ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আলোচনা

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার এখনই প্রকৃষ্ট সময়

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৮ আগস্ট ২০১৫

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার এখনই প্রকৃষ্ট সময়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। বর্তমান সময়টিই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রকৃষ্ট সময়। যুদ্ধাপরাধীদের শুধুমাত্র ফাঁসিতে ঝুলালেই চলবে না, সঙ্গে সঙ্গে তাদের সম্পত্তিকেও বাজেয়াফত করতে হবে। বহির্বিশ্বে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে তাদের কবর সে দেশে দেয়া যায় না। বাংলাদেশেও তা হওয়া উচিত ছিল। রাজাকারদের কবরের পাশে ঘৃণাস্তম্ভ নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি। কবরের নামফলকে তাদের অপরাধের বিবরণ থাকতে হবে। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) এ. কে. মোহাম্মদ আলী শিকদার। বক্তারা নিহত নিলয় নীল হত্যায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনুসন্ধানী টিমের সানাউল হক বলেন, জামায়াতকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে প্রমাণ করার যথেষ্ট তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে। আমি মনে করি জামায়াতের বিচার করার এটিই প্রকৃষ্ট সময়। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার হলে অপরাধীর সম্পত্তি বাজেয়াফত হয়। বাচ্চু রাজাকারের তিনটি বাড়ি, তিনি পালিয়ে গেছেন। পালিয়ে থাকা অবস্থায় তিনি ভোগ বিলাসেই জীবন যাপন করছেন। তাহলে শাস্তিটা হলো কি! সম্পত্তি যদি বাজেয়াফত করা হতো তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তিটা ঠিক মতো হতো। তিনি বলেন, ‘বিচারটা শুধু চার দেয়ালে হচ্ছে না, বিচার হচ্ছে রাস্তায়, বিচার হচ্ছে মানুষের হৃদয়ে।’ তাই জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন দেশেই যুদ্ধাপরাধীর কবর তার দেশে দেয়া হয় না। বাংলাদেশ সে পথে পা বাড়াতে না পারায় আমরা অনেকটা লজ্জিতই বটে। সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল আলম শহীদ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করেন না তারাও খুব নগণ্য নয়। রাজাকারদের কবরের পাশে ঘৃণাস্তম্ভ করতে হবে। কবরের পাশে অপরাধী রাজাকারদের কর্মের বিবরণ থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান, ’৭৫-এর পথে উল্টোপথে চলেছে বাংলাদেশ। ২০ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে জিয়াউর রহমান ছেড়ে দেন। সংসদ ভবনের পাশে খানে সবুরের কবর দেয়া হয়েছে। জাদু মিয়ার কবর দেয়া হয়েছে। রাজাকারদের কবরের পাশে যেমন ঘৃণাস্তম্ভ করা যেতে পারে ঠিক তেমনি সংসদ ভবনের পাশ থেকেও রাজাকারদের কবর সরিয়ে নিতে হবে। দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের তেমন কোন কঠোর সাজা হচ্ছে না। সাধারণ কয়েদির মতই তারাও সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় নানা সুবিধা পাচ্ছে। কামারুজ্জামানের কবরের পাশে শ’খানেক মানুষ প্রায়ই ভিড় করে। তা মেনে নেয়া যায় না। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হোক এটা সকলের প্রত্যাশা। কিন্তু আমৃত্যু কারাদ-ও দেয়া হয়, তখনই প্রশ্ন ওঠে। শঙ্কা থেকে যায়। যারা যুদ্ধাপরাধের অপরাধে দ-প্রাপ্ত হবেন তাদের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে না। লেখক ও কলামিস্ট হারুন হাবীবের সঞ্চালনা ও মেজর জেনারেল (অব) কে. এম সফিউল্লার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক এডিশনাল আইজিপি ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল আলম, প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ প্রমুখ।
×