ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনে বন্দুকযুদ্ধে ছয় বাঘ শিকারী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১০ আগস্ট ২০১৫

সুন্দরবনে বন্দুকযুদ্ধে ছয় বাঘ শিকারী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ও সাতক্ষীরা ॥ সুন্দরবনে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ছয় চোরা শিকারি নিহত হয়েছেন। রবিবার বিকেলে মান্দারবাড়িয়া খালের উত্তর পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে চারটি বন্দুক, একটি পিস্তল ও দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এদিকে, সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে তিনটি বাঘের চামড়াসহ ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। জানা গেছে, গোপন খবরের ভিত্তিতে রবিবার ভোরে কয়রা থানা পুলিশ কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা গ্রামের শফিকুল ইসলাম গাজীর বাড়িতে অভিযান চালায়। ক্রেতা সেজে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে পুলিশ তিনটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়। রবিবার সকালে আটকদের নিয়ে পুলিশ চোরা শিকারির সন্ধানে সুন্দরবনে অভিযানে যায়। বিকেল চারটার দিকে মান্দারবাড়িয়া খালের উত্তর পাশে পুলিশের সঙ্গে চোরা শিকারিদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধে ছয় বাঘ শিকারি নিহত হন। এ সময় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। নিহতরা হলেনÑ কয়রা উপজেলা এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিক সানা, রফিকুল ইসলাম, আনসার আলী সানা, মামুন গাজী, মজিদ গাজী ও বাপ্পী ঢালী। কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বন্দুকযুদ্ধে ছয়জনের নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নিহতরা বাঘ শিকারি। তারা সুন্দরবনের বাঘ হত্যা করে চামড়া, হাড়, দাঁত ইত্যাদি পাচার করেন। তাদের কাছ থেকে বাঘের চামড়া ও পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। খুলনার পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, রবিবার সকালে তিনটি বাঘের চামড়াসহ গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে সুন্দরবনে তাদের আস্তানায় আরও বাঘের চামড়া উদ্ধারের জন্য পুলিশ অভিযান চালায়। বিকেল চারটার দিকে অভিযান দলটি মান্দারবাড়িয়া খাল এলাকার কাছে চোরা শিকারিদের আস্তানার কাছে গেলে পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে চোরা শিকারি সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে সেখান থেকে ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সাতক্ষীরা থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, মাত্র দু’দিন আগে খুলনা থেকে বাঘের ৬৯টিরও বেশি হাড়সহ অসংখ্য দাঁত ও নখ আটকের পর সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে আবারও তিনটি সদ্য শিকারকৃত বাঘের চামড়াসহ নখ, দাঁত ও হাড় উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার ভোর চারটার দিকে পশ্চিম সুন্দরবন সংলগ্ন চরামুখ গ্রাম থেকে এসব বাঘের চামড়া, নখ ও দাঁত উদ্ধার করা হয়। এ সময় একই গ্রামের আব্দুল গাতিদারের ছেলে সফি গাতিদার ও তার স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চরামুখ ও জোরশিং গ্রাম থেকে বাঘ সফিকুল, পরে সফিকুলের ভাই, ভাইয়ের শ্বশুরসহ শিকার ও পাচারে জড়িত আরও ১১ ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে। গোটা অভিযানের নেতৃত্ব দেন কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ হরেন্দ্রনাথ সরকার। এদিকে, আটক এসব বাঘ শিকারিকে নিয়ে সুন্দরবনে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ছয় বাঘ শিকারি নিহত হন। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র নিশ্চিত করে জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোর চারটার দিকে চরামুখ গ্রাম থেকে সফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ। তারা শরীরের সঙ্গে বাঘের চামড়া পেঁচিয়ে ও ব্যাগে ভরে রাখা নখ, হাড় ও দাঁত নিয়ে পূর্বনির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতে যাওয়ার পথে আটক হয়। আটকের পর তারা পুলিশকে জানায়, জোরশিং গ্রামের নুরুজ্জামান ও সঙ্গীরা মিলে রবিবার রাতে কাঁকড়া শিকারের নৌকার মধ্যে লুকিয়ে এসব চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গ নিয়ে এলাকায় আসে। তথ্য পেয়েই পুলিশ জোরশিং গ্রামের নুরুজ্জামানসহ ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও ১০ জনকে আটক করে। আটককৃত অন্যরা হলোÑ চরামুখা গ্রামের মোংলা সানার ছেলে আনছার সানা, সৈয়দ সানার ছেলে সিদ্দিক সানা, আব্দুল গাতিদারের অপর ছেলে ও সফিকুল ইসলামের ভাই মামুন গাতিদার, জামাত ঢালীর ছেলে বাপ্পী ঢালী ও মামুন গাতিদারের শ্বশুর। তবে মামুন গাতিদারের শ্বশুরসহ অন্য আটকদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। এদিকে, আটকদের নিয়ে দুপুরে পুলিশ সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগে অভিযান চালায়। স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, পুলিশ আটকদের নিয়ে সুন্দরবনে অভিযানে গিয়ে শিকারিচক্রের শিকারের পর বাঘের মাংস এবং অপরাপর অঙ্গপ্রতঙ্গ কোথায় লুকিয়ে রেখেছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনুসন্ধানে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, চামড়াগুলো দেখে মনে হয়েছে ৫-৭ দিন আগেই সেগুলো শিকার করা হয়ে থাকতে পারে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আটক ব্যক্তিরা কাঁকড়া শিকারের নাম করে বনে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে বাঘ ও হরিণ শিকার করে অপরাপর সহযোগীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে।
×