ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আলিয়ঁসে রুমীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘পৌরাণিক রহস্য’

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১১ আগস্ট ২০১৫

আলিয়ঁসে রুমীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘পৌরাণিক রহস্য’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানুষের সৃষ্টকর্মে তাঁর রুচি, প্রবণতা, স্বপ্ন, আকাক্সক্ষা ও অনুভূতি প্রকাশিত হয়। আর মানুষটি প্রভাবিত হন তাঁর পারিপার্শ্বিকতা দিয়ে। টিকে থাকার জন্যই মানুষ শেখে এবং অনুসরণ করে। চিত্রশিল্পী এ. আর. রুমী এসব কথাই বলেন তাঁর ছবিতে। ক্যানভাসে রং টেনে তিনি দর্শককে নিয়ে যান অতীতের দরবারে। পুরাণের আখ্যানের আলোকে খুঁজে নেন জীবনের দর্শন। ফিরিয়ে আনেন ঐতিহ্য। যেখানে চিত্রপটে সযতেœœ সংরক্ষিত হয় বিশ্বাস আর মূল্যবোধ। ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে চলছে এই শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। শিরোনাম পৌরাণিক রহস্য। একই সঙ্গে তুলি ও কলমে সমান পারঙ্গমতায় উদ্ভাসিত রুমীর চিত্রভাষা। সাবলীর রেখার সঙ্গে মিশে যায় রঙের স্বতঃস্ফূর্ততা। রং-তুলির আঁচড়ে পুরনো গল্পগুলোকে তিনি সাজিয়েছেন জ্যামিতিক ফর্মে। সেই সূত্রে তাঁর ছবির বিষয় ফুটে উঠে তো ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ কিংবা বর্গক্ষেত্রের আদলে। রুমীর ছবিতে আছে শীতল পাটি, শোলার পাখি, নকশি কাঁথা, মুখোশ, মাটির কলস ইত্যাদি। তবে রঙের মেলবন্ধন তাঁর নিজস্ব। সেগুলো আলাদা ও স্বতন্ত্র। ১৯৭৯ সালে নাটোরে জন্মগ্রহণ করেন এ. আর. রুমী। বিএফএ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এমএফএ সম্পন্ন করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট আল্টারনেটিভ (ইউডা) থেকে। বর্তমানে তিনি ইউডাতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। জাপানের টোকিওতে তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনী হয় ২০০৬ সালে। পৌরণিক রহস্য তাঁর তৃতীয় একক প্রদর্শনী। ৭ আগস্ট থেকে শুরু প্রদর্শনী চলবে ২২ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতি সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত। বঙ্গবন্ধু স্মারক তৃতীয় একক বক্তৃতা ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচী নিয়েছে বাংলা একাডেমি। এই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু বিষয়ক তৃতীয় একক বক্তৃতা। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু স্মারক একক বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অনুপম সেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, কবি আসাদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, লেখক শান্তনু কায়সার, সুভাষ সিংহ রায় প্রমুখ। স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক অনুপম সেন বলেন, হাজার বছরের বাঙালীর ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ বাস্তবায়ন করে আমাদের অপরিসীম জাতীয় ঋণে আবদ্ধ করেছেন। তিনি যেমন আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক তেমনি স্বাধীনতার পর জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকা- সম্পাদন করে সফল রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়েছিলেন। একটি আদর্শ সংবিধান প্রণয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রতিকূল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কাজ তিনি নীরবে কাজ করে গেছেন। আমলাতন্ত্রের মূলোৎপাটন করে সাধারণ মানুষের শোষণহীন গণতন্ত্র উপহার দিতে চেয়েছেন। বক্তা আরও বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা দেখি প্রায় সকল গণনায়কই প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তির ষড়যন্ত্রে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধেও সাম্প্রদায়িক-সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যে হত্যার ষড়যন্ত্র বিস্তার করেছিল তার ফলে শুধু তিনি প্রাণ হারাননি বরং বাংলাদেশের প্রগতিশীল অভিযাত্রাই অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়েছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্মরণের মধ্য দিয়ে আমরা মূলত আত্মজিজ্ঞাসায় উপনীত হই। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডি কেবল ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু বা একটি পরিবারের হত্যাকা- নয় বরং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশকে আমরা সেদিন থেকে কক্ষচ্যুত হতে দেখেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিভিন্ন সময় তাঁর ঘাতকদের বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে, তাঁর অনুসারী জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আদর্শের রাজনৈতিক আদর্শকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেরিতে হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারের মধ্য দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা সম্ভব। শামসুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপে তাঁর যে পরিচয় পাওয়া যায় তাতে আমরা দেখি তিনি রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত-মাও সেতুং প্রমুখের রচনা থেকে সমাজপ্রগতির পাঠ নিয়েছেন। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি তাঁর যে অপরিসীম ভালবাসা তা আমরা ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য করি। সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সোনার মানুষ তৈরিতে তিনি শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ভূমিকাকে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন। মঞ্চস্থ ঢাকা ড্রামার এখন দুঃসময় ॥ সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো ঢাকা ড্রামা প্রযোজিত নাটক ‘এখন দুঃসময়’। আবদুল্লাহ-আল মামুন রচিত প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান সবুজ। সহজাতভাবেই সহজ ও সরল এদেশের গ্রাম বাংলার সাধারণ। কিন্তু যখনই কোন দূর্যোগ বা অভাব-অনটনের শিকার হয় তখনই অর্থাৎ কুচক্রী মহল, মজুদদার, বেপারী শ্রেণীর ব্যক্তিরা তাদের লালসা চরিতার্থ করতে তৎপর হয়। এমনই ঘটনাকে উপজীব্য করে নির্মিত নাটক এখন দুঃসময়। নাটকে বন্যাকে উপলক্ষ করে আবর্তিত হয়েছে কাহিনী। উঠে এসেছে গ্রামের সরল মানুষগুলো হাসি-কান্নার চিত্র। সমাজের বেপারী বা দুষ্টু লোকরা সমাজের জমি-জমা দখলসহ নারীদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলেও তা গ্রামের মানুষরা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করে। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রশিদুল হাছান লিটন, ওমর ফারুক খান, ম. আবু হারুন টিটো, পুতুল, আরিফ, তৌাহদ, বাদশা, সোহেল, ফরহাদ, ফেরদৌস মিলন, কমল সরকার, সোহাগ বাবু ও উর্মী। আরশীনগরের ‘কথা কবিতা গান’ ॥ আরশীনগর ফাউন্ডেশনের ত্রৈমাসিক আয়োজন ‘কথা কবিতা গান’। সোমবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এই আয়োজনকে ঘিরে বসেছিল নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের সমন্বয়ে দুই বাংলার কালজয়ী বাংলা গানের আসর। ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সচিব ফারহানা রেইনের পরিচালনায় এ আয়োজনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন খ্যাতিমান গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, কবি শাহীন রেজা। সভাপতিত্ব কবেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনরে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সচিব প্রবাসী কণ্ঠশিল্পী রাহুলের অডিও এ্যালবাম ‘তুমি বিনে’ সিডির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ সময় গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, নতুন প্রজন্মের মাঝে শুদ্ধ বাংলাগানের চর্চা বাড়াতে হবে। আমাদের হাজার বছরের গৌরবময় সংস্কৃতি নিয়ে আরশীনগর ফাউন্ডেশনের মতো অন্যান্য সংগঠনকেও সমানভাবে কাজ করে যেতে হবে। কারণ আমাদের সংস্কৃতিই আমাদের শক্তি। সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, আমাদের হাজার বছরের গৌরবময় ঐতিহ্য হচ্ছে বাংলা গান। সেই প্রাণের গানকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আরশীনগর ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিসীম। বিশ্বায়নের যুগে অপসংস্কৃতিরোধে প্রজন্মের মাঝে বাংলাগানের চর্চার কোন বিকল্প নেই। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন পথিক সবুজ, রেজা তাবাস্সুম প্রমা, প্রবাসী কণ্ঠশিল্পী রাহুল, সাবিনা লাকী, মহিদুল ইসলাম, শায়লা রহমান, কাজী মোহিনী ইসলাম, বজলুর রহমান, চন্দ্রশীলা ছন্দা, রওশন আক্তার শেপু ও খন্দকার মোকাররম আলী।
×