ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে সিসি ক্যামেরা ঘুরিয়ে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত ট্রাফিক পুলিশ!

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৮ আগস্ট ২০১৫

চট্টগ্রামে সিসি ক্যামেরা ঘুরিয়ে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত ট্রাফিক পুলিশ!

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় স্থাপিত প্রায় দেড় শ’ সিসি ক্যামেরার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে থাকা সিসি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিয়ে ট্রাফিক পুলিশ চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ও অপরাধীদের পাকড়াও করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে স্থাপন করা হয় সিসিটিভি ক্যামেরা। কিন্তু এসব ক্যামেরার এ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করে খোদ পুলিশের কর্মকর্তা ও কনস্টেবলরা অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্যামেরায় ধারণ হচ্ছে না এসব চিত্র। সঠিক মনিটরিং না থাকায় ক্যামেরার কোণ পরিবর্তনের বিষয়টি শতাধিক ক্যামেরার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আঁচ করতে পারছেন না। ফলে অপরাধীরা যেমন রেহাই পাচ্ছে তেমনি অসাধু পুলিশ সদস্যরাও নানা অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত থাকলেও ক্যামেরার আড়ালে থেকে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, এসব ক্যামেরা দিনের বেলা ৪শ’ মিটার ও রাতের বেলায় এক শ’ মিটার পর্যন্ত ছবি ধারণের ক্ষমতা রাখে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও অপরাধপ্রবণ স্থানে স্থাপনকৃত সিসি ক্যামেরার দিক পরিবর্তন করছে খোদ পুলিশই। সিসি ক্যামেরা স্থাপনকৃত পিলারে ব্যক্তিগত লোক দিয়ে ক্যামেরার এ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করা হচ্ছে। নগরীর পাহাড়তলি রেলওয়ে কবরস্থানের কোণে লাগানো তিনটি ক্যামেরার মধ্যে দক্ষিণমুখী ক্যামেরাটির এ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করে চলছে প্রতিনিয়ত ট্রাফিক ও থানা পুলিশের চাঁদাবাজি। ক্যামেরা নিয়ন্ত্রকের প্রতি সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন- যদি এ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করা হয় সেক্ষেত্রে ধারণকৃত অংশ থেকে কোন ধরনের তথ্য বা উপাত্ত কালেকশন করতে পারবেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। পুলিশের অপরাধ সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়েছে বা অপরাধের সাজা দেয়া হয়েছে এমন কোন নজির গত এক বছরেও নেই। সম্প্রতি এ সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শতাধিক। অভিযোগ রয়েছে, সিসি ক্যামেরার বিভিন্ন দিক ও মনিটরিং সম্পর্কে অসাধু পুলিশ সদস্যরা অবগত থাকায় পুলিশের চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না। এমনকি খোদ পুলিশই স্বউদ্যোগে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে নিজেরা লোক লাগিয়ে সিসি ক্যামেরার এ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করে দিচ্ছে। রবিবার ভোর ৬টায়ও পাহাড়তলিস্থ রেলওয়ের কবরস্থানের কোণে থাকা দক্ষিণমুখী ক্যামেরাটির এ্যাঙ্গেল পরিবর্তিত অবস্থায় ছিল। সপ্তাহের প্রতিদিনই ট্রাফিক পুলিশের অসাধুরা এমনকি বিভিন্ন থানা পুলিশের টহলে থাকা সদস্যরা আকস্মিকভাবে ওই মোড়ে অবস্থান নিয়ে যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে। প্রশ্ন উঠেছে, যদি পুলিশের রেকর্ডে এসব সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত হয় তাহলে তা পর্যবেক্ষণ করে অপরাধী পুলিশ সদস্যদের শনাক্ত করা ততটা কঠিন নয়। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন মোড়ে লাগানো সিসি ক্যামেরার অন্তরালে পুলিশ অপরাধী পাকড়াওয়ের পরিবর্তে নিজেরাই অপরাধ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সিএমপির মুখপাত্র ও মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি এসএম তানভীর আরাফাত জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সিটিএসবির দফতরে সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম। তবে ক্যামেরা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব তিনি পালন করেন। গত কয়েকদিন তিনি শহরের বাইরে ছিলেন। এ সময় ঝড় বৃষ্টিও হয়েছে। ক্যামেরার প্রতিস্থাপন নড়ে যেতে পারে। তবে অনেক আগ থেকে এ ক্যামেরার দিক পরিবর্তন করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ জুন থেকে ৫৬টি সিসি ক্যামেরা ২৫টি স্পটে লাগানো হয়েছে। সড়কের গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে কোথাও তিনটি, কোথাও দুটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। গত ৫ মার্চ থেকে আরও ৭১টি ক্যামেরা ১৮টি স্পটে লাগানোর কাজ শুরু করেছে সিএমপি। এর মধ্যে চারমুখী সড়ক সংবলিত সতেরোটি স্পটে চারটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার কাজ শেষ পর্যায়ে। আর তিনমুখী সড়কের মোড় হিসেবে চেরাগী পাহাড় মোড়ে তিনটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্যামেরার ধারণক্ষমতা দিনের বেলায় ৪শ’ মিটার এবং রাতের বেলায় এক শ’ মিটার। সর্বোচ্চ ৩৬০ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলে এসব ক্যামেরার লেন্স অটোমেটিক ঘুরতে থাকবে। ফলে একাধিক ফেস ডিটেক্ট করা সম্ভব এসব ক্যামেরায়। সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ মিলিমিটার লেন্স, নাইট, অটোসেনসিভিটি, ডিজিটাল জুম এবং নয়েজ খুব কম ও ইনফ্রারেড হওয়ায় অপরাধীরা এর অবস্থান শনাক্ত করতে পারবে না।
×