ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেকে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ

৫ হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১০ আগস্ট ২০১৫

৫ হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন কেজি স্কুল, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অর্ধশতাধিক কওমি মাদ্রাসা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচয় গোপন করে নিয়মিত পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত ৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে চট্টগ্রামের কমপক্ষে ১০টি কওমি মাদ্রাসায় রয়েছে দুই সহস্রাধিক রোহিঙ্গা শিশু। বিদেশী এনজিওর মদদ ও আর্থিক সহায়তায় কতিপয় লোভী শিক্ষকের কারণে কৌশলে ঐসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওরা অনায়াসে ভর্তি হচ্ছে। রোহিঙ্গা জঙ্গী আরএসওর অর্থায়নে পরিচালিত একাধিক কওমি মাদ্রাসার বহু রোহিঙ্গা ছাত্র জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ বলে অভিযোগ উঠেছে। পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা-ে ভাড়ায় গিয়ে থাকে ওইসব রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী। স্কুল ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে এসএসসি, এইচএসসি পাস করে রোহিঙ্গা সন্তানরা নির্বিঘেœ পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। নিজেদের বাংলাদেশী দাবি করে পরীক্ষা পাসের সনদ দেখিয়ে জাতীয় সনদও হাতিয়ে নিয়েছে ওইসব রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীর অনেকে। মিয়ানমারে নিপীড়িত মুসলিম হিসেবে সহানুভূতি দেখিয়ে মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থান দেয়া হলেও এসব রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী একদিন এ দেশের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ। সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের (আরএসও) ক্যাডাররা ইতোপূর্বে বিভিন্ন নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টি কাজে অংশগ্রহণ ছাড়াও জঙ্গীদের সঙ্গে বোমা হামলায়ও যোগ দিয়েছে এমন অভিযোগ আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। রোহিঙ্গা জঙ্গীরা কট্টরপন্থী মৌলবাদীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পার্বত্য বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলাতে বেশিরভাগই জঙ্গীপনা সৃষ্টি করতে আরএসওর অর্থায়নে মাদ্রাসা-মক্তব ও এতিমখানা গড়ে তুলতে বেশি আগ্রহী। এক শ্রেণীর ধান্ধাবাজ নেতার কারণে সমাজসেবা অধিদফতরসহ বিভিন্ন ফাউন্ডেশন থেকে সরকারের বরাদ্দকৃত বাৎসরিক বাজেট চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের গড়া একাধিক এতিমখানায়। আর এ কাজে মোটা অঙ্কের একটি ভাগ যাচ্ছে সরকারদলীয় কতিপয় নেতার পকেটে। দেশের এতিম অসহায় শিশু-কিশোর এতিমদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারী রসদ সামগ্রী ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে এতিম নামধারী ওইসব রোহিঙ্গা সন্তানরা। কক্সবাজার সরকারী কলেজের পেছনে সরকারী জায়গা দখল করে রোহিঙ্গা জঙ্গী বিভিন্ন মামলার আসামি হাফেজ ছলাহুল ইসলাম পরিচালনাধীন ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টার ও লিংক রোডের মুহুরী পাড়ায় আরএসও বাংলাদেশের সমন্বয়ক সদ্য জামিনে মুক্ত রোহিঙ্গা জঙ্গী মৌলভী ছালামত উল্লাহর পরিচালনাধীন আদর্শ শিক্ষা নিকেতন, ইসলামপুর জুম নগরে এবং পিএমখালী পাহাড়ে গড়ে ওঠা জামিনে মুক্ত রোহিঙ্গা জঙ্গী আবু ছালেহ পরিচালনাধীন মাদ্রাসায় বহু রোহিঙ্গা এবং আরএসও ক্যাডার রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওইসব এতিমখানায় দেশীয় এতিমদের নামে বরাদ্দকৃত রসদপাতি যাচ্ছে রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত ভুয়া এতিমদের পেটে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী জাতিসংঘের কতিপয় প্রতিনিধির সহায়তা পেয়ে রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন আরএসও এবং দেশে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সহযোগিতায় মিয়ানমারের বংশোদ্ভূত রোহিঙ্গা যুবকরা স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার, রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বহু কিন্ডার গার্টেন কেজি স্কুল, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং অরএসও অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং কওমি মাদ্রাসায় প্রায় ২ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা সন্তান ভর্তি রয়েছে। অনেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের অথবা দালালের মাধ্যমে সংগ্রহকৃত ভুয়া নাগরিকত্ব সনদ নিয়ে প্রথমে কেজি বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা (পিএসসি) শেষ করার পর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে এসএসসি পাস শেষে অনেকে পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। রোহিঙ্গা সন্তানদের যারা কওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছে, তাদের সঙ্গে সরাসরি আরএসও ক্যাডারদের যোগাযোগ রয়েছে বলে সূত্র দাবি করেছে। বৃহস্পতিবার কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু এলাকায় পুলিশ ৪ রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছে।
×