মোরসালিন মিজান
একটু ছন্দপতন বলতে হবে। টানা কয়েক বছর ভাল ফল। এতো ভাল যে, এই ভাল নিয়েও কথা হয়েছে। আর তারপর মন্দ। অপেক্ষাকৃত মন্দ ফল হয়েছে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায়। রবিবার প্রকাশিত ফলে অনেকেই অবাক। এমনকি খুব ভাল কিছুর আশায় থাকা শিক্ষার্থীরাও বেদনাহত হয়েছে। তবে মন্দা সময়ে ভাল করার বাড়তি আনন্দ! আনন্দটা এদিন বিশেষভাবে চোখে পড়েছে। নিজ নিজ কলেজ ক্যাম্পাস এক রকম মাতিয়ে রেখেছিল শিক্ষার্থীরা। ভাল ফলাফল করা কলেজের ক্যাম্পাসে রীতিমতো উৎসব লেগে ছিল। অল্প যা কান্না, উৎসবের জন্য সামনে আসতে পারেনি।
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ ৫ কমে ৪২ হাজার ৮৯৪ জনে নেমেছে। এমনকি ঢাকা বোর্ডে পাস করেছে ৫৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে রাজধানী শহরের নামকরা কলেজগুলোতে পাসের হার ভালই। শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। উদ্যাপনেও অংশ নিয়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তরাই। মেয়েরা বেশি এগিয়ে ছিল বলতে হবে। কারণ ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা এগিয়ে এবার। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩৬৩ ছাত্র। ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫০৯ জন ছাত্রী। ছাত্রীদের পাসের হার ৭০ দশমিক ২৩ শতাংশ। ছাত্রদের সেটি ৬৯ দশমিক ০৪ শতাংশ।
দুপুরে ভিকারুননিসা নূন কলেজের ক্যাম্পাসে ঢুকে মেয়েদের আনন্দটা দেখা হয়। ইউনিফর্ম পরা অসংখ্য মেয়ে। সে কী হৈ হুল্লোড়! ছোটাছুটি! স্কাউটের সদস্যরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে পুরো এলাকায় উৎসবের বার্তা দেয়। বাকিরা দল বেঁধে নাচছিল, গাইছিল। এর ফাঁকে কথা হয় জিপিএ-৫ পাওয়া অদিতীর সঙ্গে। আনন্দে আত্মহারা মেয়েটি খুব কিছু বলতে পারলো না। তাঁর ছোট্ট বলাÑ এইচএসসিতে ভাল না করলে সব শেষ। এ জন্য অনেক কষ্ট করেছি। সেই চেষ্টার ফল আজ ফেলাম। কী যে আনন্দ লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। শেফা নামের আরেক শিক্ষার্থী নিজের পরিশ্রমের কথা তেমন বললো না। বাবা মা ও কলেজের শিক্ষদের কথা বললো। কৃতজ্ঞতা জানালো তাঁদের প্রতি। তার মতে, এই মানুষগুলোর ইচ্ছা সে পূরণ করেছে। এটাই তার খুশি।
ঢাকা কলেজের বিশাল ক্যাম্পাস। সামনের অংশে জড়ো হয়েছিল এইচএসসির ফলাফল প্রত্যাশীরা। তাদের উদ্যাপন দেখে বোঝা যাচ্ছিল জিপিএ-৫ এখানে নেহায়েত কম আসেনি। আনন্দ করতে করতে ক্লান্ত কয়েকজনের কাছে গিয়ে ফল জানতে চাইলে সবাই জিপিএ-৫ পাওয়ার কথা জানায়। আশিষ নামের এক শিক্ষার্থীর মতে, সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে তারা এখন অভ্যস্থ। প্রশ্ন কঠিন হলেও চিন্তার বাইরে চলে যায় না।
কিছু কলেজের নামধাম অতো না। তবে ফল ভাল করেছে। তেমন একটি মিরপুরের বিসিআইসি কলেজ। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের এ কলেজটি থেকে এবার পরীক্ষা দেয় ১২১৭ জন। পাস করেছে ১১৯৯ জন। তার চেয়ে বড় আনন্দের সংবাদÑ এখান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২৪ জন। উদ্যাপনটাও তাই খুব চোখে পড়েছে। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, শিক্ষক এবং অভিবাবকরাও এক সঙ্গে আনন্দ করেছে।
এদিকে, বিপরীত চিত্রটি দেখা গেল মতিঝিল আইডিয়াল কলেজে। এখানেও বেশ উদ্যাপন হচ্ছিল। তবে আনন্দের পাশাপাশি বিষাদটাও বেশ ছুঁয়ে দেয়। বহু বছর ধরে বিপুলভাবে প্রশংসিত হওয়া কলেজটি এবার অনেক পিছিয়ে। ফল খারাপ। এক ছাত্রী এমনভাবে কাঁদছিল যে, দেখে মন খারাপ হয়ে গেছে। কোন কথা বলা গেল না তার সঙ্গে। মূল ভবনের এক কোনে একলাটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল শিহাব নামের আরেক ছাত্র। ফল বিপর্যয়ের কিছুটা প্রভাব তার ওপরও পড়েছে। বললো, অল্পের জন্য জিপিও-৫ পাইনি। এত পরিশ্রম করার পর এমন ফল মেনে নিতে পারছি না।
এভাবে মিশ্র অনুভূতির একটি দিন পার করেছে কলেজগুলো। আগামীর দিকে কেউ একধাপ এগিয়ে গেছে। কেউ ব্যর্থ হয়েছে প্রত্যাশা পূরণে। কচিকাঁচা প্রাণের এমন উচ্ছ্বাস, এমনকি কান্না সফল পরিণতি পাক। সবাইকে অভিনন্দ।