ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর পাশে না থাকলে বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন হতো

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৯ আগস্ট ২০১৫

বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর পাশে না থাকলে বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন হতো

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ নানা আয়োজনে শনিবার স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৫তম জš§বার্ষিকী পালিত হয়েছে। স্মরণ ও আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব না থাকলে হয়ত বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন হতো। আর যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হোক না কেন, সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেও নির্বাচন হবে না। নেতারা ব্লগার হত্যাকা- বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ারও পরামর্শ দেন। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি বলেছেন, বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হতে পেরেছিলেন। অনেক রাজনীতিবিদ পারিবারিক পিছুটানের জন্য রাজনীতি থেকে হারিয়ে গিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেগম মুজিব পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে চাপের মধ্যে রাখলে তাঁর পক্ষে বঙ্গবন্ধু হওয়া সম্ভব নাও হতে পারত। যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শহীদ সেরনিয়াবাত, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান হিরণ, ফারুক হোসেন, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, ইকবাল মাহমুদ বাবলু, মাইনুল হোসেন খান নিখিল মাইনুদ্দিন রানা প্রমুখ। আমির হোসেন আমু আরও বলেন, বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জানতেন না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু হবেন। তবে বঙ্গমাতা বেগম মুজিব জানতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করছেন। বেগম মুজিব কখনো কোন কিছুর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কোন অনুযোগ করেননি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। আলোচনা সভার আগে আমির হোসেন আমু ‘বাঙালীর হৃদয়ের ফ্রেমে জাতির পিতা’ শিরোনামে যুবলীগ আয়োজিত মাসব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে দেখেন। ব্লগার হত্যাকা- বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে, তোফায়েল ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ব্লগার হত্যাকা- বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। অবশ্য এ ব্যাপারে সরকারের তৎপরতা অব্যাহত আছে। শনিবার সকালে রাজধানীতে বনানী কবরস্থানে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন হওয়ার জন্য কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সরকারে মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেও নির্বাচন হবে না। পরে দুপুরে রাজধানীর ধানম-ির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৫তম জš§বার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ নির্বাচনোত্তর বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, খালেদা জিয়া আজ বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন। তবে আন্দোলনের নামে দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করায় জনগণের গণআদালতে খালেদা খালেদার একদিন বিচার হবে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, উনি (খালেদা) বলেছিলেন, সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন না। কিন্তু আল্লাহর কি রহমত ৯২ দিন পরে উনি কোর্টে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে শূন্য হাতে ঘরে ফিরে গেছেন। কিন্তু ফেরেনি সেই মায়ের সন্তানরা। সেই সন্তানরা হলেন বাসের ড্রাইভার, হেলপারসহ পেট্রোলবোমায় নিহত শিশুসন্তানসহ অনেকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোঃ আবু কাওছারের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ এমপি প্রমুখ। এদিকে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ব্লগার হত্যাকা-ে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ কোন হত্যাকা-কে সমর্থন করে না। বঙ্গবন্ধুর পাশে বঙ্গমাতা না থাকলে দেশের ইতিহাস ভিন্ন হতো, সৈয়দ আশরাফ ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব না থাকলে হয়ত বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন হতো। এই পৃথিবীতে যত নেতা রাজনীতির মাঠে সফল হয়েছেন তার পেছনে ছিলেন একজন নারী। আর বঙ্গবন্ধুর পেছনে বঙ্গমাতা ছিলেন বলেই তিনি বঙ্গবন্ধু জাতির জনক হতে পেরেছিলেন। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৫তম জš§বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন জেলে ছিলেন, আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে ৬ দফা আওয়ামী লীগ, ৮ দফা আওয়ামী লীগ, ভাসানী আওয়ামী লীগ। এমনকি স্বাধীনতার পরে জাসদের জš§। সেই সকল দুর্যোগের সময় ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে, দৃঢ়চেতা মানুষ ছিলেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, বঙ্গমাতা আমার মায়ের মতো ছিলেন। আমার মা তাঁর ছোট বোনের মতো ছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ এত বড় পরিবার ছিল না। ছোট একটা পরিবার। সামরিক শাসক আইয়ুবের যাঁতাকলে ছিল। তখন রাজনীতি করা ও এর চিন্তা করাটাই ছিল দুরূহ ব্যাপার। সেই পরিবেশে বঙ্গবন্ধুর সকল কাজে সহযোগিতা করেছেন এবং সাহস যুগিয়েছেন বঙ্গমাতা। দুর্যোগময় পরিবেশে থেকেও সব কিছুর পাশাপাশি তিনি নিজের ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছেন। তাদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জেলে। তিনিই ছিলেন, তাঁর সন্তানদের অভিভাবক। তিনি ছেলে মেয়েদের মায়ের প্রয়োজন সেটাও মিটিয়েছেন, বাবার দায়িত্বও পূরণ করেছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গমাতা একজন মহীয়সী নারীর নাম। রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর যে কি ভূমিকা ছিল তা খোঁজ না নিলে জানা যাবে না। তিনি একজন নির্লোভ ব্যক্তি ছিলেন। সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল তাঁর। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন নেতারা। জাতির শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ সকাল সাড়ে ৮টায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বনানী কবরস্থানে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে জন্মদিনের কর্মসূচী শুরু হয়। সর্বস্তরের জনগণ ফুল দিয়ে, স্মৃতিচারণ এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ নানা আয়োজনে শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণীকে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সতিশ চন্দ্র রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ। পরে সেখানে বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেছাসেবকলীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ বঙ্গমাতার সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন দিনভর নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিবকে। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ব্লগার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ কোন হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে না।
×