ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেঙ্গলে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ভাস্কর্য প্রদর্শনী শুরু

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৯ আগস্ট ২০১৫

বেঙ্গলে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ভাস্কর্য প্রদর্শনী শুরু

সাজু আহমেদ ॥ বাংলাদেশে ভাস্কর্য চর্চার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। বিশেষ করে এ মাধ্যমের ব্যয়সাপেক্ষতা, সুপরিসর স্থানের অভাব, সময় ও শ্রমসাপেক্ষ চর্চা পদ্ধতির তুলনায় অনিশ্চিত বাজার ইত্যাদি কারণে ভাস্কর্য চর্চার পরিসর সময়ের সঙ্গে বিস্তৃত হয়নি। তবুও ভাস্কর্যের চর্চা অব্যাহত রয়েছে। দেশের কতিপয় ভাস্কর নবীন এই শিল্পের সার্বজনীন মাত্রা নির্মাণের অভিপ্রায়ে নিরীক্ষাধর্মী নানা কাজ করে চলেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। প্রিয়ভাষিণীর নির্মাণশৈলী মাধ্যম হিসেবে ভাস্কর্যকে আমাদের সামনে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে। তাঁর শিল্প সৃষ্টির বিশেষত্ব হচ্ছে তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদ্যের তিনি আশ্রয় খুঁজে পান, আশার বসতি গড়ে তোলেন, অনিঃশেষ সৃষ্টির জন্য অনিবারিত উদ্দীপনার যোগান পান। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো অতি তুচ্ছ বিষয়কে আশ্রয় করে তিনি যা সৃজন করেন তা শিল্পগুণে ও সৃজনধর্মিতায় হয়ে ওঠে অসামান্য। তিনি একজন প্রকৃতির পরিব্রাজক, প্রকৃতির ভাস্কর, তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি অনুভূতির ভাস্কর। আমাদের চিরচেনা প্রকৃতির নানা তুচ্ছ আর প্রচ্ছন্ন অবয়বে তিনি যে বিভাসিত বিন্যাসের সন্ধান করেন এবং তারপর সেই অবয়বে নিজের বোধ আর শিল্পীত রূপকল্পের সম্মিলন ঘটিয়ে যে অমর্ত্য রূপ প্রদান করেন; সেই রূপে যে বেগ থাকে, আবেগ থাকে, প্রণয় থাকে, মায়া থাকে, বেদনা থাকে, আলোর আলোড়ন থাকে সেটি তো তার অভ্রান্ত অনুভূতির কারণেই। এসব শিল্পীর যারা পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে তাদের মধ্যে অন্যতম শিল্প-প্রদর্শনালয় বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টস। এ বছরের ১৪ এপ্রিল পনেরো বছর অতিক্রম করেছে। এই যাত্রাপথে বাংলাদেশের চিত্রকলা আন্দোলনকে প্রাণবন্ত এবং সাম্প্রতিক শিল্পচর্চার বিশ্বজনীন ধারায় যুক্ত থাকতে বেঙ্গল গ্যালারি সর্বদা ব্যাপৃত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টস ৭ আগস্ট থেকে শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ‘নামিল শ্রাবণ সন্ধ্যা’ শীর্ষক ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টায় ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে প্রদর্শনীটির যৌথভাবে উদ্বোধন করেন পরিবেশবাদী ইনাম আল হক, আবৃত্তিশিল্পী ও অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং চিত্রশিল্পী রোকেয়া সুলতানা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লূভা নাহিদ চৌধুরী এবং ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ওপর বেঙ্গল ফাউন্ডেশন নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনীতে মোট ৮১টি ভাস্কর্য স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনী আগামী ২২ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এবারের প্রদর্শনীটিও বরাবরের মতো দর্শক বোদ্ধার মন ছুঁয়ে গেছে। প্রসঙ্গত, দেশবরেণ্য শিল্পী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জন্ম ১৯৪৮ সালে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রিয়াভাষিণী ২০১০ সালে শিল্প ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘স্বাাধীনতা দিবস পুরস্কার’ লাভ করেন। বর্তমানে ফ্রিল্যান্স শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন। নানা সঙ্কট সত্ত্বেও ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী অক্লান্তভাবে লাভক্ষতির হিসাব আর প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের অভাবকে এক পাশে সরিয়ে রেখেই চর্চা করে যাচ্ছেন ।
×