ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধে সরকার কঠোর

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৯ আগস্ট ২০১৫

মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধে সরকার কঠোর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিক্সাসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ইতোমধ্যে সড়ক-মহাসড়কে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে কিছু কিছু জাতীয় সড়কে এসব পরিবহন চলছে। এ ব্যাপারে সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, পর্যায়ক্রমে সব সড়কেই এসব পরিবহন চলাচল বন্ধ হবে। এদিকে সরকারী এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় অটোরিক্সা শ্রমিক মালিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার সীতাকু-ে স্থানীয় সাংসদের বাড়ি ঘেরাও করেন সিএনজি অটোরিক্সার মালিক ও চালকরা। শ্রমিকদের ক্ষোভে বিক্ষোভে দিনভর উত্তাল ছিল ব্রাক্ষèণবাড়িয়া। এদিকে সরকারী সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ইতোমধ্যে পরিষদের পক্ষ থেকে জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এবার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি- সড়ক মন্ত্রী ॥ দীর্ঘদিন পরে হলেও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অনেকটাই কঠোর অবস্থানে সরকার। অটোরিক্সা সহ তিন চাকার যানবাহন মহাসড়কে চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন হলেও সিদ্ধান্ত থেকে তিন পরিমান সড়তে রাজী নন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আগে মানুষের জীব বাঁচাতে হবে। তারপর জীবিকার প্রশ্ন। তাই সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে সরকার কঠোর অবস্থানে। কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছর অনেকবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এটা আমরাই বাস্তবায়ন করেছি। সিএনজি অটো রিকশা চালকরাও বাস্তবতা বুঝতে পেরেছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে তারা মেনে নিয়েছেন। সড়ক ও পরিবহনে শৃঙ্খলা রক্ষা করাই সরকারের কঠিন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কাজ করলে কাজের সুনাম সবাই করবে। পদ্মাসেতু এখন বাস্তব। সেখানে ২৪ ঘণ্টা কাজ চলছে। মেট্রো রেল-১ টি হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শুরু হতে যাচ্ছে। যদি সড়কে শৃঙ্খলাই না থাকে তবে এসব কাজ ম্লান হয়ে যাবে। ছোট ছোট যান চলাচলের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ সব মহাসড়কে বাইলেন হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জীবনের চেয়ে জীবিকা বড় নয়। সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ফিটনেসবিহীন চালকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আগামী ১০ আগস্ট সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক। ওই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দিস্তায় দিস্তায় কাগজ খরচ হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এবার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবোই। তিনি বলেন, দেশের ২২ টি মহাসড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট প্রবণ। দেশে আড়াই লাখ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে সড়কের আওতায় ২১ হাজার ৫’শ কিলোমিটার। ১৮ হাজার সড়ক ছোট যানের জন্য আমরা ছেড়ে দিয়েছি। পরে আরও দেড় হাজার ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আশাকরি এই বাস্তবতাটি সবাই অনুধাবন করতে পারবেন। জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে সবাই সরকারকে সহযোগিতা করবে। সীতাকু-ে সাংসদের বাড়ি ঘেরাও ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা সীতাকু- থেকে জানান, চট্টগ্রাম-৪ সীতাকু-ের স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আলহাজ্ব দিদারুল আলমের বাড়ি ঘেরাও করেছে সিএনজি অটোরিক্সার মালিক ও চালকরা। এসময় তারা মহাসড়কে চার ঘণ্টা সিএনজি অটোরিক্সা চালানোর অনুমতি দেয়ার জোর দাবি জানান। এছাড়াও চালকদের দাবি আদায়ে সাংসদের জোরালো ভূমিকার দাবি করেন সিএনজি অটোরিক্সা মালিক ও চালকরা। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত আধাঘণ্টা উপজেলার সিটি গেইট এলাকায় অবস্থিত বাসার সামনে এ কর্মসূচী পালন করেছেন চালকরা। জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় ৬ শতাধিক সিএনজি অটোরিক্সা মালিক ও চালক সিটি গেইট এলাকায় জড়ো হন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে স্থানীয় সাংসদের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন রকম শ্লোগান দেয়। এ সময় স্থানীয় এমপি দিদারুল আলম ঘর থেকে বেরিয়ে মালিক ও চালকদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করলে চালকরা ফিরে যান। সাংসদ দিদারুল আলম বলেন, চালকরা সরকারের বেঁধে দেয়া দুই ঘণ্টা সময়ের স্থলে মহাসড়কে চলাচলে আরও দুই ঘণ্টা বাড়তি সময়ের দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবির বিষয়টি আমি সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেব। সীতাকু- থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা দাবি আদায়ে স্থানীয় সংসদের বাসা ঘেরাও করলেও কোন অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ সময় উত্তেজিত চালকদের দাবির বিষয়টি মন্ত্রনালয়ে জানানোর আশ্বাসে চালকরা চলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। উল্লেখ্য,সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের নির্দেশে গত ১ অগাস্ট থেকে মহাসড়কে সবধরনের ধীরগতির ও তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ করা হয়। বন্ধের একদিন আগে থেকে সাংসদ দেশের বাহিরে গেলে শুক্রবার দেশে আসেন। বন্ধের প্রতিবাদে সীতাকু- উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছেন চালক-মালিকরা। বিক্ষোভে উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মনবাড়িয়া থেকে জানান, মহাসড়কে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চলাচলের দাবীতে শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিশ্বরোড, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে কাউতলী ভাদুঘর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডায় প্রচন্ড বিক্ষোভ করেছে ক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা। ইতোমধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাসিরনগর, সরাইলসহ বিভিন্ন উপজেলা সদরের সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। শনিবার সকালে বিশ্বরোডে শত শত শ্রমিক সিএনজি নিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড থেকে বিরাট একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। এ সময় ব্রাহ্মনবাড়িয়া প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে এক প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ দিকে গত কয়েকদিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজি অটো চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রী দুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা মারাত্মক কষ্ট করছে।
×