ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে অপহরণের পর স্কুলছাত্রের কঙ্কাল উদ্ধার

এবার নীলফামারীতে গলা টিপে শিশু হত্যা

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৯ আগস্ট ২০১৫

এবার নীলফামারীতে গলা টিপে শিশু হত্যা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নীলফামারীতে এক শিশুকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। শিশুটির নাম সবুজ মিয়া (১৪)। শনিবার ভোরে নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জের রণচ-ি ইউনিয়নের বুল্লাই নদীর দক্ষিণ পাড় হতে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটির গলায় রক্ত জমাটের চিহ্ন ছিল। শিশু সবুজ ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মৃত আতিকুর রহমানের ছেলে। হত্যার পর দুর্বৃত্তরা তার লাশ নদীতে ফেলে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে শেরপুরে অপহরণের ছয় দিন পর শনিবার স্কুলছাত্র আরাফাত ইসলাম রাহাতের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশু রাহাতকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে নির্মমভাবে শিশু হত্যার প্রতিবাদে পাবনা, বরগুনা ও গাইবান্ধায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নীলফামারীতে নিহত শিশু সবুজের বিধবা মা সুরজন বেওয়া জানান, তার পাঁচ ছেলে। স্বামী পাঁচ বছর আগে মারা যান। বড় ছেলে ঢাকায় রিক্সা চালায়। অপর তিন ছেলে সবুজ, সাগর (১২) ও ছোট ছেলে সম্রাটকে (১০) নিয়ে তিনি রংপুরে ঝিয়ের কাজ করেন। সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার তারা রংপুর থেকে কিশোরীগঞ্জের রণচ-ি ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নিজবাড়িতে আসেন। সুরজন বেওয়া জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় সবুজ বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে গ্রামের অদূরে বাবুর স্ট্যান্ডে টেলিভিশন দেখতে যায়। কিন্তু রাত নয়টা পর্যন্ত সবুজ বাড়িতে ফিরে না আসায় তিনি বাবুর স্ট্যান্ডে সবুজকে খুঁজতে গিয়ে না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি খবর পান সবুজের লাশ বুল্লাই নদীতে পড়ে আছে। তারপর সেখানে ছুটে যান। রণচ-ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জানান, এলাকার জেলেরা রাতে লাইট জ্বালিয়ে বুল্লাই বিলে মাছ ধরছিল। এ সময় তারা সবুজের লাশ দেখতে পেয়ে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, বাবুর স্ট্যান্ডে জুয়ার মাধ্যমে ক্যারাম খেলার আসর বসিয়েছে সুকারু মিয়া নামে এক ব্যক্তি। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এসবের আড্ডা। ধারণা করা হচ্ছে ক্যারাম খেলাকে কেন্দ্র করে শিশু সবুজকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পর সুকারু মিয়া ক্যারামের মাধ্যমে চালানো জুয়ার আসর বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়। এ ঘটনায় শিশু সবুজের মা বাদী হয়ে শনিবার সকালে কিশোরীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। শেরপুরে স্কুলছাত্রের কঙ্কাল উদ্ধার ॥ শেরপুর শহরের বিপ্লব-লোপা মেমোরিয়াল স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র শিশু আরাফাত ইসলাম রাহাত গত ২ আগস্ট দুপুরে স্কুল থেকে শিববাড়ি এলাকার বাসায় ফেরে। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে সে পুরাতন গরুহাটিস্থ ‘সরকার ফার্নিচার মার্ট’ এ তার বাবা শহিদুল ইসলাম খোকনের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। কিন্তু পথে কয়েক যুবক স্থানীয় শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্ক সংলগ্ন শিশুপার্ক থেকে চকোলেট কিনে দেয়ার কথা বলে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই মুঠোফোনে এক যুবক আরাফাতের বাবা শহিদুলকে জানান, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে এবং দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে ছেলেকে ছেড়ে দেয়া হবে। বিষয়টি রাহাতের বাবা শহিদুল পুলিশকে জানান। এরপর মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহৃত আরাফাতকে উদ্ধারে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর উপজেলার মুন্সীরচর এলাকায় ওঁৎ পাতে। ওইসময় বিস্তৃত পাটের ক্ষেতের পাশে থাকা একটি জাংলায় মুক্তিপণের টাকা রাখা হলে দুর্বৃত্ত রবিন অপহৃত আরাফাতকে না নিয়ে এসে ওই টাকা নিয়ে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী একটি নির্জন বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ছদ্মবেশে থাকা পুলিশের দল তার পিছু পিছু দৌড়ে ওই বাড়ি থেকেই তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে ওই ঘটনায় অপহৃত শিশু আরাফাতের আপন খালু আব্দুল লতিফ (২২) ও জামালপুরের ইসলামপুরের ফুলকারচর মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে আসলাম বাবুসহ (২২) কয়েকজন জড়িত বলে তথ্য দেয়। তার দেয়া তথ্য মোতাবেক, পুলিশ শেরপুর ও জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে প্রধান আসামি আব্দুল লতিফ, সহযোগী আসলাম বাবু ও ইমরানকে গ্রেফতার করে। শনিবার গ্রেফতারকৃত আসলামের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গারো পাহাড়ের গহীন অরণ্যে অভিযান চালিয়ে রাহাতের মৃতদেহের বিভিন্ন অংশের কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। শেরপুরের সিনিয়র এএসপি (সার্কেল) মোঃ শাজাহান মিয়া জানান, যেদিন শিশু রাহাতকে অপহরণ করা হয়ছিল সেইদিনই বিকেল তিনটা থেকে চারটার মধ্যে তাকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। এমনকি মোবাইল ফোনের চার্জারের তার শিশু রাহাতের গলায় পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা। বরগুনায় সমাবেশ ॥ শিশু রবিউল হত্যার প্রতিবাদে বরগুনায় মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বেলা ১২টায় কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে স্থানীয় প্রেসক্লাব চত্বরে এ কর্মসূচী পালিত হয়। বক্তারা, রবিউলসহ দেশব্যাপী শিশু হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। দ্রুত সব হত্যাকারীকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাবনায় মানববন্ধন ॥ শিশু রাজন, রাকিব ও রবিউলসহ সারাদেশে শিশু নির্যাতন, হত্যার প্রতিবাদ ও শাস্তির দাবিতে সুজানগরে মানববন্ধন করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ ও যুগান্তর স্বজন সমাবেশ। শনিবার পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়কের দুলাইতে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এলাকার শিক্ষক ছাত্রসহ সুধি সমাজ অংশ নেন। গাইবান্ধায় মানববন্ধন ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন চালিয়ে একের পর এক শিশু হত্যার প্রতিবাদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও শিশু কিশোর মেলার উদ্যোগে গাইবান্ধা শহরের ১নং রেলগেট এলাকায় শনিবার মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শিশু হত্যা বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। বক্তারা অবিলম্বে শিশু রাজন, রাকিবসহ সকল জঘন্যতম হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক অপরাধীকে গ্রেফতার এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
×