক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। মনেপ্রাণে একজন আদর্শ বাঙালী নারী ছিলেন তিনি। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে জীবনে যে কোন পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতেন। তাঁর কোন বৈষয়িক চাহিদা ও মোহ ছিল না। স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বান্তকরণে সহযোগিতা করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ মানুষকে মুক্তহস্তে দান করতেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নেয়া ও পরিবার-পরিজনের যে কোন সঙ্কটে পাশে দাঁড়াতেন। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বনানী কবরস্থানে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহ এ কর্মসূচীতে অংশ নেবে। বেলা ১১টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হসিনা। এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ বাদ জোহর ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। বাদ আছর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর উদ্যোগে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। যুবলীগ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ॥ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে বলেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল জাতির পিতার সহধর্মিণীই নন, বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামে অন্যতম এক অগ্রদূত। আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আবদুল হামিদ বলেন, নির্লোভ, নিরহঙ্কার ও পরোপকারী জীবনে পার্থিব বিত্তবৈভব বা ক্ষমতার জৌলুস কখনও বঙ্গমাতাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি সবসময় অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। তিনি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেন, এ মহীয়সী নারী ছিলেন সহজ-সরল নিরহঙ্কারী। স¦ামী একটি স¦াধীন সার্বভৌম দেশের প্রতিষ্ঠাতা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি। একজন সাধারণ বাঙালী নারীর মতো তিনি স¦ামী-সংসার, আত্মীয়স¦জন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বাংলাদেশের স¦াধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং স¦াধীনতার পরে দেশ গঠনে তাঁর অসাধারণ ভূমিকার কারণে তিনি ছিলেন স¦তন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ¦ল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলনে শেখ ফজিলাতুন্নেছা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও জাতির জন্য তাঁর অপরিসীম ত্যাগ, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতার কারণে জাতি তাঁকে যথার্থই ‘বঙ্গমাতা’ উপাধিতে অভিষিক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। শিশু নির্যাতন ঐক্যবদ্ধ মোকাবেলার আহ্বান খাদ্যমন্ত্রীর ॥ কাউকে দোষারোপ না করে দেশে শিশুদের প্রতি যে বর্বরতা চলছে তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কনফারেন্স রুমে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই দেশে নারী নির্যাতন ও শিশু হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। তিনি বলেন, দেশে শিশু হত্যার বৈধতা দিয়ে গেছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। শেখ রাসেল হত্যার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, জিয়া শিশু হত্যার শুধু বৈধতা দেননি, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারও বন্ধ করে দেন। কিন্তু এখন শিশু হত্যাকারীরা ধরা পড়েছে। আমরা চাই এসব অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ।
×