ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বাংলা একাডেমি চত্বর যেন একখণ্ড আদিবাসী ভূমি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ আগস্ট ২০১৫

বাংলা একাডেমি চত্বর যেন একখণ্ড আদিবাসী ভূমি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবিবার ছিল আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। আর এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চসহ চার পাশে জায়গাটি যেন হয়ে ওঠে এক খ- আদিবাসী ভূমি। এখানে অনুষ্ঠিত হয় আদিবাসী পণ্যসামগ্রীর মেলা। ছোট ছোট স্টলজুড়ে শোভা পেয়েছে প্রকৃতিসংলগ্ন মানুষদের তৈরি বাহারি পোশাক থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। আর গোটা আয়োজনে রং ছড়ায় বর্ণিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সেই ছিল আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে সেমিনার ও আলোচনা। দুই দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। বেলা দেড়টায় সূচনা হওয়ার মেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শুরু হয় বিকেলে। মঞ্চজুড়ে ভেসে বেড়ায় পাহাড়ী কিংবা সমতলের আদিবাসীদের গানের সুর। শরীরী ছন্দে উপস্থাপিত হয় নানা সম্প্রদায়ের নৃত্য। নানা বাদ্যের তালে সুরেলা শব্দধ্বনি ছড়িয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করে আদিবাসীদের ব্যান্ডদল মাদল। পাহাড়ী ও সমতলের ভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর মনমাতানো নাচে-গানে আয়োজনটি হয়ে ওঠে রংময়। নৃত্য পরিবেশন করে রাঙ্গামাটির দল হিমাওয়ান্তি। হৃদয় প্রশান্ত করা চাকমা ভাষার দেশাত্মবোধক গানের সুরে পরিবেশিত নৃত্যটি ছিল দর্শকদের জন্য দারুণ উপভোগ্য। বসন্তের নাচ পরিবেশন করে ব্রতী নামের সংগঠন। এছাড়া সিলেটের মনিপুরী সাংস্কৃতিক দল পরিবেশন করে মনিপুরী নাচ। নজরুল মঞ্চের চার পাশজুড়ে সাজানো হয়েছে ৩৮টি স্টল। এসব স্টলে রয়েছে পাহাড়ীদের হাতের ছোঁয়ায় নির্মিত বাহারি পোশাক থেকে শুরু করে গৃহস্থালি নানা পণ্য। একটি স্টলে দেখা মেলে চমৎকার গড়নের বেতের মাছ রাখার ঝুড়ি কুদাংসা। এছাড়াও ওয়ালম্যাট থেকে শুরু করে কারুকার্যময় ব্যাগ কিংবা ডুলা, হুলা, কুরুম নামে বাঙালীদের কাছে অপরিচিত পণ্য রাখার সামগ্রী। এর আগে রোদমাখা দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. শামীম ইমাম। আজ সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে মেলা। এছাড়া সকালে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আদিবাসী বিষয়ক সেমিনার। বিশ্বব্যাপী বাংলা বই ছড়িয়ে দেবে ‘সেইবই’ ॥ বাংলায় রচিত বইয়ের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছে ‘সেইবই ডটকম’। এটি বাংলাদেশের প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ অনলাইন ইবুক স্টোর। এ স্টোরে শুধু বাংলায় রচিত বই পড়তে পারবেন পাঠকরা। বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে পাঠক এ ইবুক স্টোরে তার পছন্দের লেখা সংগ্রহ করে মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যম স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে পড়তে পারবেন। রবিবার ‘সেইবুক’-এর উদ্যোগে এক প্রীতিসম্মিলনীর আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনা পার্কের রমনা গ্রীন রেস্তোরাঁ প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে উঠেছিল লেখক কবি সাহিত্যিকদের পদচারণায়। সেইবই ডটকমের আয়োজনে বসে এই ভিন্নধর্মী উৎসব। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সব রকম উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে আমরা ইবুক নিয়ে কাজ করছি। সেইবই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। তাই সেইবই ধন্যবাদ পেতেই পারে। আগামীতে লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে এমন উদ্যোগের পাশে আমরা সব সময় থাকব। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব রোবায়েত ফেরদৌসের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেইবই ডটকম ও র‌্যাভেন সিস্টেমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিল উদ দৌলাহ। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সকল প্রকার বই, সাময়িকী, গবেষণা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেবা ও পণ্যের সর্ববৃহৎ উৎস এবং আর্কাইভ হিসেবে কাজ করছে সেইবই। আপনাদের সহযোগিতায় ইবুক এর কাজ এগিয়ে চলছে। পর্যায়ক্রমে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সব বই-ই ইবুক করার কাজ সম্পন্ন করার ইচ্ছা আছে আমাদের। ডার্ড গ্রুপের ফিন্যান্স ডিরেক্টর সেঁজুতি দৌলাহ বলেন, ডার্ড গ্রুপের একটি অন্যতম উদ্যোগ সেইবই। এটি আমাদের প্রাণের একটি প্রজেক্ট। আমরা চাই লেখক-কবিদের নিয়ে কাজ করতে। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, কবি আল মাহমুদ, আসাদ চৌধুরী, সেলিনা হোসেন, মুহাম্মদ নূরুল হুদা, কাইজার চৌধুরী, আনিসুল হক, আহসান হাবীব, আন্দালিব রাশদী প্রমুখ। অনলাইনে বইয়ের প্রচার ও প্রসারে এ উদ্যোগের প্রশংসা করে অতিথিরা বলেন, বাংলা ভাষায় বিকাশে এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের বই বিপণনের ক্ষেত্রে সেইবই কাজ করে যাচ্ছে। পাঠকরা বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন লেখকের বই সহজেই কিনতে পারছেন। অনলাইনের মধ্য দিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে ‘সেইবই’। ডার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এতেমাদ উদ দৌলাহ সমাপনী বক্তব্যে বলেন, লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে এমন আয়োজন সত্যিই অভিনব। আগামী দিনেও সাহিত্যিকদের নিয়ে এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানান, এই ইবুক স্টোর থেকে পাঠক যখন কোন বই পড়বেন, তখন সে বইয়ের লেখক ৭০ শতাংশ টাকা পাবেন, আর বাকি টাকা পাবেন সেইবই ডটকম কর্তৃপক্ষ। এ স্টোরে কবিতা, উপন্যাস, গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, রূপকথাসহ বিভিন্ন বইয়ের আলাদা আলাদা বিভাগ রয়েছে। তাই পাঠক চাইলে সহজেই তার পছন্দের লেখকের বই খুঁজে বের করে পড়তে পারবেন। ঠিকানা :িি.িংযবরনড়র.পড়স। ‘আলোর নাচন পাতায় পাতায়’ ॥ গালাম হায়দার ও বিলু সিদ্দিকীর গাওয়া গান নিয়ে অডিও প্রযোজনা সংস্থা জি-সিরিজ প্রকাশ করেছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের এ্যালবাম ‘আলোর নাচন পাতায় পাতায়’। রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে এ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী তপন মাহমুদ, আমিনা আহমেদ, বিশ্বজিৎ রায় ও জি-সিরিজের কর্ণধার নাজমুল হক ভুঁইয়া প্রমুখ। মোড়ক উন্মোচন শেষে প্রকাশিত এই নতুন এ্যালবামটি থেকে বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা। প্রকাশিত এ্যালবামে মোট দশটি গান রয়েছে। এ্যালবামের গানগুলো হলো- এইতো ভালো লেগেছিলো, আজি মর্মও ধবনি কেন, ওগো শোন কে বাজায় বাঁশি, বনে যদি ফুটল, এ পারে মুখর হলো, আজি বর্ষ রাতের শেষে, এসো শ্যামল সুন্দর, পিনাকেতে লাগে টঙ্কার, আমার দোসর যে জন, ওগো ওনারে নারে ইত্যাদি। মঞ্চস্থ পাইচো চোরের কিচ্ছা ॥ রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো ঢাকা পদাতিক প্রযোজিত নাটক ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’। প্রযোজনাটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় ছিলেন কাজী চপল। বিখ্যাত এক চোর পাইচো। এই চোরকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে নাটকের কাহিনী। এক পর্যায়ে পাইচো কোটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় যে, মহেশ্বরী রাজকন্যাকে সে চুরি করে রাজা কোটের কাছে এনে দেবে। পাইচোর বাবাও ছিল চোর। চুরি বিদ্যা শেখার জন্য তিনি রেখে গেছেন অনেক বই। পাইচো বাবার রেখে যাওয়া বই পড়ে কৌশল শেখে। এরপর সে রাজকন্যাকে চুরি করার জন্য রওনা হয়। এদিকে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় অস্থিরতা। বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত পাইচো চোরের হাত থেকে রাজকন্যাকে রক্ষা করা সম্ভব হয় না। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনী।
×