ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই-ই কমেছে;###;দশ শিক্ষা বোর্ডে পাস ৬৯ দশমিক ৬ ভাগ;###;সবচেয়ে ভাল ফল রাজশাহী, খারাপ যশোর বোর্ডে

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ॥ ফল বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১০ আগস্ট ২০১৫

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ॥ ফল বিপর্যয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তনের পর প্রথমবারের মতো এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির অব্যাহত ‘বিস্ফোরণে’ ছেদ পড়ল। পরীক্ষায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই সূচকেই কমেছে। গত বছরের তুলনায় পাসের হার ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে প্রায় ২৮ হাজার। দশ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার এবার ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০ হাজার ৬০২ থেকে কমে এসেছে ৪২ হাজার ৮৯৪ জনে। হঠাৎ ফল খারাপের এ চিত্রকে বিপর্যয় বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে এর কারণ হিসেবে পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতায় পড়ালেখা ক্ষতিগস্ত হওয়া, সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন ও বণ্টন প্রক্রিয়ায় হঠাৎ পরিবর্তন, ও ইংরেজীতে খারাপ ফলকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। দশটি শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দশ লাখ ৬১ হাজার ৬১৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে সাত লাখ ৩৮ হাজার ৮৭২ জন। মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫২ ও ছাত্রী চার লাখ ৯৭ হাজার ৬৬২ জন। ছাত্রদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার ৩৬৩ জন এবং ছাত্রীদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে তিন লাখ ৪৯ হাজার ৫০৯ জন। ছাত্রের গড় পাসের হার ৬৯ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৩ হাজার ২৯৩ জন। আর ছাত্রীদের গড় পাসের হার ৭০ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯ হাজার ৬০১ জন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রবিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। এ সময় বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তার সঙ্গে ছিলেন। পরে দুপুর ১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, মাউশি’র মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন এবং মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা। দশটি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দেশের আট হাজার ২৯৪টি প্রতিষ্ঠানের দশ লাখ ৬১ হাজার ৬১৪ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ২৯ হাজার ৯৭২ জন। গত ১ এপ্রিল শুরু হয়ে ১১ জুন শেষ হয় পরীক্ষা। দেশের মোট দুই হাজার ৪২০টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ৬৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০১৪ সালে ছিল ৭৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এবার মাদ্রাসা বোর্ডের আলিমে গড় পাসের হার ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা ছিল ৯৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত বছর তা ছিল ৮৫ দশমিক ০২ শতাংশ। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহী বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং পাসের হার সবচেয়ে কম যশোর বোর্ডে ৪৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বোর্ডভিত্তিক ফল Ñ ঢাকা বোর্ড ॥ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ৭৬ হাজার ৭৭৮ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৩ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, গত বছর তা ছিল ৮৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৮৯৩ শিক্ষার্থী, গত বছর পেয়েছিল ৩১ হাজার ৯০২ জন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ (ডিআইবিএস) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল চার হাজার ৩৪৬ ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে তিন হাজার ১৯৯ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৭৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০৮ জন। দেশের ১৮টি সরকারী কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ডিআইবিএস কোর্স চালু রয়েছে। রাজশাহী বোর্ড ॥ রাজশাহী বোর্ড থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ সাত হাজার ১০৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮১ হাজার ৩৩০ জন। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত বছর তা ছিল ৭৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ২৫০ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল সাত হাজার ৬৪১ জন। কুমিল্লা বোর্ড ॥ কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ এক হাজার ৮০ ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে পাস করেছে ৫৯ হাজার ৭৭৮ জন। পাসের হার ৫৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছর ছিল ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৪৫২ জন। ২০১৪ সালে তা পেয়েছিল দুই হাজার ৬০০ জন। যশোর বোর্ড ॥ যশোর বোর্ড থেকে এবার এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ১৭ হাজার ৫৩৩ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৪৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, গত বছর ছিল ৬০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৯২৭ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল চার হাজার ২৩১ জন। চট্রগ্রাম বোর্ড ॥ চট্রগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৮০ হাজার ৭৬৫ ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে পাস করেছে ৫১ হাজার ২৪৩ জন। পাসের হার ৬৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭০ দশমিক ০৬ শতাংশ। চট্রগ্রাম বোর্ড থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ১২৯ জন, গত বছর পেয়েছিল দুই হাজার ৬৪৬ জন। বরিশাল বোর্ড ॥ বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৫৬ হাজার ৬৮০ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৯ হাজার ৯৭ জন। পাসের হার ৭০ দশমিক ০৬ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৩১৯ জন; গত বছর পেয়েছিল দুই হাজার ২২৫ জন। সিলেট বোর্ড ॥ সিলেট বোর্ড থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৫৮ হাজার ১২৪ জন। পাসের হার ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, গত বছর ছিল ৭৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৩৫৬ জন, গত বছর তা পেয়েছিল দুই হাজার ৭০ জন। দিনাজপুর বোর্ড ॥ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৯০ হাজার ৭২৪ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৩৯৫ জন। গত বছর তা পেয়েছিল চার হাজার ৪৭৪ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ॥ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৮৪ হাজার ৩৮৮ জন। পাসের হার ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৯৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৪৩৫ জন। গত বছর পেয়েছিল ছয় হাজার ২৫ জন। কারিগরি বোর্ড ॥ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এইচএসসি (বিকম) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৯৮ হাজার ২৯৬ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ০২ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৪৩০ জন শিক্ষার্থী। গত বছর পেয়েছিল ছয় হাজার ৩৯৩ হাজার জন। খারাপ ফলের চার কারণ ॥ পরীক্ষার আগ মুহূর্তে টানা তিন মাসের নাশকতায় শ্রেণীকক্ষে পাঠদানসহ প্রস্তুতি মারাত্মকভাবে ব্যহত হওয়ার খেসারত দিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা। বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতায় পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ধাক্কা খেয়েছে পাসের হার ও জিপিও-৫ প্রাপ্তিতে। গত বছরের তুলনায় পাসের হার ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে প্রায় ২৮ হাজার। ২০০৩ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তন হওয়ার পর থেকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ একই সঙ্গে কমে যাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। যাকে অনেকেই বলছেন ফল বিপর্যয়। তবে সহিংসতাই কি ফল বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ নয়। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, পরীক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহিংসতায় প্রস্তুতি ব্যহত হওয়া ছাড়াও সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন ও বণ্টন প্রক্রিয়ায় হঠাৎ পরিবর্তন, ইংরেজীতে খারাপ ফল ও খাতা মূল্যায়নে নমনীয়তা পরিহার-এ চার কারণেই এবারের খারাপ ফল। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার কারণে চলতি বছরের শুরু থেকেই সারাদেশের শিক্ষাঙ্গন ছিল অনেকটা অচল। লাগাতার হরতাল অবরোধ দিয়ে মানুষ হত্যা ছিল শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে আতঙ্ক। যে সময়টায় পরীক্ষার প্রস্তুতি বিশেষ কোন কলেজগুলোতে নির্বাচনী পরীক্ষা চলছিল তখন থেকেই চলে তা-ব। অধিকাংশ এলকায় নির্বাচনী পরীক্ষাও ব্যহত হয়। বারবার পিছিয়ে কোন মতে নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ করতে পারলেও কলেজের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়েই অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, পরীক্ষার আগ মুহূর্তে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। নতুন নতুন বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন প্রচলন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভালভাবে প্রস্তুতিও নিতে পারছে না। কলেজগুলোতে নেয়া যায়নি অতিরিক্ত ক্লাস। অথচ প্রতিবছর নির্বাচনী পরীক্ষার আগে ও পরে কলেজগুলো পরীক্ষার্থীদের বাড়তি ক্লাস-পরীক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। নাশকতায় পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিয়ে অভিভাবকদের এমন অভিযোগের মধ্যেই ১ এপ্রিল থেকে পরীক্ষায় বসে ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ পরীক্ষার্থী। রবিবার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, গ্রেডিং পদ্ধতির পর প্রথমবারের মতো পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির অব্যাহত ‘বিস্ফোরণে’ ছেদ পড়েছে। গত বছর যেখানে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, এবার সেখানে পাস করেছে ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। গেল বছর যেখানে জিপিএ-৫ পায় ৭০ হাজার ৬০২ জন, এবার সেখানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৮৯৪ জনে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৩ সালের পর কোন বছরেই তার আগের বছরের তুলনায় সকল সূচকে খারাপ ফল হয়নি। প্রতিবছরই পাসের হার না হয় জিপিএ-৫ বেড়েছে। জানা গেছে, ২০০৩ সালে পাসের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ২০০৪ সালে ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ২০০৫ সালে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ, ২০০৬ সালে ৬৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৬৫ দশমিক ৬০ ভাগ, ২০০৮ সালে গড় পাসের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬ দশমিক ১৯ শতাংশ, পাসের হার কমে দাঁড়ায় ৭২ দশমিক ৭৮ শতাংশে, ২০১০ সালে আবার বেড়ে হয় ৭৪ দশমিক ২৮ শতাংশ, ২০১১ সালে আরও বেড়ে ৭৫ দশমিক ০৮ শতাংশ, ২০১২ সালে ছিল ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ২০১৩ সালে ছিল ৭৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, এবং গেল বছর বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশে। এ সময়ে জিপিএ-৫ সব সময়েই বেড়েছে। ২০০৩ সালে গ্রেডিংয়ে প্রথম বছর যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ২০ জন সেখানে গত বছর এ সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৭০ হাজার ৬০২ জনে। এবার যদিও সংখ্যা কমে এসেছে ৪২ হাজার ৮৯৪ জনে। গত ৫ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৯ সালে জিপিএ-৫ পায় ২০ হাজার ১৩৬ জন। ২০১০ সালে ২৮ হাজার ৬৭১ জন। ২০১১ সালে ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন। ২০১২ সালে ৬১ হাজার ১৬২ জন। ২০১৩ সালে ৫৮ হাজার ১৯৭ জন। আর গেল বছর ৭০ হাজার ৬০২ জন। রবিবার সকালে গনভবনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ফলাফলের কপি হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এ সময় উচ্চ মাধ্যমিকে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে কমে যাওয়ার জন্য বছরের শুরুতে বিএনপি ও জামায়াতের টানা হরতাল-অবরোধকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, এখানে দুর্ভাগ্য, বিএনপি-জামায়াত যদি আত্মঘাতিমূলক জ্বালাও-পোড়াও কর্মকা- না করত, পাসের হার আরও ভাল হতে পারত। শিক্ষামন্ত্রী বলছিলেন, এবার যখন এ পরীক্ষাটা হয় তখন বাংলাদেশে একটি বৃহৎ সমস্যা চলছিল। এটি ছিল মানুষ্য সৃষ্ট। সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। যেদিন থেকে পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে হরতাল তো ছিলই এর সঙ্গে অবরোধ যুক্ত হলো। এরপর শুরু হলো মানুষ খুন করা। হরতালের নামে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারা। তবে ফল খারাপের পেছনে আছে আরও অনেক কারণ। জানা গেছে, প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে একেকটি বিষয়ে ৩২ সেট প্রশ্ন হওয়ায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। সৃজনশীল ২১টি বিষয়ের প্রশ্ন প্রণয়ন ও নতুন বণ্টন পদ্ধতির কারণে অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র বলেন, প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় শঙ্কা থাকে এমন ২১টি বিষয়ে এবার ৩২ সেট করে প্রশ্ন করা হয়েছিল। আট বোর্ড একেকটি বিষয়ে চার সেট করে মোট ৩২ সেট প্রশ্ন করে। কোন বোর্ডে কোন প্রশ্নে পরীক্ষা হবে তা লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি এক বোর্ডের করা প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে অন্য বোর্ডে। উদাহরণ হিসেবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, রাজশাহী বোর্ডের তৈরিকৃত প্রশ্ন ওই বোর্ড ছাড়া অন্য সাতটি সাধারণ বোর্ডে জন্য লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। আগে কেন্দ্রীয়ভাবে এ সব প্রশ্ন করা হতো জানিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, এর ফলে ইউনিক প্রশ্ন হলেও এবার প্রশ্নের ট্রেন্ড পাল্টে যায়, যা ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, ২০১৪ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের কারণে এবার প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডে আলাদা প্রশ্নপত্র করা হয়। কোথায় কোন প্রশ্নে পরীক্ষা হবে তা ঠিক হয় লটারির মাধ্যমে। যে সব শিক্ষার্থী সনাতনী পদ্ধতিতে আগের দু’তিন বছরের সিলেকটিভ পড়াশোনা করেছে তাদের পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। এছাড়া হরতাল-অবরোধের কারণে পরীক্ষার আগে ক্লাস করতে না পারায় ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্ন হওয়ায় বিগত বছরের প্রশ্নের সঙ্গে এক ধরনের সামঞ্জস্যতা রাখা হতো। এবার লটারির মাধ্যমে প্রশ্ন নির্ধারণ হওয়ায় সেটা রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক শিক্ষার্থী খারাপ ফল করেছে। অন্য বছরগুলোতে উত্তরপত্র মূল্যায়নে শিক্ষকদের উদার হওয়ায় নির্দেশনা দেয়া হলেও ধারাবাহিক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এবার পাস হার বাড়ানো নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন নির্দশনা ছিল না বলেও কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন। ফলাফলের সব সূচকে অবনতি হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করলেও একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সৃজনশীল প্রশ্নে ত্রুটি আছে। প্রস্তুতিতেও অভাব আছে। আমরা এটা অস্বীকার করি না। তবে এর মধ্য দিয়েই এগুতে হবে। এবার সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণ প্রক্রিয়া উন্নত করা হয়েছে। এর কারণেও হয়তো পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। এদিকে ইংরেজীতে অর্ধেক শিক্ষার্থীর ফেল করার কারণে এবার সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ডে। এই বোর্ডে পাসের হার সর্বনিম্ন ৪৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ইংরেজীতে ৫০ দশমিক ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ অর্থাৎ ৪৯ দশমিক ০৯ শতাংশ ফেল করার কারণে পাসের হারে সবার শেষে। যশোর শিক্ষা বোর্ডে গত বছরও ইংরেজীতে পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। এবার পাস মাত্র ৫০ দশমিক ৯১ শতাংশ। ইংরেজী বিষয়ের প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছিল জানিয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, পরীক্ষার দিন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকই বিষয়টি অবহিত করেছিলেন। পরীক্ষার ফলাফলেও এর প্রতিফলন দেখা গেছে। এবার লটারির কারণে অন্য বোর্ডের প্রশ্নে এই বোর্ডে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। প্রাথমিকভাবে ইংরেজীর খারাপ ফলের কারণে সার্বিক ফলে এর প্রভাব পড়েছে জানিয়ে যশোর বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, পরবর্তীতে যেন এ রকম না হয় সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। ফল পুনঃনিরীক্ষা ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক থেকে আগামী ১০ থেকে ১৬ অগাস্ট পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ। ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-চওঘ) দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সকল বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ৩০০ টাকা ফি কাটা হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়েরও আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।
×