ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব দোষ মাথা পেতে নিলেন ক্লার্ক

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১০ আগস্ট ২০১৫

সব দোষ মাথা পেতে নিলেন ক্লার্ক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আকস্মিক বিদায়ে সব দোষ নিজে মাথা পেতে নিলেন মাইকেল ক্লার্ক। অসি সেনাপতি বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়া এমন একটি দল, যেখানে আপনাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে, কিন্তু আমি সেটি পারিনি।’ ক্লার্ককে ব্যক্তিগতভাবে যারা চেনেন তারা জানেন, হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়ার মানুষ তিনি নন। সফরসঙ্গী স্ত্রী কাইলির সঙ্গে আলোচনা করেই অবসরের চূড়ান্ত ঘোষণাটা দিয়েছেন। দেশটির সংবাদ মাধ্যমে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে আসন্ন বাংলাদেশ সফর দিয়েই নতুন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ-যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট। পাশাপাশি এক ম্যাচ হাতে রেখে ঐতিহ্যের এ্যাশেজ খোয়ানোর কারণ অনুসন্ধান করছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) নীতি নির্ধারকরা। ট্রেন্ট ব্রিজের চতুর্থ টেস্টে ইনিংস ও ৭৮ রানের বিশাল হারের মধ্য দিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ৩-১এ এ্যাশেজ সিরিজ খোয়ায় সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। হুট করে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন অধিনায়ক। সতীর্থদের ওপর দায় না চাপিয়ে ব্যর্থতা নিজ কাঁধে নিয়ে সরে দাঁড়ানো ক্লার্ক বলেন, ‘আসলে গত বারো মাস ধরে আমার পারফর্মেন্স খুব খারাপ। আমি নিজেই যেটা মানতে পারছি না। সব সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে খেলতে চেয়েছি। এই পারফর্মেন্স তাই মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে। সবাই বড় টুর্নামেন্ট ধরে নিজেকে প্রস্তুত করে, আমিও করেছি। ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টেস্টে এ্যাশেজ সিরিজ, কিন্তু পারিনি। ছেলেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্য এক ম্যাচ আগেই সিরিজ খোয়াতে হলো।’ দীর্ঘ এক যুগের ক্যারিয়ারের শেষের ঘোষণা দিতে গিয়ে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন ক্লার্ক। কয়েকবার হাত দিয়ে চোখ মুছতেও দেখা যায় তাকে। তৃতীয় টেস্টে হারের পরও দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন অবসরের কোন ইচ্ছাই নেই, সেই ক্লার্ক চতুর্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিন, দল যখন হারের প্রহর গুনছিল তখনই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়ে নেন। তৃতীয় দিন ভোর ৬টায় কোচ ড্যারেন লেহম্যানকে ডেকে খবরটা দেন। বলে দেন, স্ত্রী কাইলির সঙ্গে কথা বলে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ওভালে সিরিজের শেষ টেস্টই হবে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। কিছুক্ষণ পর প্রধান নির্বাচক রডনি মার্শ, গোটা অস্ট্রেলিয়া দল সবাই জেনে যায়। মজার বিষয়, আগাম খবরটা একজনই জানতেন, আগের দিন রাতে নটিংহামের পানশালায়, ১২ বছর আগে যিনি তার মাথায় টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দিয়েছিলেন সেই ওয়ার্নের সঙ্গে আলাপ করেছিলেন ক্লার্ক। দেশটির মিডিয়ার ইঙ্গিত প্রত্যাশিতভাবে স্টিভেন স্মিথের কাঁধেই উঠতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বের ভার। বিদায়ের অপেক্ষায় থাকা ক্লার্কও সেটিই চাইছেন। ‘আমার তো মনে হয় স্মিথ (স্টিভেন স্মিথ) তৈরি। কিন্তু আমি এ নিয়ে বলার কেউ নই। শুধু বলব, এই গ্রীষ্মে ও যে সুযোগ পেয়েছিল, সেখানে নিজেকে ভালমতোই প্রমাণ করেছে। স্মিথের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।’ ক্লার্কের ইনজুরিতে বছরের শুরুতে ঘরের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে নেতৃত্বের অভিষেকে দারুণ করেন স্মিথ। হাঁকান সেঞ্চুরি, দলও পায় সহজ জয়। অক্টোবরে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসবে অস্ট্রেলিয়া। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্মিথ-যুগে প্রবেশ করবে দেশটির টেস্ট ক্রিকেট। এ্যাশেজ ভরাডুবিতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ রিকি পন্টিং। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের মতে, এই দলটির অন্তত আট টেস্ট খেলার যোগ্যতা রাখেন না! তিনি বলেন, হারেরও একটা ধরন থাকে। এটা কিছুতে মেনে নেয়া যায় না। দলের অন্তত সাত-আটজনের টেস্ট খেলার যোগ্যতাই নেই! দায়িত্বশীলদের বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।’ দেশের মাটিতে শেষ পাঁচ টেস্ট সিরিজের চারটিতেই জেতে অস্ট্রেলিয়া। আছে বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধারের স্মৃতি। সেই তারাই বিদেশে চরমভাবে ব্যর্থ। ভারত সফর, আমিরাতে পাকিস্তান সিরিজের পর এবার ইংল্যান্ডে এ্যাশেজ ভরাডুবি। কারণ খুঁজছেন সিএ কর্তারাও। ‘এটা খুবই হতাশার। বিদেশে ক্রমাগত খারাপ করছি আমরা। বিশ্বের সেরা শক্তি হয়ে উঠতে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে। সামনে বাংলাদেশ সফর রয়েছে। এ্যাশেজ শেষে এ নিয়ে আলোচনায় বসব।’ বলেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড। সম্প্রতি ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের কাছে ওয়ানডেতে নাস্তানাবুদ হয় ভারত-পাকিস্তানের মতো পরাশক্তি। যা অসিদের জন্য বাড়তি মাথা ব্যথার কারণ। তবে আপাতত শেষ টেস্টে ব্যর্থতা কাটিয়ে সিরিজের ব্যবধান কমাতে চাইছেন সাদারল্যান্ড।
×